হুমায়ুন কবির জীবন : এক বছর দুই বছর নয়, দীর্ঘ ৯০ বছর পর ইতিহাসের জীর্ণ রাজবাড়িটিতে বেঁজে উঠেছে সুরের অগ্নিবীণা। ঝিরিঝিরি বাতাস আর আষাঢ়ের ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টির পরশে কেমন সতেজ হয়ে উঠেছে বাড়িটি ঘিরে থাকা বিদীর্ণ গাছগাছালি।

মেঘলা পরিবেশে সুরের আবাহনে বিমুগ্ধ হাজারো দর্শক-শ্রোতা হিসেব মিলিয়ে নিল নব্বই বছর আগে সুরের মূর্ছনায় জমে ওঠতো যে রাজবাড়ির পরিবেশ, সেই বাড়িতেই সহসা ফিরে আসছে আগের পরিবেশে। যেখানে বসতো উপমহাদেশের বিখ্যাত সঙ্গীত ব্যক্তিত্ব শচীনদেব বর্মণের গানের আসর।

বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি ও কুমিল্লা জেলা প্রশাসনের যৌথ আয়োজনে মঙ্গলবার পড়ন্ত বিকেলে সঙ্গীত জগতের হিরন্ময় নৃপতি শচীনদেব বর্মনের পৈত্রিক নিবাস কুমিল্লা নগরীর চর্থার ইতিহাস বিজড়িত জীর্ণ রাজবাড়ির আঙ্গিনায় অনুষ্ঠিত হয়েছে শচীনদেব স্মরণে সাংস্কৃতিক পরিবেশনা।

দেশের প্রখ্যাত সঙ্গীতশিল্পী সুবীর নন্দী ও কিরণ চন্দ্র রায়ের কন্ঠেও বেঁজে উঠেছিল শচীনদেবের কালজয়ী গান। কুমিল্লা জেলা প্রশাসনের সার্বিক প্রচেষ্টায় চর্থার রাজবাড়ি ঘিরে পুরো আঙ্গিনা বর্ণিল করে সাজানো হয়। মঞ্চ, প্যান্ডেলসহ সবকিছু বর্ণময় হয়ে ওঠে কারুশিল্পীদের নিপুণ ছোঁয়ায়।

নব্বই বছরের মধ্যে যে বাড়ির আঙ্গিনায় আলোর ছটা পড়েনি, সে বাড়িই সাংস্কৃতিক পরিবেশনাকে ঘিরে আলোকিত হয়ে উঠেছিল। গোটা পরিবেশ জড়িয়ে ছিল সুরের আবাহনে। কেবল সাংস্কৃতিক পরিবেশনাই নয়, দর্শক-শ্রোতারা সুরের রাজা শচীনদেব বর্মনকে ঘিরে ত্রিপুরা রাজ পরিবারের ইতিহাসও শুনেছেন আলোচকদের বক্তৃতায়।

অনুষ্ঠান শুরুর পূর্বে গুড়িগুড়ি বৃষ্টির মাঝে বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষার্থীরা শচীনদেব বর্মনের বাড়ি দেখার জন্য আসে এবং আলোকসজ্জিত বাড়িটি শিশুসহ সকলেরই দৃষ্টি আকর্ষন করেছে।

মঙ্গলবার নগরীর দক্ষিণ চর্থা পড়ন্ত বিকেলে শচীন দেব বর্মণ স্মরণে আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে শুরু হয়। এরপরই একের পর এক উপমহাদেশের বিখ্যাত সঙ্গীত ব্যক্তিত্ব শচীনদেব বর্মণের গানে গানে শ্রোতাদের মনোরঞ্জন করেন জাতীয় শিল্পী ও স্থানীয় শিল্পীরা।

কুমিল্লার জেলা প্রশাসক মো: হাসানুজ্জামান কল্লোলের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন কুমিল্লা সদর আসনের সংসদ সদস্য হাজী আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের সহধর্মিনী ও বিশিষ্ট সমাজসেবিকা মেহেরুন্নেছা বাহার, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী এবং পুলিশ সুপার শাহ মো: আবিদ হোসেন।

আলোচক ছিলেন বিশিষ্ট সঙ্গীত বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক নুরুল আনোয়ার, বিশিষ্ট সঙ্গীতশিল্পী কিরণ চন্দ্র রায়, শিল্পকলা একাডেমীর পরিচালক সোহরাব উদ্দিন ও অতিরিক্ত পিপি এডভোকেট গোলাম ফারুক।

স্বাগত বক্তব্য রাখেন প্রবীণ রাজনীতিবিদ ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব এডভোকেট আহমেদ আলী।
সঙ্গীত পরিবেশন করেন ঢাকা থেকে আগত শিল্পী কিরণ চন্দ্র রায়, আবু বকর সিদ্দিক, মোটুসী ও স্থানীয় শিল্পীবৃন্দ।

(একেআর/পিএস/জুন ১৬, ২০১৫)