বরগুনা প্রতিনিধি : বরগুনা জেলার সমগ্র উপকূলজুড়ে অবাধে চলছে অবাধে রেনু পোনা শিকার। অবৈধভাবে এসব পোনা সংগ্রহ করে রাতের আঁধারে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে।

তালতলী উপজেলার বগীরহাট বাজারের পার্শ্ববর্তী চন্দনতলা গ্রামের অসংখ্য জেলে পরিবার পোনা শিকারে নিয়োজিত। তাদের জীবিকার প্রধান মাধ্যম এই পোনা শিকার। দাদন ব্যবসায়ীদের জালে আটকা পড়ে উপকূলীয় এসব জেলেরা অভাবের তাড়নায় বাধ্য হয়ে পোনা শিকার করছেন।

তালতলীর বগিরহাট বাজারে লোকচক্ষুর অন্তরালে পোনার ব্যবসা করছেন ওই এলাকার মতিউর রহমান (৪২) নামে এক মহাজন। বগীরহাট বাজারের স্লুইজ গেট সংলগ্ন একটি দোকানের নিচে রযেছে তার পোনা মাছ মজুদের গোপন আস্তানা। আস্তানাটি বাইরে থেকে দেখে বোঝার কোন উপায় নেই।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর পদক্ষেপ না থাকায় বরগুনার প্রধান দুটি উৎস বুড়িশ্বর এবং বিষখালী নদীতে গলদা এবং বাগদা চিংড়ির পোনা ধরার হিড়িক চলছে। এসব পোনা রাতের আঁধারে প্রতিদিন বরগুনার বেশ কয়েকটি রুট থেকে যানবাহনে করে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নিয়ে যাওয়া হয়।

এসব পোনার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে খুলনা, বাগেরহাট এবং সাতক্ষীরা অঞ্চলে। ওই অঞ্চলে বিপুলসংখ্যক মাছের ঘের থাকায় এসব পোনা বরগুনা থেকে সংগ্রহ করে চড়া মূল্যে বিক্রি করে থাকে মহাজনেরা।
চন্দনতলা গ্রামের জেলে আ. সালাম বলেন, অন্য কোনো আয়ের পথ না থাকায় বাপ-দাদার পেশা হিসেবে মাছ শিকার করেই তাদের জীবিকা নির্বাহ করতে হয়।

তিনি বলেন, অভাবের সংসারে মহাজনের কাছ থেকে দাদন নিয়ে মাছ শিকার করতে হচ্ছে। দাদনের টাকা পরিশোধ করতে শিকার করা মাছ ওই মহাজনের কাছে ২৫০০-৩০০০ টাকায় হাজার হিসিবে বিক্রি করতে হয়।’

বরগুনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রিয়াজ হোসেন পিপিএম জানান, ৪ এপ্রিল ২৮ ড্রাম রেনুপোনাসহ নয়জনকে আটক করে পুলিশ। ওই ড্রামে প্রায় ১০ লাখ রেণু ছিল বলে স্থানীয় জেলেরা জানায়। পরে উদ্ধার করা পোনাগুলো বরগুনার বিষখালী নদীতে অবমুক্ত করা হয়।

তালতলীর উপজেলা নির্বাহী অফিসার কাজী তোফায়েল হোসেন বলেন, পোনা শিকার বন্ধে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার জন্য নির্দেশনা রয়েছে এবং সে অনুযায়ী তিনি সব সময় প্রস্তুত রয়েছেন।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বঙ্কিম চন্দ্র বিশ্বাস আইনের দুর্বলতার কথা প্রকাশ করে বলেন, ‘মৎস্য আইনে বলা রয়েছে উপকূলীয় প্রাকৃতিক জলাশয় থেকে চিংড়ি বা যেকোনো মাছের পোনা শিকার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কিন্তু বহন বা ক্রয়-বিক্রয় সম্পর্কে স্পষ্ট কিছু উল্ল্যেখ না থাকায় তেমন কোনো ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না।

(এমএইচ/এএস/মে ২০, ২০১৫)