নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি :  নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার পাগলার আলীগঞ্জের খেয়াঘাট সংলগ্ন বুড়িগঙ্গা নদীতে বৃহস্পতিবার দুপুর ১টায় ট্রলার ডুবির ঘটনায় ৮ জনের মৃত্যু ঘটেছে।

নিহতদের বাড়ি ঢাকার মিরপুর ও লালবাগ এলাকাতে। মতলবে সোলায়মান শাহ ওরফে লেংটার মেলা শেষে ট্রলারে করে এসব লোকজন ঢাকার সদরঘাটে ফিরছিলেন।

নিহত প্রত্যেক পরিবারকে ২০ হাজার টাকা করে অনুদান দেয়া হয়েছে। সন্ধ্যা পৌনে ৭টা পর্যন্ত নিহতরা হলেন- ঢাকার লালবাগের ১৭৪ সৈয়দনগরের মৃত লাটমিয়ার ছেলে মো. ছমির হোসেন (৪৫) এবং একই এলাকার আব্দুল হক ওরফে ওহাব মাতবরের ছেলে রুবেল (১৮), হাফিজউদ্দিন মিয়ার ছেলে রুবেল (৩০), মো. নিজামের ছেলে ছেলে সাগর (১০), মিরপুর সিনেমা হল এলাকার এলাকার নুরউদ্দিনের ছেলে জাকির হোসেন (৩০), লালবাগ এলাকার কাজল মিয়া (২৮), আইউব আলীর স্ত্রী করমজান বিবি (৬৫) ও রাজীব মিয়া হৃদয় (২২)। এছাড়া আরো একজন নারী নিখোঁজ রয়েছে বলে জানা গেলেও তারা সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যায় নি।

নিহতদের মধ্যে ৭ জনের লাশ ঘটনাস্থল থেকে ও ছমির হোসেনকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পথে মারা যান।

ট্রলারের যাত্রী মো. রিপন জানান, ২ দিন আগে ট্রলারটি ভাড়া করে মতলবে সোলায়মান লেংটার মেলার মাজারে যান তারা। ওই মাজার থেকে যাত্রী নিয়ে বৃহস্পতিবার সকাল ৮টার দিকে ঢাকার সদরঘাটের উদ্দেশে রওনা দেয় ট্রলারটি। নারায়ণগঞ্জের পাগলার আলীগঞ্জ এলাকায় বিপরীত দিক থেকে আসা একটি বালুবাহী ট্রলার আমাদের ট্রলারটিকে ধাক্কা দিলে এটি ডুবে যায়।

ট্রলারের অপর যাত্রী আবু সিদ্দিক জানান, নদীতে বালুবাহী বাল্কহেড ‘সাথীবুল বাহার-২’ এর ধাক্কায় ট্রলারটি ডুবে যায়। আশপাশের লোকজনের সহায়তায় অনেকেই সাঁতরে তীরে উঠতে সক্ষম হয়।

নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক আনিছুর রহমান মিঞা জানান, ঘটনাস্থলটি কেরানীগঞ্জ হলেও ট্রলারডুবির ঘটনার খবর পেয়ে ফতুল্লা থানা পুলিশ ও কোস্টগার্ড উদ্ধার অভিযান শুরু করে। ঘটনাস্থল ঢাকা জেলার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ হওয়ায় এবং তাদের সবার বাড়ি ঢাকাতে হওয়ায় মরদেহ ময়নাতদন্ত ছাড়া নিতে চাইলে স্বজনদের ঢাকা জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করতে হবে।

এছাড়া নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা গাউছুল আজম, শ্রমিক লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির শ্রম বিষয়ক সম্পাদক কাউসার আহমেদ পলাশসহ স্থানীয়রা উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে দুর্ঘটনার পর নদীর তীরে শতশত নারী পুরুষ আহাজারি শুরু করে। ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরী দল উদ্ধার কার্যক্রম শুরু করে। দুর্ঘটনার প্রায় ২ঘণ্টা পর বিকেল ৩টায় ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরী দল ডুবে যাওয়া ট্রলারটি উদ্ধার করে। এছাড়া নদীর বিভিন্ন স্থানে তল্লাশী করে একে একে লাশগুলো উদ্ধার করতে থাকে।

বিকালে ঢাকা জেলা প্রশাসক তোফাজ্জল হোসেন মিয়াসহ কেরানীগঞ্জ প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তারা ছুটে আসেন। নিহত পরিবারকে দাফনের জন্য ২০হাজার টাকা করে অনুদান প্রদান করা হয়। ওই সময়ে শ্রমিক লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির শ্রম বিষয়ক সম্পাদক কাউসার আহমেদ পলাশ সহ স্থানীয়রা উপস্থিত ছিলেন।

নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্সের সহকারী পরিচালক এবিএম মমতাজউদ্দিন জানান, ঘটনাস্থল থেকে ৭ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পথে ১ জন মারা গেছেন। এখনো ৩/৪ জন নিখোঁজ রয়েছেন বলে স্বজনদের দাবি। ফায়ার সার্ভিসের ৭ সদস্যের একটি ডুবুরী দল কাজ করছে।

(ওএস/এটিআর/এপ্রিল ০২, ২০১৫)