বাগেরহাট প্রতিনিধি : ‘...খাঁচার পর খাঁচায় আটকে পড়তে পড়তে
খাঁচার আঘাতে ভাঙতে ভাঙতে, টুকরো টুকরো হয়ে
আজ আমরা একা হয়ে গেছি।
প্রত্যেকে একা হয়ে গেছি
কী ভয়ংকর এই একাকিত্ব!
কী নির্মম এই বান্ধবহীনতা!
কী বেদনাময় এই বিশ্বাসহীনতা!’

আর তাই সময়ের আর্তি-

‘... থামাও মৃত্যুর এই অপচয়, অসহ্য প্রহর
স্বস্তির অস্থিতে জ্বলে মহামারী বিষণ্ণ অসুখ,
থামাও, থামাও এই জংধরা হৃদয়ের ক্ষত...’

মৃত্যুর এই অপচয় সত্যি নির্মম। থামানো না গেলেও সময়ের বড্ড আগে চলে গেলেন তিনি। হয়তো জানতেন কিম্বা অভিমানেই লিখে ছিলেন তিনি। কিন্তু কে জানতো মাত্র ৩৪ বছর বয়সেই পৃথিবীর মায়াজাল ছেড়ে যাবেন।

তারুণ্য ও সংগ্রামের দীপ্ত প্রতীক কবি রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ’র ২৪তম মৃত্যুবার্ষিকী রোববার (২১ জুন)। ১৯৯১ সালের এই দিনে ঢাকার পশ্চিম রাজাবাজারের বাসায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন বাংলা ভাষায় অসামান্য এই কবি।

কবি রুদ্র ছিলেন বাংলার আবহমান অস্তিত্ব সংগ্রামের দহন থেকে উঠে আসা ইতিহাসের মনোনীত এক কণ্ঠস্বর। মাটি ও মানুষের প্রতি দায়বদ্ধ এই কবির শিল্পমগ্ন উচ্চারণ তাকে দিয়েছে সত্তরের অন্যতম কবি-স্বীকৃতি।

অকাল প্রয়াত (১৯৫৬-১৯৯১) কবি তার কাব্যযাত্রায় যুগপৎ ধারণ করেছেন দ্রোহ ও প্রেম, স্বপ্ন ও সংগ্রামের শিল্পভাষ্য। একাত্তর পরবর্তী বাঙালির জাতীয় আকাক্সক্ষার পরাজিত বিক্ষোভগুলি তার কবিতাকে ধারণ করে মূর্ত হয়ে ওঠে। তাই তার কবিতা আর সবার কবিতার থেকে ব্যতিক্রমী। স্বদেশের বিপন্ন সময়ের বিরুদ্ধে তার কবিতায় প্রকাশিত হয়েছে প্রতিরোধের ভাষা।

‘জাতির পতাকা আজ খামচে ধরেছে সেই পুরোনো শকুন’ এই নির্মম সত্য অবলোকনের পাশাপাশি শতাধিক স্পর্ধায় তিনি উচ্চারণ করেছেন ‘ভুল মানুষের কাছে নতজানু নই’। যাবতীয় অসাম্য, শোষণ ও ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে অনমনীয় অবস্থান তাকে পরিণত করেছে ‘তারুণ্যের দীপ্ত প্রতীক’-এ।

একই সঙ্গে তার কাব্যের আরেক প্রান্তর জুড়ে রয়েছে স্বপ্ন, প্রেম ও সুন্দরের মগ্নতা। মাত্র ৩৪ বছরের স্বল্পায়ু জীবনে তিনি সাতটি কাব্যগ্রন্থ ছাড়াও গল্প, কাব্যনাট্য এবং ‘ভালো আছি ভালো থেকো’ সহ অর্ধ শতাধিক গান রচনা ও সুরারোপ করেছেন।

কবি রুদ্রের মৃত্যুবার্ষিকী স্মরণে তার গ্রামের বাড়ি বাগেরহাটের মংলা উপজেলার মিঠেখালিতে রুদ্র স্মৃতি সংসদ রবিবার (২১ জুন) বিকালে তার কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ, মিলাদ মাহফিল ও দোয়ার আয়োজন করেছে।

এছাড়া সন্ধ্যায় সংসদ কার্যালয়ে কবির স্মরণে আলোচনা ও রুদ্র সংগীত অনুষ্ঠিত হবে। রুদ্র স্মৃতি সংসদের সভাপতি ও কবির ছোট ভাই সুমেল সারাফাত এই অনুষ্ঠানের বিষয় নিশ্চিত করেছেন।

রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ ১৯৫৬ সালের ১৬ অক্টোবর (২৯ আশ্বিন) বরিশাল জেলার আমানতগঞ্জের রেডক্রস হাসপাতালে জন্ম গ্রহন। ১০ ভাই-বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার বড়।

তার শৈশবের অধিকাংশ সময় কেটেছে নানা বাড়ি মিঠেখালি গ্রামে (বর্তমান বাগেরহাট জেলার মংলা উপজেলার অন্তর্গত)। এখানকার পাঠশালাতেই শুরু হয় কবির পড়াশোনা।

(ওএস/পিবি/জুন ২১, ২০১৫)