কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি: স্বাধীনতার ৪৩ বছর পরও কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরের অসহায় মুক্তিযোদ্ধা শামসুদ্দিন শামু স্বীকৃতি পায়নি। স্বাধীনতা সংগ্রামে অকুতোভয় মুক্তিযোদ্ধা জীবন যুদ্ধে পরাজিত হয়ে রোগে শোকে আক্রান্ত হয়ে এখন হাসপাতালে শয্যাশায়ী। পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন এই মুক্তিযোদ্ধা।

প্রতি বছর মহান স্বাধীনতা দিবসে অংশ নিলেও এবার তার দিন কাটছে হাসপাতালের বেডে শয্যাশায়ী হয়ে। গতকাল বুধবার কিশোরগঞ্জ জেলা ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সংরক্ষিত কেবিনে গিয়ে দেখা মিলে জেলার হোসেনপুর উপজেলার দ্বীপেশ্বর গ্রামের ছেলামত এর পুত্র মুক্তিযোদ্ধা শামসুদ্দিনের। বয়সের ভারে নুয়ে পড়লেও এখন স্মৃতি শক্তি লোপ পায়নি।

সাংবাদিক এসেছে জেনে নড়েচড়ে উঠলেন। বললেন জীবনের ফেলে আসা অতীতের কথা। স্মুতিচারণ করলেন স্বাধীনতা সংগ্রামে মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহনের। তিনি বলেন, ৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধে জয়ী হলেও এখন নিজের জীবনযুদ্ধে লড়ছেন।

বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ শুনে স্বাধীনতা সংগ্রামে ঝাপিয়ে পড়ি। মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী আফাজ উদ্দিন ভূঞা গ্রুপের সক্রিয় একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যুদ্ধে অংশ নিয়েছি। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা গেজেট তালিকায় অর্ন্তভূক্ত হতে পারেনি আজও। এ বিষয়ে মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হলে তা যাচাই বাছাইয়ের জন্য জেলা প্রশাসক বরাবরে প্রেরণ করা হয়। জেলা প্রশাসক তা হোসেনপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট প্রেরণ করেন। সেপ্রেক্ষিতে হোসেনপুর উপজেল্ যাচাই বাছাই কমিটি কর্তৃক মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে বিবেচিত হয়েছি। মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণের প্রমান স্বরুপ কর্ণেল আতাউল গণি ওসমানী কর্তৃক সনদ পেয়েছিলাম। বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের মুক্তিযোদ্ধা স্বনির্ভর প্রকল্প হতে অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে সুদমুক্ত ঋণও পেয়েছিলাম। গত ৫টি বছর যাবত অসুস্থতাজনিত কারণে ভোগছি। দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়ালেও কারও সেদিকে দৃষ্টি নেই।

তিনি আক্ষেপ করে বলেন, যৌবনে দেশ মাতৃকার টানে অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে স্বাধীন দেশের স্বপ্ন দেখেছিলাম, সে স্বপ্ন বাস্তবতায় রূপ নিলেও ফেরাতে পারেনি নিজের ভাগ্য। অভাব অনটন আর দারিদ্রতাকে সঙ্গী করে বর্তমানে চরম মানবেতর জীবন যাপন করছি । প্রতি বছর যথারীতি বিজয় দিবস ও স্বাধীনতা দিবস আসে, জনতা বিজয় স্তম্ভে ফুল দেয়, শ্রদ্ধাবনত চিত্তে মুক্তিযোদ্ধাদের কথা স্মরণ করে কৃতজ্ঞতা জানায়। মুখে মুখে মুক্তিযুদ্ধ আর মুক্তিযোদ্ধার বীরত্বের কথা বলে আত্মতৃপ্তির ঢেঁকুর তুলে। জীর্ণ শরীর নিয়ে মৃত্যুর প্রহর গুণছি। মৃত্যুর পরে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় হয়ত লাশ দাফন হবে। বিউগলে করুণ সুর বাঁজাবে, মুক্তিযুদ্ধের বীরত্বগাথা উচ্চারিত হবে। অথচ নিজের আবাসস্থলে নিরাপত্তায় জীবনের শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করতে পারবো কি না এর কোন নিশ্চয়তা নেই।

হোসেনপুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার মো.আ.রহিম জানান, শামসুদ্দিন শামু একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা। তার নামটি মুক্তিযোদ্ধা গেজেটে এখনও অন্তর্ভূক্ত হয়নি। তবে আগামী ১৮ এপ্রিল এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। হোসেনপুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার আবাদুস সালাম জানান, শামসুদ্দিন শামুর নাম মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় অন্তর্ভক্তি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
অসহায়-অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধা শামসুদ্দিন শামু ও তার পরিবারবর্গ সরকারের কাছে এ ব্যাপারে সুদৃষ্টি কামনা করেছেন।

(পিকেএস/এসসি/মার্চ২৬,২০১৫)