ফরিদপুর প্রতিনিধি : ভাতার লড়াইয়ে নেমেছেন অসহায় মুক্তিযোদ্ধা আলীমুজ্জামান মোল্যা। ফরিদপুরের সালথা উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা আলীমুজ্জামান মোল্যার ভাতার কার্ডটি এখনও হয়নি।

অথচ আমাদের সমাজের অনেকেই আছেন দিব্যি মুক্তিযোদ্ধার সব সুবিধা ভোগ করে চলেছেন আর এই সব মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে অনেক প্রশ্ন আছে সাধারণ মানুষের মনে। একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাকে যদি ঘুষ দিয়ে তার ভাতার কার্ডটি করতে হয় তাহলে এর থেকে দুঃখজনক ঘটনা আর কি হতে পারে আমাদের সমাজের জন্য।

মুক্তিযোদ্ধা আলীমুজ্জামান সালথা উপজেলার যদুনন্দী ইউনিয়নের যদুনন্দী গ্রামের মৃত বানু মোল্যার ছেলে।

জানা যায়, মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে ১৯৭১ সালের ১৫ ডিসেম্বর তিনি যুব শিবির নিয়ন্ত্রণ পরিষদে ও ২১ ডিসেম্বর বাংলাদেশ এ্যাম্বুলেন্স ক্রোপস মুজিবনগর ট্রেনিংয়ে যোগদান করেন। তখন তার বয়স ছিলো ২১ বছর।

যুদ্ধকালীন সময়ে তিনি ৮নং সেক্টরের নগরকান্দা ব্র্যাকের যুদ্ধকালীন কমান্ডার খন্দকার সামছুল হকের নেতৃত্বে বিভিন্ন যুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। যুদ্ধকালীন পরবর্তী সময়ে যুব শিবির নিয়ন্ত্রণ পরিষদ তাকে পরিচয়পত্র প্রদান করে। তৎকালীন সময়ে যুব শিবির নিয়ন্ত্রণ পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ ইউসুফ আলী ও শিবির অধ্যক্ষ ডাঃ এস জামায়েত উল্লাহ স্বাক্ষরিত একটি পরিচয়পত্র তার রয়েছে।

অন্যদিকে বাংলাদেশ এ্যাম্বুলেন্স ক্রোপস মুজিবনর ট্রেনিং থেকেও তাকে সনদপত্র প্রদান করা হয়। তৎকালীন এ্যাম্বুলেন্স ক্রোপসের চেয়ারম্যান ডাঃ আফতাব উদ্দীন মোল্যার স্বাক্ষরিত একটি প্রমাণপত্র ও যুদ্ধকালীন কমান্ডার খন্দকার সামছুল হক স্বাক্ষরিত একটি সনদপত্র রয়েছে তার কাছে।

উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী ঢাকা বিভাগের প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের নামের তালিকায় ২৪৭ নম্বরে মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে আলীমুজ্জামান মোল্যার নাম রয়েছে যা ১৩৯৩ বঙ্গাব্দের ১০ ফাল্গুন দৈনিক জনতা পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিলো।

মুক্তিযোদ্ধা আলীমুজ্জমান উত্তরাধিকার ৭১ নিউজের প্রতিনিধির এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, সরকার যখন মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতার জন্য সকল মুক্তিযোদ্ধাদের কাগজপত্র জমা দেওয়ার ঘোষণা দিলো, তখন আমার কাছে ভাতা করার জন্য কিছু লোক ঘুষ চেয়েছিলো। কিন্তু আমি ঘুষ দিতে রাজি না হওয়ায় এখনও পর্যন্ত আমার ভাতা হয়নি। আমরা এ দেশের জন্য যুদ্ধ করেছি, ঘুষ দেওয়ার জন্য নয়। এখন আমি মৃত্যু পথযাত্রী। আমার শেষ ইচ্ছা মুক্তিযোদ্ধা ভাতার একটি বই। তাহলেই আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পাব বলে আমার মনে হবে।

মহান মুক্তিযুদ্ধের এই অগ্রগামী সৈনিকের এই চাওয়াটুকু কি বড্ড বেশী বড় আমাদের জন্য! বিষয়টি একটি বার ভেবে দেখলে বড় বেশি ভালো লাগবে। আর যাদের ভেবে দেখা দরকার তারা কি ব্যবস্থা নেবেন এবার সেটাই দেখার পালা।

(এসডি/পিএস/জুলাই ১১, ২০১৫)