বরগুনা প্রতিনিধি : আমার ছেলেদের দিকে খেয়াল রাখবা, ওদের কোন কষ্ট দিবানা, আমার  জন্য দোয়া করবা। আমি হয়তো আর তোমাদের দেখতে পারবো না। মৃত্যুর কিছুক্ষণ পূর্বে স্ত্রী কমলা বেগমের সঙ্গে সৌদি প্রবাসী আ. জলিল খানের এসব কথা হয়েছিল।

সৌদি আরবে হুদি বিদ্রোহীদের মর্টার হামলায় নিহত দুই বাংলাদেশির মধ্যে একজনের বাড়ি বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলায়। উপজেলার রায়হানপুর ইউনিয়নের গোলবুনিয়া গ্রামের মৃত আ. আজিজের চার ছেলের মধ্যে ছোট ছেলে আ. জলিল। জীবিকার তাগিদে অর্থ উপার্জনের জন্য বাবার রেখে যাওয়া জমি বিক্রি করে প্রায় আট বছর আগে সৌদি আরবে পাড়ি জমান আব্দুল জলিল।

সৌদি আরবের প্রতিবেশী রাস্ট্র ইয়েমেনের সীমান্ত থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরে নাজরান নামক একটি শহরে চিনির কারখানায় কাজ করতেন তিনি। গত ৬ মে সৌদি আরবের নাজরান এলাকায় ইয়েমেনের শিয়া পন্থিদের ছোড়া মর্টার শেলে গুরুতর আহত হন তিনি। আহত হওয়ার ঘটনা গোপন রেখে স্ত্রীর সঙ্গে ফোনে কথা বলেন তিনি। তার কিছুক্ষণ পরেই মারা যান তিনি।

এদিকে, নিহত হওয়ার খবর শোনার সঙ্গে সঙ্গে স্বজনরা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি মারা যাওয়ায় এখন পরিবারটি অসহায় হয়ে পড়েছে। মৃত্যুর খবর গ্রামের বাড়িতে পৌঁছার পর থেকেই বিভিন্ন এলাকা থেকে আত্মীয় স্বজন আসছেন। গোটা গ্রামে শোকের মাতম চলছে। পরিবারের লোকজন এখন মৃতদেহের অপেক্ষা করছেন। কখন আসবে লাশবাহী কফিন।

মঙ্গলবার সকালে রায়হানপুর ইউনিয়নের গোলবুনিয়া গ্রামে আ. জলিলের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, স্ত্রী, পুত্র-পরিজন শোকে স্তব্দ হয়ে গেছে। বাবার কথা বলছে আর জ্ঞান হারিয়ে ফেলছেন জলিলের বড় ছেলে বজলুর রহমান খান।

অপরদিকে, নিহত আ. জলিলের ৭৫ বছরের বৃদ্ধা মা সাহেদা বেগম পথের দিকে চেয়ে আছেন কখন তার সন্তানটির মৃতদেহ আসবে।

তিনি বলেন, যে গেছে তাকে তো আর ফিরে পাওয়া যাবে না, নাড়ি ছেড়া ধনকে নিজের হাতে মাটি দেওয়ার অপেক্ষা আছি।

জলিলের বড় ছেলে বজলুর রহমান খান বলেন, এক মাস আগে আমার বিয়ে হয়েছে। রমজানে এসে বাবা তার পুত্রবধূকে বাড়িতে তুলে আনবে এমনই কথা ছিল। কিন্তু পুত্রবধূকে তুলে আনা তো দূরের কথা তিনি নিজেই এখন লাশ হয়ে বাড়ি ফিরছেন।

স্ত্রী কমলা বেগম বলেন, গুরুতর আহত অবস্থায় আমার কাছে ফোন দিয়ে বিদায় নিয়ে বলেছেন, আমার ছেলেদের দেখে রেখ, আর আমার কোন দাবি রেখ না।

রায়হানপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান রুপক বলেন, মারা যাওয়ার খবর শোনা মাত্র জলিলের বাড়িতে গিয়ে খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সার্বিক সহযোগিতা করা হচ্ছে।

সৌদি দূতাবাসে কর্মরত এমাদুল নামের এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে রুপক আরও বলেন, জেলা প্রশাসক, সৌদী আরবে বাংলাদেশি দূতাবাসের সঙ্গে কথা হয়েছে। মৃতদেহ পাঠানোর সব আইনি প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। এখন স্বরাস্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে অনুমতি পেলেই মৃতদেহ পাঠানো সম্ভব।

বরগুনা জেলা প্রশাসক মীর জহুরুল ইসলাম বলেন, আ. জলিলের মৃতদেহ দেশে ফিরিয়ে আনতে যত রকমের সহযোগিতা দরকার তা জেলা প্রশাসন থেকে করা হবে।

(এমএইচ/এএস/মে ১২, ২০১৫)