মিলন কর্মকার রাজু,কলাপাড়া(পটুয়াখালী) থেকে :প্রকল্প আছে, আছে কর্মচারী ও স্বাস্থ্য সহকারী। কিন্তু প্রকল্পে নেই কোন ডাক্তার। এ কারনে নয় কর্মকর্তা-কর্মচারীকে কোন দায়িত্ব পালন ছাড়াই মাসে ৫২ হাজার টাকা বেতনভাতা দিতে হচ্ছে। প্রতিমাসে অর্ধলক্ষাধিক টাকা গচ্ছা গেলেও হাজার হাজার মা ও শিশু কোন চিকিৎসা সহায়তাই পাচ্ছেন না।

আকস্মিক কোন কারন ছাড়াই কলাপাড়ার মা ও শিশু স্বাস্থ্যসেবা (এমএনএইচ) প্রকল্পের দুই ডাক্তারকে বরখাস্ত করায় মুখ থুবড়ে পড়েছে এই প্রকল্পের সুফলভোগী হাজার হাজার মা ও শিশুর চিকিৎসা সেবা। ডাক্তার না থাকায় এখন তাঁদের ২’শ/৩’শ টাকা ভিজিট দিয়ে চিকিৎসা সেবা নিতে হচ্ছে। গর্ভবতী মায়েদের বিভিন্ন ক্লিনিকে গিয়ে ১০/২০ হাজার টাকার বিনিময়ে সিজাররিয়ান করতে হচ্ছে।

জানাযায়, ইউনিসেফের অর্থায়নে ২০১৩ সালের ২ ডিসেম্বর কলাপাড়া হাসপাতালে দুইজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও পাঁচ কর্মচারী নিয়োগ দিয়ে মা ও শিশু স্বাস্থ্য সেবা প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু হয়। পরবর্তীতে ২০১৫ সালের ১ জুন আরও চারজন কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগ দেয়া হয়। এ এমএনএইচ প্রকল্পের মাধ্যমে গর্ভবতী মাকে বিনামূল্যে চিকিৎসা, বিভিন্ন পরীক্ষা, ফ্রি সিজারিয়ানসহ প্রসব পরবর্তী আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হতো। শিশুদের বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দেয়া হতো।

গত আড়াই বছরে হাজার হাজার মা ও শিশু বিনামূল্যে সব ধরনের চিকিৎসা পেয়েছে। পরবর্তীতে এ প্রকল্পটি কুয়াকাটার তুলাতলী ২০ শয্যা হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে ডাক্তার গ্রামীন রোগীদের চিকিৎসা সেবা প্রদান করলেও আকস্মিক এই প্রকল্পের ডা. আমিনুল ইসলাম ও ডা. তাসলিমা ফেরদৌসী রিমা কে দায়িত্ব থেকে অপসারন করা হয়েছে।

অনুসন্ধানে জানাযায়, মা ও শিশু স্বাস্থ্য প্রকল্পের রোগীরা এই দুই ডাক্তারের কাছে বিনা ভিজিটে চিকিৎসা সহায়তা পাওয়ায় এবং তাঁদের রোগী দেখার সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় ঈর্ষান্বিত হয়ে হাসপাতালের ডাক্তারদের একটি চক্র পটুয়াখালী সিভিল সার্জন কে ভুল তথ্য দিয়ে এই দুই ডাক্তারকে চাকুরী থেকে অপসারণ করেছে। এখন কলাপাড়া ও তুলাতলী হাসপাতালে ২’শ/৩’শ টাকা টাকা ভিজিট ছাড়া কোন রোগী চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেন না। কলাপাড়া হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য প্রশাসক ডা. লোকমান হাকিমসহ অধিকাংশ ডাক্তার এই ভিজিট বানিজ্যে জড়িত এ অভিযোগ ভুক্তভোগী রোগীদের। এ সংক্রান্ত একটি অভিযোগ বিভিন্ন দপ্তরে প্রেরণ করেছে এলাকার সাধারণ মানুষ। এছাড়া একাধিক কর্মচারীদের বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়ম ও দায়িত্বহীনতারও অভিযোগ রয়েছে।

