নিউজ ডেস্ক : ভালোবাসা প্রত্যেকটি মানুষের জীবনে একটি ধ্রুব সত্য। এর মাধ্যমে মানুষের জন্ম, বেঁচে থাকা এবং মৃত্যুই শুধু নয়, সত্যি হয় অমরত্ব লাভের আকাঙ্ক্ষাও।

প্রতিদিন চলার পথে আমরা কতকিছুকেই না ভালোবাসি। পরিবার, প্রিয়জন, বন্ধু, আত্মীয়, অনাত্মীয় থেকে শুরু করে পশু-পাখি, এমনকি নির্জীব পদার্থকেও ভালোবেসে ফেলি আমরা। তবে ভালোবাসা আমাদের জীবনকে অনেকটা আনন্দ আর পূর্ণতায় ভরিয়ে দিলেও মাঝে মাঝেই এর নেতিবাচক দিকটাও ফুটে ওঠে আমাদের সামনে।

ভালোবেসে প্রিয়জনদের কাছ থেকে সামান্য হলেও কষ্ট পাননি এমন খুব কম মানুষই আছেন। আর কাছের মানুষটির কাছ থেকে পাওয়া এই কষ্টগুলো থেকে নিজেদেরকে ফিরিয়ে আনতে অনেকটাই ব্যর্থ হই। আর ব্যর্থ হবার কারণ ভালোবাসার কিছু ছোট্ট ব্যাপার ভুলে যাওয়া।

১. ভালোবাসা একটি সিদ্ধান্ত

মানুষ প্রায় সময়ই আবেগের বশবর্তী হয়ে ভুলে যায় যে ভালোবাসা একটি সিদ্ধান্ত। তাও কেবল তার একান্ত নিজস্ব সিদ্ধান্ত। অন্য কারো চাপে পড়ে নেওয়া হয়নি যেটা। আর এই কথাটি যেমন তার নিজের ক্ষেত্রে সত্য, ঠিক তেমনি অন্যের ক্ষেত্রেও। কখনো চাপ প্রয়োগ করে ভালোবাসা পাওয়া যায়না। যদিও প্রায় সময়ই সবাই ভুলে যান অথবা ভুলে যেতে চান এই সত্য কথাটা।

২. ভালোবাসা মোহ নয়

প্রায় সময়ই মানুষ ভালোবাসা আর মোহ এই দুটোকে এক করে ফেলে। মোহ হচ্ছে হঠাৎ আসা কিছু আবেগ যেটা কিনা খানিক সময়েই শেষ হয়ে যায়। কিন্তু ভালোবাসা তা নয়। এটি দীর্ঘস্থায়ী। মোহগ্রস্থতা কেটে গেলেই মানুষ অন্য কোন মোহকে ধরে বাঁচতে শেখে। কিন্তু ভালোবাসা মানুষকে একাই বাঁচতে শেখায়। অন্য কারো বা কিছুর সাহায্যে নয়।

৩. ভালোবাসা সময়ের ব্যাপার

কথায় বলা হয়- "প্রথম দেখাতেই প্রেম"। কিন্তু ব্যাপারটা আসলে মোটেও তা নয়। প্রথম দেখাতে ক্ষণিক আকর্ষণের ফলে মানুষ একজন আরেকজনের দিকে ছুটে যায়। তবে সেটা ভালোবাসা নয়। খানিক বাদেই এই আকর্ষণ কেটে যেতে পারে। ভালোবাসা জিনিসটা সময়ের ব্যাপার। একে অন্যকে চেনা-জানা, চিন্তা-ভাবনা আর ভালো লাগা-মন্দ লাগাকে আদান-প্রদান করা, শ্রদ্ধা করা- এসবের মাধ্যমেই গড়ে ওঠে ভালোবাসা, যার ভিত্তি হিসেবে কাজ করে বিশ্বাস।

৪. ভালোবাসা ধৈর্যের ব্যাপার

ধৈর্য জিনিসটা জীবনের সব ক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ। ভালোবাসার ক্ষেত্রে তো বটেই। মানুষ অনেক সময় আশা করে সবকিছু খুব তাড়াতাড়ি হয়ে যাওয়ার। দেখা, কথা, ভালোবাসা, বিয়ে- সবটাতেই যেন একটা জলদি ভাব। কিন্তু না, ভালোবাসাকে সময় দিন। আস্থা রাখুন। যদি সবকিছু ঠিক থাকে ঠিক সময়েই এটি পরিণতি পাবে। আলাদা কোন জোরের দরকার নেই এখানে।

