লোহাগড়া(নড়াইল) প্রতিনিধি : নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীতকরণে নতুন ভবন নির্মাণ হলেও অন্যান্য বরাদ্দ না থাকায় ৫০ শয্যার কার্যত্রম চালু হয়নি। ফলে প্রায় তিন লাখ জনসংখ্যা অধ্যুষিত এ উপজেলার মানুষ প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, এ হাসপাতালকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করতে সাত কোটি ১৭ লাখ ৩৪১ টাকা ব্যয়ে নতুন তিনতলা ভবন ও কোয়ার্টার নির্মাণ করা হয়েছে। গত বছর নভেম্বর মাসে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে এ ভবন হস্তান্তর করা হয়। প্রায় ১০ বছর আগে এ ভবন নির্মাণ শুরু হয়েছিল। মাঝে প্রায় আট বছর নির্মাণ কাজ বন্ধ ছিল।
এ নতুন ভবনে নিচতলায় রয়েছে চিকিৎসকদের জন্য ৮টি কক্ষ এবং ইপিআই ও ফার্মেসি কক্ষ। দ্বিতীয় তলায় তিনটি অপারেশন থিয়েটার, একটি পোস্ট অপারেটিভ কক্ষ ও দুটি নরমাল ডেলিভারি কক্ষ। তিনতলায় রয়েছে রোগীদের জন্য ১৪ শয্যার একটি ওয়ার্ড, পাঁচটি কেবিন, একটি মিলনায়তন ও একটি মেডিসিন স্টোর। এর সঙ্গে তৈরি হয়েছে একটি চিকিৎসক কোয়ার্টার ভবন, একটি তৃতীয় শ্রেণির ও একটি চতুর্থ শ্রেণীর কোয়ার্টার ভবন।
লোহাগড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা শাহ ফজল এলাহী জানান, ৩১ শয্যা হাসপাতালে চিকিৎসকের মাত্র ৯ টি পদ। ৫০ শয্যা বাস্তবায়ন হলে চিকিৎসকের পদ হবে ২১টি। এছাড়া অপারেশন থিয়েটারের উপকরণ এবং ১৯টি শয্যার প্রয়োজনীয় আসবাবসহ অন্যান্য উপকরণাদি এখানো পাওয়া যায়নি। ৫০ শয্যার জন্য নতুন ভবন হলেও প্রশাসনিক অনুমোদন না হওয়ায় ১২ জন চিকিৎসকের পদসহ অন্যান্য উপকরণের অভাবে ৫০ শয্যার কার্যক্রম চালু করা সম্ভব হচ্ছে না।
চিকিৎসকরা জানান, বর্তমানে হাসপাতালে ৩১ জনের চেয়ে অনেক বেশি রোগী ভর্তি থাকেন। তাঁরা নিচেয় বিছানা করে থাকেন। ৩১ শয্যার জন্য যে খাবার বরাদ্দ তা দিয়ে ওই অতিরিক্ত রোগীদেরও খাওয়ানো হয়। এছাড়া বহির্বিভাগে আগের চেয়ে রোগীর চাপ অনেক বেড়েছে। বহির্বিভাগেই প্রতিদিন প্রায় পাঁচশ রোগী হয়। চিকিৎসকের ৯ টি পদ থাকলেও বর্তমানে কর্মরত আছেন ৪ জন। এ কয়েকজন চিকিৎসক দিয়ে আন্তবিভাগ, বহির্বিভাগ ও জরুরীবিভাগ সামাল দেওয়া খুবই কষ্টসাধ্য।
মঙ্গলবার সকাল নয়টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত হাসপাতালে অবস্থান করে দেখা গেছে, চিকিৎসাসেবা নিতে এসে রোগীরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করছেন। গরমে তাঁদের নাভিশ্বাস অবস্থা। অপেক্ষা করতে গিয়ে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন।
সকাল নয়টায় এসেছেন লক্ষ্মীপাশার গোপীনাথপুরের চায়না বেগম (৪০)। তাঁর সঙ্গে এ সংবাদদাতার কথা হয় সাড়ে ১২টায়। তিনি বলেন, ‘প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা আগে টিকিট কেটে বসে আছি। ভিড়ের কারণে এখনো অপক্ষো করতে হচ্ছে।’ মল্লিকপুর গ্রামের সাহেরা বেগম তাঁর অসুস্থ ছেলে সাকিবকে (৯) নিয়ে বসে আছেন। অসুস্থু সাকিবকে মেঝেতে শুইয়ে দিয়েছেন। তিনি সাড়ে ১২টায় জানান, সকাল ১০টা থেকে এখানে বসে আছেন। ডাক্তার দেখাতে সিরিয়াল পাননি। এভাবে দিঘলিয়ার রহিমা বেগম (৬৭), পারমল্লিকপুরের সাবানা (৩৫), ঈশানগাতীর সাজেদা (৩০), রামপুররার সাবিনা (২৮), ইতনার মুক্তা খানমসহ (১৯) দুপুর সাড়ে ১২টায় অন্তত ১৫০ জন রোগী চিকিৎসা নিতে বসে আছেন।
বহির্বিভাগের চিকিৎসক নাজমুন নাহার বলেন, ‘বহির্বিভাগে মাত্র দুজন চিকিৎসক রোগী দেখছি। প্রায় পাঁচ শ রোগী সামাল দিতে হচ্ছে। এক মুহূর্তের জন্য উঠতেও পারছি না। এ অবস্থায় নিজেরা অসুস্থ হলেও ছুটি নিতে পারি না। এভাবে ভালো চিকিৎসা দেওয়াও সম্ভব না। ৫০ শয্যা বাস্তবায়ন হলে আরো ১২ জন্য চিকিৎসকের পদ সৃষ্টি হতো। রোগীদের উন্নত চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হতো।
নড়াইলের সিভিল সার্জন সুব্রত কুমার সাহা বলেন, ‘স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে এবং মন্ত্রণালয়ে ৫০ শয্যা অনুমোদনের জন্য লিখিতভাবে জানানো হয়েছে।

(আরএম/পিবি/ এপ্রিল ২১,২০১৫)