অভিযোগে জানাযায়, কলাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য প্রশাসকই এই দুই ডাক্তারকে ওই প্রকল্প থেকে সরিয়ে দিয়েছেন। মুলত তার রিপোর্টের কারনে সিভিল সার্জন তাঁদের বরখাস্ত করেছেন। এ অপসারনের সাথে জড়িত হাসপাতালে একযুগেরও বেশি সময় ধরে চাকুরী করা জামায়াত সমর্থক দুই কর্মচারী ও এক ডাক্তার এবং এক চিহ্নিত দালাল। তারাই নামে বেনামে এই দুই ডাক্তারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অফিসে অভিযোগ দায়ের করায় প্রকল্প শেষ হওয়ার আগেই তাঁদের অপসারণ করা হয়েছে।

একাধিক গর্ভবতী মা জানান, হাসপাতালে সিজারিয়ান অপারেশন চালু থাকলেও তাঁদের ক্লিনিকে পাঠিয়ে দেয়া হয়। গত মাসে অন্তত ২২ জনকে বিভিন্ন ক্লিনিকে নিয়ে সিজারিয়ান করা হয়েছে। অথচ এই রোগীরা হাসপাতালে বিনামূল্যে অপারেশন করতে পারতো। এখন সিজার করতে হচ্ছে টাকার বিনিময়ে। কলাপাড়া হাসপাতালের ডাক্তাররাই ক্লিনিকে গিয়ে এ সিজার করছেন।

এলাকার সর্বস্তরের মানুষের দাবি ওই দুই ডাক্তারকে আবার তাঁদের কর্মস্থলে পুনঃনিয়োগ দিলে হাজার হাজার রোগীরা যেমন বিনামূল্যে চিকিৎসা সহায়তা পেত, তেমনি এমএনএইচ প্রকল্পের সকল সুবিধা পেতো। এই প্রকল্পের ডাক্তার না থাকায় এখন তাঁদের দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বলে রোগীদের অভিযোগ।

ডা.আমিনুল ইসলাম ও ডা. তাসলিমা ফেরদৌসী রিমা জানান, তাদের কি কারনে ওই প্রকল্প থেকে বাদ দেয়া হয়েছে তা তাঁরা জানেন না। তবে তাঁদের অপরাধ বিনা ভিজিটে রোগীদের সেবা দেয়া।

এ ব্যাপারে কলাপাড়া উপজেলা ভারপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য প্রশাসক ডা.লোকমান হাকিম বলেন ওই দুই ডাক্তারকে বরখাস্ত করেছেন পটুয়াখালী সিভিল সার্জন। এতে তাঁর কোন হাত নেই। আর দুই ডাক্তার না থাকলেও রোগীরা চিকিৎসা সহায়তা পাচ্ছে। তবে ভিজিট নেয়ারকথা তিনি অস্বীকার করেন। জেলা সিভিল সার্জন অফিসে বারবার যোগাযোগ করেও সিভিল সার্জনের বক্তব্য নেয়া যায়নি।

কলাপাড়া এমএনএইচ প্রকল্পের সভাপতি ও কলাপাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান আঃ মোতালেব তালুকদার বলেন, তিনি জানেন না কেন দুই ডাক্তারকে বাদ দেয়া হয়েছে। তাঁকে বাদ দেয়ার বিষয়টি জানানোও হয়নি। তবে বিষয়টি খোঁজ নিচ্ছেন বলে জানান।

এ ব্যাপারে এমএনএইচ প্রকল্পের বরিশাল বিভাগীয় ইনচার্জ ডা. দেলোয়ার হোসেন বলেন, কলাপাড়া হাসপাতালে ডাক্তার স্বল্পতার কারনে মা ও শিশু মৃত্যুর হার বেড়ে যাওয়ায় ২০১২ সালে ওই দুই ডাক্তারকে নিয়োগ দেয়া হয়। তবে এখন আর ডাক্তার সংকট নেই। এ কারনে তাঁদের প্রকল্প থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। তবে কর্মচারীরা আগামী জুন পর্যন্ত কর্মরত থাকবেন।

(ওএস/এসসি/জুলাই১০,২০১৫)