মাগুরা প্রতিনিধি : আমার স্বামীরে আপনারা ফিরিয়ে দেন। ওরা আমাদের লোভ দেখায়ে আমার স্বামীকে নিয়েছে। এক বছরেরও বেশী তার কোন খোঁজ নেই। জানিনা ও বেঁচে আছে কি না? ওদের ফাঁসি চাই। এ ভাবেই পানি পথে মালয়েশিয়াগামী স্বামী ইকরাম বিশ্বাসের  শোকে শোকাহত  স্ত্রী পারভীন বেগম(৪২) কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। শুধু পারভীন বেগমই নয় একমাত্র সন্তান হারিয়ে মা জরিনা খাতুন কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। ছেলের সন্ধ্যান না পেয়ে দ্বারে-দ্বারে কেঁদে ফিরছেন পিতা ফখর সর্দার।

শুধু পারভীন, জরিনা ও ফকরই নয় স্বজন হারা একাধিক ব্যক্তিরা তাদের স্বামী-সন্তানের অপেক্ষায় আজও পথ পানে চেয়ে আছে। ওরা আজও জানেনা ওদের স্বামী বা সন্তান জীবিত আছে কিনা। মাগুরার সদর উপজেলার ডেফুলিয়া ও আড়ুয়াকান্দি, শালিখা উপজেলার জুনারী, হাজরাহাটি, দিঘলগ্রাম , দিঘি গ্রাম থেকে মোট ব্যক্তি মালয়েশিয়া যাবার পথে নিখোঁজ হয়েছে। এদের মধ্যে ১১ জন শালিখা উপজেলার জুনারী, হাজরাহাটি, দিঘলগ্রাম ও দিঘি গ্রামের। অপর ৪ জন সদরের ডেফুলিয়া ও আড়–য়া কান্দি গ্রামের। গ্রাম গুলোতে এখন চলছে স্বজন হারানো শোক। দীর্ঘ এক বছর অতিবাহিত হলেও স্বামী –সন্তানের খোঁজ না পেলেও তবুও ওরা আশাবাদি তাদের স্বজনেরা ফিরে আসবে।
শালিখার জুনারী ও দিঘি থেকে নিখোঁজ ৯ জনের প্রত্যেকে স্থানীয় কয়েকজন দালালের মাধ্যমে ২ থেকে আড়াই লাখ টাকা দিয়ে দেড় বছর আগে নদী পথে মালয়েশিয়া যাত্রা করে। তারপর তাদের আর কোন খোঁজ মেলে নি। নিখোঁজ এ ৭ জন হচ্ছে জুনারীর ফখর আলীর ছেলে টিটুল সরদার(১৮), ভাতিজা শরাফত হোসেন (২৫),শ্যালক ইসলাম আলী, শালিখার হাজরাহাটি গ্রামের শুকুর আলী, দিঘি গ্রামের ইকরাম হোসেন (৪৮), আল আমীন (১৮), দিঘল গ্রামের নান্নু মিয়া (৩৫)। সদর উপজেলার ডেফুলিয়া গ্রামের ৩ জন হচ্ছে ইমরান শেখ(২০), শাহীন হোসেন (২০) ও ইমরান মোল্যা (২৩) ও আড়ুয়াকান্দি গ্রামের মিটুল হোসেন।
জুনারী গ্রামের নিখোঁজ শরাফতের স্ত্রী ফিরোজা বেগম জানান, কাঠমিস্ত্রি হিসাবে উপার্জনের আশায় তার স্বামী দেড় বছর আগে জুনারী গ্রামের দালাল দোলন, নাজমুল ও দিঘী গ্রামের আজিজুরকে দেড় লাখ টাকা দিয়ে মালয়েশিয়া যাবার উদ্দেশ্য বাড়ি ছাড়ে। তারপর থেকে তার কোন খোঁজ মেলেনি। এখন ৩ সন্তান নিয়ে তিনি পথে পথে ঘুরছেন।
আল আমীনের মা জরিনা বেগম কাঁদতে কাঁদতে জানান, দিঘি গ্রামের দালাল আজিজুর অনেকটা ফুসলিয়েই তার ছেলেকে মালয়েশিয়া নিয়ে যাবার কথা বলে নৌপথে নিয়ে নিখোঁজ করে দিয়েছে। কিন্তু একমাত্র ছেলের কোন খোঁজ পান নি।
ইকরাম হোসেনের স্ত্রী পারভিনা বেগম জানান, তার স্বামী ইকরাম হোনেকে শ্রমিকের কাজ দেবার কথা বলে আজিজুল নামে এক দালাল ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা নিয়েছে। পরে মালয়েশিয়া পৌছে দেবার কথা বলে ১৬ মাস আগে বাড়ি থেকে নিয়ে গেছে। তারপর থেকে তিনি নিখোঁজ। তারা একাধিকবার আজিজুরের সাথে যোগাযোগ করেছেন। সে প্রথমে নানা কথা বলে ঘুরিয়েছে। বর্তমানে তার ফোন বন্ধ ও সে পলাতক।
এদিকে মাগুরা সদরের ডেফুলিয়া গ্রামে নিখোঁজ ইমরান শেখ, ইমরান মোল্যা শাহিন হোসেনের কোন খোঁজ এখনো মেলেন নি। দেড় মাস আগে রাজ্জাক ও রানা নামে দুই দালালের মাধ্যমে মালয়েশিয়া যাবার পথে তারা নিখোঁজ হয়। পুলিশ এ ঘটনায় দালাল রানাকে আটক করেছে।
এ ব্যাপারে মাগুরা জেলা প্রশাসকের কার্যলয়ের প্রবাসী কল্যান শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী কমিশনার মোঃ নাকিব হাসান তরফদার জানান, প্রশাসনিকভাকে নিখোঁজদের বিষয়ে সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে। ভুক্তভোগীদের উচিত নিখোঁজ স্বজনদের বিষয়টি প্রশাসনকে জানানো। একই সাথে এটির সাথে জড়িত দালাল চক্রকে পুলিশে দেয়া।
(ডিসি/পিবি/মে ২৫,২০১৫)