৫. ভালোবাসা দ্বিমুখী

ভালোবাসা কখনো এক পক্ষের হয়না। দুজন মানুষ যদি একে অন্যের জন্য অনুভব করে আর সেই অনুযায়ী কাজ করে তবেই সেটা সত্যিকারের ভালোবাসায় রূপ নেয়।

৬. ভালোবাসা বর্তমানে বিশ্বাসী

অনেকে অতীতের কথা ভেবে বর্তমান ভালোবাসার মানুষটির কাছ থেকে দূরে সরে থাকেন। অনেকে আবার ভবিষ্যতকে সুরক্ষিত করতে অনিচ্ছা সত্ত্বেও সরে থাকেন। সময় দিতে পারেন না। তবে সত্যি বলতে কি ভালোবাসায় বেশিরভাগ ব্যাপারটাই বর্তমান কেন্দ্রিক। আপনি কিছু বলছেন আর সেটা মনযোগ দিয়ে পাশের মানুষটি শুনছে, এটাই কি তার পক্ষ থেকে আপনার জন্যে সবচাইতে বড় উপহার নয়? আর তাই অতীত আর ভবিষ্যতকে গুরুত্ব দিন। তবে এর পাশাপাশি বর্তমানেও বাঁচুন।

৭. ভালোবাসার মানে ভালোবাসা

অনেকেই ভাবেন ভালোবাসা মানে খানিকটা ঝগড়া, খুনসুটি, কখনো গভীর আবেগ, নাটকীয়তা, খোঁটা মারা- এই সবের মিশেল। তবে সত্যিকার অর্থে ভালোবাসা মানে কেবল ভালোবাসাই। হয়তো মাঝে মাঝে বাকী সবের দরকার পড়ে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আপনি আপনার ভালোবাসার মানুষটার কাছ থেকে কিন্তু মানসিক আর শারিরীক উভয় দিক থেকে নিরাপত্তাই চাইবেন। আর তাই ভুলেও কোন কারণে ভালোবাসাকে আঘাত করা উচিত নয়। তা সেটা রাগ-ঝগড়া-খুনসুটি যে সময়ই হোকনা কেন।

৮. ভালোবাসার পূর্বশর্ত নিজেকে ভালোবাসা

অন্যকে ভালোবেসে আপনি কখনোই ভালো থাকবেন না যদিনা আপনি নিজেকে ভালোবাসেন। যদি এমন হয় যে অন্য কারো ওপর আপনি অনেকটা বেশি আশা নিয়ে বসে আছেন তাহলে আপনার কষ্ট পাওয়ার সম্ভাবনা সবচাইতে বেশি। আর তাই সবার আগে ভালোবাসুন নিজেকে। কারণ আপনাকে যদি কেউ ভালোবাসতে আর ভালো রাখতে পারে তবে সেটা আপনি নিজেই।

৯. ভালোবাসা স্বার্থপরতা নয়

ভালোবাসা মানে এই নয় যে অপর জন আপনাকে সবসময় ভালোবাসতেই থাকবে। এমনকি তার অন্যসব কাজ বাদ দিয়ে। এটা আর কিছুই নয়, কেবল একটা দূষিত সম্পর্কের তৈরি করে। আর তাই নিজেকে নিয়ে ভাবলেও খানিকটা ছাড় দিন। ভালোবাসুন পাশের মানুষটিকেও। তাকে শ্রদ্ধা করুন, প্রশংসা করুন, তার পাশে থাকুন নিজের নিজস্বতা নিয়েই।

১০. ভালোবাসা সম্পূর্ণ নয়

ভালোবাসা কখনোই সম্পূর্ণ হতে পারেনা। এটা এমন নয় যে ঠিক নির্দিষ্ট কোন সময়ে আপনার জীবনে সম্পূর্ণ হয়ে যাবে আর সব ক্ষেত্রেই আপনার মনমতো হবে। প্রত্যেকটা ভালোবাসাতেই কিছু অসম্পূর্ণতা থাকে। এটা মন থেকে মেনে নিন আর সঙ্গীর প্রতি বিশ্বস্ত থাকুন।

(ওএস/পিএস/মে ২৯, ২০১৫)