বাগেরহাট প্রতিনিধি : সুন্দরবনে নদী ও খালে আবারও বিষ ঢেলে শুরু হয়েছে মাছ নিধন । জলাভূমিতে এভোবে কিটনাশক প্রয়োগের ফলে সুন্দরবনের জীব-বৈচিত্র্য ও মৎস্য সম্পদ চরম হুমকীর মুখে পড়ছে। এক শ্রেনীর অসাধু জেলে বনরক্ষীদের সাথে যোগসাজোসে পূর্ব-সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের বিভিন্ন নদী ও খালে বিষ প্রয়োগে মাছ শিকার করে বলে অভিযোগ উঠেছে।

সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশের ১হাজার ৮৭৪ বর্গ কিলোমিটার জলভাগের ৪৫০টি নদ-নদী ও খালে রয়েছে ২১০ প্রজাতির সাদা মাছ, ২৬ প্রজাতির চিংড়ি, ১৩ প্রজাতির কাঁকড়া, ৪২ প্রজাতির শামুক-ঝিনুক ও ১ প্রজাতির লবস্টার রয়েছে। প্রতি বছর সুন্দরবন থেকে জেলেরা ১৬ প্রকার জালসহ বরশি দিয়ে আহরন করে ১৫ হাজার মেট্রিক টন সাদা মাছ,৩ হজার ৬শ’ মেট্রিক টন চিংড়ি ও কাঁকড়া। এছাড়া প্রতি বছর আহরিত হয় সাড়ে ৭শ’ মেট্রিক টন রূপালী ইলিশ। সুন্দরবনের দুবলার শুটকী পল্লীসহ মৎস্য আহরনে প্রত্যক্ষ ভাবে জড়িত আছে ১ লাখ ৫০ হাজার জেলে-মৎস্যজীবী। ১টি চিংড়ি পোনা আহরণ কালে ৩১৫টি অন্যান্য মাছের পোনা মারা যাবার কারণে সুন্দরবন বিভাগ কারেন্ট জাল ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে। এই অবস্থায় সুন্দরবনের মৎস্য সম্পদ ধ্বংস করতে একটি চক্র কয়েক বছর ধরে উঠেপড়ে লেগেছে। এই চক্রটি সুন্দরবন বিভাগের কোন-কোন বন কর্মকর্তার যোগসাজসে অতিরিক্ত মুনাফার লোভে খালে বিষ দিয়ে এবারও মাছ নিধনশুরু করেছে।

সুন্দরবন থেকে ফিরে আসা স্থানীয় জেলেরা জানায়, বৃহস্পতিবারও শরণখোলা রেঞ্জ সংলগ্ন মরা ভোলা নদীর টাকার খালে বিভিন্ন প্রকারের কিটনাশক প্রয়োগ করে মাছ শিকার করেছে কয়েকজন জেলে। কিটনাশক প্রয়োগের ফলে খালের বিভিন্ন প্রজাতির সব মাছ মরে ভেসে ওঠে ।
কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী জেলে জানায়, অসাধু চক্র বৃহস্পতিবার সন্ধায় টাকার খালে বিষ দিয়ে সারারাত মাছ শিকার করেছে। ওই খাল থেকে ৭-৮ টি বস্তায় ভরে প্রায় ১০-১১ মন মাছ ঐ রাতেই শরণখোলা থেকে নছিমনে (টমটম) যোগে খুলনায় চালান করে দেয়া হয়েছে। অতিরিক্ত মুনাফার লোভে দীর্ঘদিন ধরে একটি চক্র সুন্দরবনে বিষ দিয়ে মাছ শিকার করে আসছে।

শরণখোলা বাজার মৎস্য আড়ৎদারা জানান, প্রতিবছরের মত এবছরেও একাধিক চক্র সুন্দরবনের বিভিন্ন নদী ও খালে বিষ দিয়ে মাছ ধরার জন্য সক্রিয় হয়ে উঠেছে। তবে সুন্দরবন বিভাগের টহল থাকা সত্বেও রেঞ্জ সংলগ্ন খালে রাতে এমন ঘটনা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে জেলে ও মৎস্য ব্যবসায়ীরা। সুন্দরবনের সুরক্ষার সাথে জড়িত আজিজুল ইসলাম বলেন,এসব অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্বে ব্যবস্থা গ্রহন না করা হলে সুন্দরবনের নদী ও খালের মাছের পাশাপাশি প্রানীকুল হুমকির মুখে পড়বে।

পূর্ব সুন্দরবনের (ডিএফও) সহিদুল ইসলাম জানান, বিষ প্রয়োগে মাছ ধরা কখনোই সহ্য করা হবে না। এই চক্রকে ঠেকাতে সুন্দরনবন বিভাগ সচেষ্ট রয়েছে। তবে কোন-কোন বন কর্মকর্তার যোগসাজসে এঘটনা ঘটে থাকলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও তিনি জানান।

(একে/পিবি/জুলাই ০৭,২০১৫)