সিলেট প্রতিনিধিঃ সিলেটের কুমারগাঁওয়ে চোর ‘অপবাদে’ এক শিশুকে পিটিয়ে হত্যার ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ার পর শুরু হয়েছে তোলপাড়। নির্যাতনকারীদেরই একজন প্রায় আধাঘণ্টা ধরে নির্যাতনের সেই দৃশ্য মোবাইল ফোনে ধারণ করেন। হত্যার পর লাশ গুম করার চেষ্টার সময় পুলিশ একজনকে গ্রেপ্তারও করেছে।

নিহত সামিউল আলম রাজন (১৩) সিলেট সদর উপজেলার কান্দিগাঁও ইউনিয়নের বাদেআলী গ্রামের মাইক্রোবাস চালক শেখ আজিজুর রহমানের ছেলে। রাজন স্থানীয় অনন্তপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র। লেখাপড়ার পাশাপাশি দারিদ্রতার কারণে সে সবজি বিক্রি করত।

গত ৮ জুলাই বুধবার সকালে রাজনকে কুমারগাঁও এলাকার একটি গ্যারেজ থেকে ভ্যান চুরির অভিযোগে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এরপর একটি মাইক্রোবাসে তুলে তার লাশ নিয়ে যাওয়ার সময় মুহিত আলম (২২) নামের একজনকে ধরে পুলিশে দেন স্থানীয়রা।

জালালাবাদ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আলমগীর হোসেন জানান, ওই ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছে।

মুহিত আলম (২২), তার ভাই কামরুল ইসলাম (২৪), তাদের সহযোগী আলী হায়দার ওরফে আলী (৩৪) ও স্থানীয় চৌকিদার ময়না মিয়া ওরফে বড় ময়নাকে (৪৫) আসামি করা হয়েছে এ মামলায়।

সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইটগুলোতে ছড়িয়ে পড়া ২৮ মিনিটের ওই ভিডিওতে দেখা যায়, রাজনকে কুমারগাঁও বাসস্টেশনের একটি দোকানঘরের বারান্দার খুঁটিতে বেঁধে রাখা হয়েছে। এতে দুজনের চেহারা দেখা গেলেও কণ্ঠ শোনা গেছে তিন-চারজনের।

ওই ভিডিওতে দেখা যায় ‘এই ক (বল) তুই চোর, তোর নাম ক... লগে কারা আছিল...’ এসব বলতে বলতে রাজনকে আঘাত করতে।

একনাগাড়ে প্রায় ১৬ মিনিট তাকে লাঠি দিয়ে পেটানো হয়। এক পর্যায়ে পানি খেতে চাইলে ‘ঘাম খা’ বলে মাটিতে ফেলে রাখা হয় তাকে।

মারধরের সময় রাজনের আর্তচিৎকার এবং নির্যাতনকারীদের অট্টহাসি ও নানা কটূক্তি শোনা যায়। রাজনের নখ, মাথা ও পেটে রোল দিয়ে আঘাত করার পাশাপাশি বাঁ হাত ও ডান পা ধরে মোচড়াতেও দেখা যায়।

এক সময় তার হাতের বাঁধন খুলে রশি লাগিয়ে হাঁটিয়ে নিতে দেখা যায় নির্যাতনকারীদের। বলতে শোনা যায়- “হাড়গোড় তো দেখি সব ঠিক আছে, আরও মারো...”

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জালালাবাদ থানার ওসি আক্তার হোসেন বলেন, "নির্যাতনের ওই ভিডিওর কথা তিনি শুনেছেন। ভিডিও দেখেছেন- এমন কয়েকজনের সঙ্গে কথাও বলেছেন।"

“ঘটনার সঙ্গে মামলার চার আসামিই সম্পৃক্ত বলে ধারণা করা হচ্ছে। পুরো ঘটনার ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মুহিতকে সাত দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের আবেদন করা হয়েছে।”

গ্রেপ্তার মুহিত শেখপাড়া গ্রামের মৃত আব্দুল মালিকের ছেলে। তার ভাই কামরুল ইসলাম সৌদি আরবে থাকেন। কিছুদিন আগে তিনি দেশে আসেন।

ওসি জানান, "কামরুল যাতে পালাতে না পারেন সে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।"

রাজনের বাবা আজিজুর বলেন, "তিনি যেদিন মাইক্রোবাস চালাতে পারেন না, সেদিন সংসার খরচ চালাতে সবজি বিক্রি করতে বের হত রাজন।" ছেলের খুনিদের ফাঁসির দাবি জানান তিনি।

মা লুবনা আক্তার বলেন, "ওই দিন (বুধবার) ভোরে টুকেরবাজার থেকে সবজি নিয়ে বিক্রির জন্য বের হয়েছিল রাজন। সারা দিন ছেলের খোঁজ পাননি তারা।"

রাতে থানায় গিয়ে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করার সময় এক কিশোরের লাশ পাওয়ার কথা শুনে পরে ছেলেকে শনাক্ত করেন লুবনা। তিনি বলেন, “আমার ছেলে চোর না- এই কথা সারা এলাকার মানুষ জানে। আমার ছেলের হত্যাকারীদের বিচার চাই।”

(এলপিবি/জুলাই ১২, ২০১৫)