নওগাঁ প্রতিনিধি : আবাদ উদ্বৃত্ত উত্তরের নওগাঁ জেলায় বোরো ধান কাটা-মাড়াইয়ের ধুম পড়েছে। ধান কাটা, মাড়াই এবং গোলায় তোলার কাজে মহাব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন জেলার কৃষক-কিষানীরা। মাঠে মাঠে ক’দিন আগেও ছিল সবুজের সমাহার। এখন সেই সবুজে লেগেছে সোনালী রং। মাঠের দিকে তাকাতেই খুশির উজ্জল সোনালী হাসিতে ভরে ওঠছে কিষান-কিষানির মন। তবে মনে শঙ্কাও রয়েছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ নিয়ে। তারপরেও সবকিছুর মালিক সৃষ্টিকর্তার ওপর ভরসা করে মনে দৃঢ় আশা নিয়ে ধান ঘরে তোলার জন্য ব্যস্ত রয়েছেন তারা।

জেলায় এখন পুরোদমে ধান কাটা মাড়াই শুরু হয়েছে। একাজে মোটামুটি শিশু থেকে শুরু করে পরিবারের সকলেই সহযোগিতা করছেন ধান ঘরে তোলার জন্য। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবং রোগবালাই কম হওয়ায় এবার বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে এখানে। সদর উপজেলার প্রতাপদহ গ্রামের কৃষক শ্রীধন মন্ডল জানান, এবার তিনি ১৭ বিঘা জমিতে বোরো চাষ করেছেন। ইতোমধেই তিনি সমুদয় জমির ধান কেটে ফেলেছেন। ধান চাষে প্রথম থেকেই আবহাওয়া অনুকূলে থাকায়, ভেজালমুক্ত সার-কীটনাশক ব্যবহারে এবং তেল-বিদ্যুতের সমস্যা না থাকায় জমিতে অবাধে সেচ দিতে পারায় ও সঠিক পরিচর্যার জন্য ধানের আবাদ খুব ভাল ফলেছে। বিঘা প্রতি ২৪/২৫ মন হারে ফলন হচ্ছে। দড়িয়াপুর গ্রামের কৃষক এমদাদুল হক জানান, এবার তিনি প্রায় ৩০ বিঘা জমিতে বোরো ধান আবাদ করেছেন। চকচাপাই গ্রামের কৃষক রুনু চৌধূরী জানান, অনেক কষ্ট করে এবার ধানের আবাদ করেছি। যেভাবে জমিতে ধান ফলেছে শুধু ঘরে তুলতে পারলেই কষ্টটা লাঘব হবে বলে আশা করছি। তবে এবার অন্য বছরের তুলনায় ফলন অনেক বেশী। জেলায় প্রায় ৪০ ভাগ বোরো ধান কাটা সম্পন্ন হয়েছে। এর মধ্যে ব্রি আর-২৮ ও জিরাশাইল বেশী। বাকী আছে ৬০ ভাগ। তবে সেগুলো ব্রি আর-২৯, হাইব্রীড জাতের ধান। দামও অন্য বছরের তুলনায় ভাল পাচ্ছে কৃষক। বর্তমানে ৭শ’ টাকা থেকে ৭শ’ ৮০ টাকা মন দরে ধান বিক্রি হচ্ছে কৃষকের খলিয়ানেই। সকাল-বিকাল, সন্ধ্যা-রাত্রি সব সময়ই ফরিয়া ব্যবসায়ীরা ধান কেনার জন্য কৃষকের দ্বারে দ্বারে ঘুরছে। ধান মাড়াইয়ের পরই সেখান থেকে বস্তা বোঝাই করে কিনে নিচ্ছে তারা। ধান মাড়াইয়ের জন্য এবার বোঙ্গা ও ডিজেল চালিত মাড়াই কলের ব্যবহার বেশী করছে কৃষক। ধান কাটার পর স্বল্প সময়ে তাদের ধান মাড়াই সম্পন্ন হচ্ছে।
এ ব্যাপারে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক এসএম নুরুজ্জামান মণ্ডল জানান, জেলায় এবার মোট ২ লাখ ১ হাজার ৭১৮ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য ছিল। কিন্তু আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় জেলায় আবাদ হয়েছে ২ লাখ ১ হাজার ৭৬০ হেক্টর জমিতে। চাল আকারে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৮৯ হাজার ৭৮৪ মেট্রিক টন। কিন্তু ধান ভাল হওয়ায় সাড়ে ৮ লাখ মেট্রিক টন চাল পাওয়া যাবে বলে আশা করছেন তিনি। তিনি আরও জানান এই জেলায় প্রতি বছরে জেলার খাদ্য চাহিদা মিটিয়ে দেশের অন্যান্য জেলাসহ বিদেশে ১০ লাখ মেট্রিক টনেরও অধিক চাল সরবরাহ করা হয়ে থাকে। তবে এবার ফলন ভাল হওয়ায় কৃষকরা প্রাকৃতিক দুর্যোগ ছাড়া ঘরে ধান তুলতে পারলে সাড়ে ১০ লাখ মেট্রিক টন চাল অন্য জেলাসহ বিদেশে রপ্তানী করা সম্ভব হবে।
(বিএম/এএস/মে ১৭, ২০১৪)