আঞ্চলিক প্রতিনিধি, বরিশাল : মেঘমুক্ত সকাল কিংবা বিকেলের বিস্তীর্ণ মাঠে চোখ খুললেই দেখা মেলে এখন হলুদ রংয়ের সূর্যমুখী ফুলের সমারোহ। যা দেখলেই দু’চোখ জুড়িয়ে যায়। আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই পরিপক্ক ফসল কাটা শুরু হবে। সূর্যমুখীর শস্য দানা থেকে উৎপাদিত সুস্বাদু ও পুষ্টিকর তেলের চাহিদা আগের চেয়ে বাজারে অনেকগুন বেড়েছে।

এছাড়াও সূর্যমুখীর পরিত্যাক্ত গাছ জ্বালানি হিসেবেও ব্যবহার করা হয়। স্বল্প পুজিঁতে সূর্যমুখী চাষ লাভজনক হওয়ায় গতবছরের তুলনায় এবার বরিশাল জেলার তিনটি উপজেলায় এর আবাদ দ্বিগুন হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।

সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে আরও পৃষ্ঠপোষকতা পেলে বরিশালসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলে সূর্যমুখীর আবাদ আরো ব্যাপকভাবে সম্ভব বলে মনে করছেন কৃষকেরা। ধান ভিত্তিক শস্যবিন্যাসে বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কের পাশ্ববর্তী উজিরপুর উপজেলার জয়শ্রী এলাকার প্রায় দু’শ পঞ্চাশ শতক জমিতে এবার চাষ করা হয়েছে প্যাসিফিক হাইসান-৩৩ (হাইব্রিড) ও বারি সূর্যমুখী-২ নামের দু’জাতের সূর্যমুখী। সঠিক সময়, সঠিক নিয়মে পরিচর্যা করায় উভয় জাতের সূর্যমুখীর বাম্পার ফলন হয়েছে।

চাষী মোতালেব সরদার, আবু তালেব কাজী, আবুল কালাম মোল্লা, আলমগীর সরদার, পান্নু কাজী, জসিম সরদার ও রেক্সোনা বেগম বলেন, সিসা-ইরি প্রকল্প বাস্তবায়নে ইউএসএআইডি’র অর্থায়নে ও বিডিএস’র সহযোগীতায় এবারই তারা প্রথম ১শ ১০ দিনের মধ্যে ফলন পাওয়া সূর্যমুখীর চাষ করেছেন। ফলন দেখেও তারা বেজায় খুশী।

বিডিএস’র বরিশাল অফিসের ফিল্ড অফিসার সৌরভ হালদার জানান, সূর্যমুখী চাষের জন্য তারা বিনামূল্যে চাষীদের মাঝে বীজ সরবরাহ করেছেন। এছাড়াও বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা মাঠপর্যায়ে কৃষকদের সঠিক সময়ে নানাধরনের পরামর্শ দেয়ায় এবার সূর্যমুখীর ফলনও ভালো হয়েছে। তিনি আরো জানান, এবার উজিরপুর উপজেলার জয়শুরকাঠী, আটিপাড়া ও ভরসাকাঠী এলাকার দুই একর, গৌরনদী উপজেলায় এক একর ও বাবুগঞ্জ উপজেলায় প্রায় পাঁচ একর জমিতে প্যাসিফিক হাইসান-৩৩ (হাইব্রিড) ও বারি সূর্যমুখী-২ নামের দু’জাতের সূর্যমুখীর চাষ হয়েছে। যা গতবারের তুলনায় দ্বিগুন।

সূত্রমতে, উঁচু জমি ও বেলে দোআঁশ মাটিতে সূর্যমুখীর চাষ ভাল হয়। স্থানীয় বাজারে ১ মণ (৪০ কেজি) সূর্যমুখী শস্য দানা বিক্রি হচ্ছে এক থেকে দেড় হাজার টাকায়। আর তেল বিক্রি হয় ১৫০ থেকে দু’শ টাকা কেজি দরে। ১ মণ সূর্যমুখী শস্য দানা থেকে ১৮ থেকে ২০ কেজি তেল হয়।

গৌরনদী উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা মো. সিরাজুল ইসলাম জানান, যেসব জমিতে আলু, খেসারি বা আমন চাষ হতো সেসব জমিতে সূর্যমুখী চাষ করে কৃষকরা বেশ লাভবান হচ্ছেন। তিনি আরো বলেন, ভবিষ্যতে সরকারি বা বেসরকারি উদ্যোগে সূর্যমুখী চাষে কৃষকদের আরো আগ্রহ বৃদ্ধি করাসহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধা দেয়া হলে এ চাষের ব্যাপক প্রসারতা ঘটবে। তখন দেশের ভোজ্য তেলের চাহিদা পূরণ করে অর্থনৈতিক উন্নয়নেও সূর্যমুখী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলেও তিনি উলে¬খ করেন।

(টিবি/এএস/এপ্রিল ২২, ২০১৫)