তাড়াশ (সিরাজগঞ্জ) :  মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের সদ্য সমাপ্ত এসএসসি দাখিল পরীক্ষার আরবি ফিকহ বিষয়ের খাতা প্রকাশ্যে মুল্যায়ন করা নিয়ে তাড়াশে হৈচৈ পরেছে। গুরুত্বপুর্ণ ওই পরীক্ষার খাতা পরীক্ষক নিজে না দেখে অন্যান্য শিক্ষকদের দিয়ে গণহারে মুল্যায়নের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

সরেজমিনে পরিদর্শনে জানাযায়, তাড়াশ উপজেলার তালম ইউনিয়নের গোন্তা আলীম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মোঃ আব্দুল মান্নান মাদ্রাসা বোর্ডের পরীক্ষক হিসেবে বেশ কয়েক বছর ধরে এসএসসি দাখিল পরীক্ষার আরবি ফিকহ বিষয়ের খাতা মুল্যায়ন করে আসছেন। প্রতি বছরের ন্যায় এবার তিনি মাদ্রাসা বোর্ড থেকে আরবি ফিকহ বিষয়ে ৩০০শত খাতা মুল্যায়নের জন্য উত্তোলন করেন। শিক্ষা বোর্ডের নিয়ম অনুসারে একজন পরীক্ষক ২৫০টি’র বেশী খাতা পাওয়ার কথা নয়। কিন্তু তিনি বোর্ডের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তার সাথে যোগসাজসে এবার খাতা উত্তোলন করেছেন সাড়ে ৫শ’। গত বৃহস্পতিবার গোন্তা আলীম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আব্দুল মান্নান মাদ্রাসা ছুটি ঘোষনা করে নিজ ক্ষমতা বলে মাদ্রাসার বারান্দায় পাটি বিছিয়ে মাদ্রাসা অবৈতনিক ছুটি ঘোষনা করে অফিস সহকারী থেকে শুরু করে জেনারেল শিক্ষকসহ অন্যান্য শিক্ষকদের দিয়ে এসএসসি দাখিল পরীক্ষার আরবি ফিকহ বিষয়ের খাতা মুল্যায়ন শুরু করেন। স্থানীয় লোকজন জানতে পেরে বিষয়টি নিয়ে কানাঘোষা শুরু করলে এক পর্যায়ে সাংবাদিকরা বিষয়টি জানতে পেরে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখতে পান যে মাদ্রাসার বারান্দায় বসে ১০ থেকে ১২জন শিক্ষক খাতা মুল্যায়ন করছেন। গুরুত্বপুর্ন ওই পরীক্ষার খাতা অতিব গোপনীয় ভাবে দেখার নিয়ম থাকলেও এবং সংশ্লিষ্ঠ বিষয়ের শিক্ষক দিয়ে খাতা মুল্যায়ন করার নিয়ম থাকলেও অফিস সহকারী এবং জেনারেল শিক্ষক দিয়ে খাতা দেখানোর বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে চাইলে পরীক্ষক আব্দুল মান্নান কোন প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে তরিঘরি করে খাতাপত্র গুছিয়ে ফেলেন। তিনি এক পর্যায়ে স্বীকার করে বলেন অল্প সময়ের জন্য অন্যান্য শিক্ষক দিয়ে বৃত্ত ভরাট করছি। যে সকল শিক্ষক বারান্দায় বসে খাতা মুল্যায়ন করছেন তাদের মধ্যে কয়েকজন নাম প্রকাশ না করা শর্তে জানান, গোন্তা আলীম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আব্দুল মান্নান স্যার আমাদের ডাক দিয়ে খাতা দেখার জন্য একত্রিত করেছেন। তাছাড়া তিনি প্রতি বছরই এভাবে এসএসসি পরীক্ষার খাতা নিজে না মুল্যায়ন করে অফিস সহকারীসহ অন্যান্য বিষয়ের শিক্ষক দিয়ে করান। তিনি আর জানান, শেরপুরের তার এক বন্ধুর কিছু খাতা তিনি মুল্যায়ন করার জন্য নিয়ে এসেছেন। অন্য একটি সুত্র থেকে জানাগেছে, মাদ্রাসা বোর্ডের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা কর্মচারীর সাথে যোগসাজসে প্রতি বছরের ন্যায় এবারও সাড়ে ৫শ’ খাতা বোর্ড থেকে মুল্যায়ন করার জন্য নিয়ে আসে। খাতা দেখা শেষে দুপুরে তিনি ওই সকল শিক্ষকদের জন্য ভুরি ভোজের আয়োজনও করেন। খাতা প্রাপ্ত গোন্তা আলীম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আব্দুল মান্নান বলেন, খাতা দেখা শেষ হয়ে গেছে। বৃত্ত পুরন করার জন্য শিক্ষকদের নিয়ে বসে ছিলাম। তিনি আরও বলেন, মাদ্রাসার ছাত্রছাত্রীদের পরীক্ষার খাতা দেখা হচ্ছে, বোর্ডের খাতা নয়। আবার তিনি বলেন, এ নিয়ে কোন সমস্যা হবার কথা নয়। ২জন সাংবাদিক এসে ছিল। তাদের বসতে বললেও তারা না বসে ছবি তুলেই চলে যান। এব্যাপারে তাড়াশ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার এস এম গোলাম রেজা বলেন, মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের খাতা দেখতে কোন অনিয়ম হলে বোর্ড কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে এবং তদন্তে ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে বোর্ডের নির্দেশ অনুসারে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

(এমএম/এসসি/এপ্রিল০৪,২০১৫)