হুমায়ূন কবির জীবন : মহান মুক্তিযুদ্ধে নজরুলের কবিতা প্রেরণা যুগিয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ছিলো গভীর সম্পর্ক। আর তাই স্বাধীনতা যুদ্ধের পর কবিকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে এনে জাতীয় কবির মর্যাদায় ভূষিত করা হয়েছে।

সাম্যের গান গাওয়া বিদ্রোহী এ কবি পথ দেখিয়েছেন, তাঁর দেখানো পথে বাংলাদেশের মানুষকে স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। কিন্তু একটি অশুভ শক্তি দেশের স্বাধীনতাকে নস্যাৎ করতে চায়। আন্দোলনের নামে জ্বালাও-পোড়া করে তারা মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে। কিন্তু কোনো অশুভ শক্তিকেই আর কোনো ষড়যন্ত্র করতে দেয়া হবে না। সকল অশুভ কর্মকাণ্ড কঠোর হস্তে দমন করা হবে।
কুমিল্লা টাউন হল মাঠে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১১৬তম জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে জাতীয়ভাবে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, কুমিল্লার সাথে জাতীয় কবির ছিলো গভীর সম্পর্ক। কুমিল্লা থেকে রচিত হয়েছে তাঁর কালজয়ী অনেক গান-কবিতা। আর এজন্যই জাতীয় কবির জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠানমালার জন্য কুমিল্লাকেই নির্বাচিত করেছে আমাদের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়। কারণ এই কুমিল্লার সাথে কবির অনেক স্মৃতি বিজড়িত। বাংলা সাহিত্যকে কবি নজরুল ইসলাম সমৃদ্ধশালী করেছেন। বাংলাকে শুধু একটি ভাষা হিসেবে নয়, বিশ্বের অনেক ভাষার সাথে একটা চমৎকার সম্মিলন ঘটিয়েছেন তিনি। তার কবিতা-গান-রচনা বাংলা ভাষাকে আরো সমৃদ্ধশালী করেছে। তার লেখা মহান মুক্তিযুদ্ধে প্রেরণা যুগিয়েছে। রনাঙ্গনে মুক্তিযোদ্ধারা একদিকে যেমন জাতির পিতার সেই বজ্রকন্ঠে অনুপ্রেরণা পেয়েছেন। অপরদিকে কবি নজরুলের গান আত্মত্যাগ করে একটি জাতিকে স্বাধীণ করার প্রেরণা যুগিয়েছে।

সংস্কৃতি মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন- পরিকল্পনামন্ত্রী আহম মুস্তফা কামাল এমপি, রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক এমপি, কুমিল্লা সদর আসনের সংসদ সদস্য হাজী আকম বাহাউদ্দিন বাহার ও নজরুল ইন্সটিটিউট ট্রাষ্টি বোর্ডের সভাপতি প্রফেসর এমিরিটাস রফিকুল ইসলাম।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব বেগম আক্তারী মমতাজ। নজরুল স্মারক বক্তৃতা দেবেন অধ্যাপক শান্তনু কায়সার। অনুষ্ঠানে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন কুমিল্লার জেলা প্রশাসক হাসানুজ্জামান কল্লোল।
অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি ও নজরুল ইনস্টিটিউট কেন্দ্রের সমন্বয়ে গঠিত সাংস্কৃতিক দলের পরিবেশনা উপভোগ করেন প্রধানমন্ত্রী ও আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ।

সরকার প্রধান হিসেবে একমাত্র আমিই আসানসোলের চুরুলিয়া গ্রামে কবির বাড়িতে গিয়েছি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরো বলেন, নজরুল ইসলাম ছিলেন অসাম্প্রদায়িক কবি। হামদ্ নাতসহ তিনি যেমন চমৎকার চমৎকার ইসলামিক সঙ্গীত রচনা করেছেন। তেমনি তার রচিত কীর্তন ও হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মহিমান্বিত করেছে।

২০ মিনিটের বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এ সরকারের আমলে কুমিল্লায় অনেক উন্নয়ন হয়েছে। আরো উন্নয়ন হবে। শুধু কুমিল্লা নয়, সারা দেশেই উন্নয়ন করা হচ্ছে এবং হবে। নজরুল যেমন সাম্যের গান গেয়েছেন। তেমনি তার চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে দেশের সব অঞ্চলেরই সমান উন্নয়ন করা হবে। বক্তব্যের শেষ পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী কুমিল্লাবাসীর দাবির প্রেক্ষিতে কুমিল্লাকে বিভাগ করার কথা বলেন। এজন্য তিনি কুমিল্লাবাসীকে সুকর্ম করারও পরামর্শ প্রদান করেন।

অনুষ্ঠান শুরুর পূর্বে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কুমিল্লার ১৯টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এসকল উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যয় হবে দুইশত পঞ্চান্ন কোটি বার লক্ষ চল্লিশ হাজার টাকা।

(এএস/মে ২৫, ২০১৫)