বরিশাল প্রতিনিধি : বরিশালের আগৈলঝাড়ার বাগধা ইউনিয়নের ইউপি সদস্য গোলাম মাওলার বিরুদ্ধে ওসি’র নাম ভাঙ্গিয়ে ধর্ষণ, দখল, লুটপাট ও মিথ্যা মামলা দিয়ে অসহায় মানুষকে হয়রানির অভিযোগ পাওয়া গেছে।

আর ক্ষমতাসীন দলের লোক হওয়ায় কেউ তার বিরুদ্ধে টা-টু শব্দ পর্যন্ত করতে পারছে না। পুলিশের সাথে মাওলার সখ্যতা থাকায় পারছেন না পুলিশকেও জানাতে।

উপজেলার বাগধা গ্রামবাসী জানান, মাওলার বিরুদ্ধে ১০ গৃহবধূকে ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। তার ভয়ে কেউ থানায় মামলা করা তো দূরের কথা সম্ভ্রম হারিয়েও টু শব্দটি করতে পারে না। দু’একটি ঘটনায় নামকাওয়াস্তে প্রহসনের বিচার করা হয়েছে এলাকায়।

অসামাজিক কাজের জন্য এক পর্যায়ে মাওলার বড় ভাই সাবেক ইউপি সদস্য রশিদ মিয়ার নেতৃত্বে এক শালিশ বৈঠকে মাওলাকে সমাজচ্যুত করে গ্রামবাসী। সমাজচ্যুত করায় আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠে মাওলা। কয়েক বছর আগেও পয়সা নদীতে ট্রলারের হাল ধরা মাওলা ক্ষমতাসীন দলের দু’একজন নেতাকে ম্যানেজ করে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতির পদ দখলে নেয়। এরপর তাদের হাত ধরে নির্বাচিত হয় ইউপি সদস্য। সেই থেকেই থানার সাথে তার আর্থিক লেনদেনের সম্পর্ক গড়ে ওঠে।

পুলিশের উপস্থিতিতে ১৪ মে ওই এলাকার রহিম মিয়ার ছেলে সুমনের চাষ করা পুকুরের লক্ষাধিক টাকার মাছ প্রকাশ্য দিবালোকে লুট করে নিয়ে যায় মাওলা। লুটের মাছ উপঢৌকন হিসেবে পৌছে দেয়া হয় ওসিসহ স্থানীয় অনেক নেতার বাড়িতে।

ওসিকে ম্যানেজ করে তার অনুসারীদের নিয়ে স্থানীয় মজিবরের বাড়ি দখল করে সেখানে মাওলা তার নিজস্ব লোক আয়নালকে দখল করিয়ে দেয়। মাওলা গর্বের সাথে এলাকায় বলে বেড়াচ্ছে “আমি ওসি’র লোক, তাই কেউ আমার কিছু করতে পারবে না।”

আগৈলঝাড়ায় অবৈধভাবে নদী দখলের সংবাদ প্রকাশের পর ইউএনও দেবী চন্দ বাগধা বাজারে অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে কাজ বন্ধ রাখার নোটিশ প্রদান করে লাল নিশান টানিয়ে দেন। এর কিছুদিন পর অবৈধ নদী দখলদারদের কাছ থেকে মাওলা ৫ লাখ টাকা উঠিয়ে ওসিকে দিয়ে পুনরায় তাদের নির্মান কাজ শুরু করায়।

মাওলার হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না ক্ষমতাসীন দলের লোকজনও। ওই এলাকার রফিকুল ইসলাম জানান, তিনি বাগধা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নৈশ প্রহরীর পরীক্ষায় প্রথম হলেও মাওলা পরীক্ষায় দ্বিতীয় হওয়া সুমন মিয়ার কাছ থেকে আর্থিকবাবে লাভবান হয়ে তাকে চাকরিতে নিয়োগ করিয়ে দেন।

মাওলার রয়েছে একটি নিজস্ব বাহিনী, যার সদস্যরা হলো- মাওলার ভাতিজা হাবিব, মেয়ে জামাতা হারুন, শফিজ উদ্দিন বখতিয়ারের ছেলে লতিফ ও এসকেন্দার বক্তিয়ার, লতিফ বখতিয়ারের ছেলে আল আমীনসহ ২০০১ সালে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের নির্যাতনকারী এলাকার বখাটেরা।

গ্রামবাসীরা মাওলার বিরুদ্ধে সকল অভিযোগ স্বীকার করলেও নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানান।

মাওলা তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, এলাকার কয়েকজন লোক তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। আগৈলঝড়া থানার ওসি মনিরুল ইসলাম জানান, আমার নাম ভাঙ্গিয়ে যদি মাওলা কারও কাছ থেকে টাকা এনে থাকে তাদেরকে বলেন যেন তারা ওকে বেঁধে টাকা আদায় করে আর আইনের কাছে সোপর্দ করে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান ওসি।

(টিবি/পিএস/জুন ০১, ২০১৫)