নাটোর প্রতিনিধি : হত দরিদ্র বাবার সংসারে যখন পড়া লেখা বন্ধ হওয়ার উপক্রম তখন দিনমজুরি করে পড়ার খরচ জুগিয়েছে মেধাবী রুহুল আমিন। এভাবেই সে নাটোরের আগদিঘা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এবারের এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে।

এর আগে সে ৫ম শ্রেণীতে ট্যালেন্টপুলে ও ৮ ম শ্রেণীতে সাধারণ গ্রেডে বৃত্তি পায়। সে নাটোর সদর উপজেলার মাঝদিঘা গ্রামের হত দরিদ্র পঙ্গু শামছুল মোল্লার ২ ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে দ্বিতীয় সন্তান। বড় ভাইয়ের সঙ্গে দিন মজুরি করে সংসারের সহায়তা করার পাশাপাশি নিজের পড়ার খরচও জুগিয়েছে সে। স্কুলের শিক্ষক ও বন্ধুদের সহায়তায় এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয় সে। বিদ্যুৎ বাতি না থাকায় কুপি বাতির আলোয় রেখাপড়া করতে হয়েছে। তবে কেরোসিন কিনতে না পারায় দিনের আলোয় লেখাপড়া করতে হয়েছে। তবে এসএসসি পরীক্ষার সময় পার্শ্ববর্তী বন্ধুর বাড়িতে গিয়ে বিদ্যুৎ বাতির আলোয় লেখা পড়া করেছে রুহুল।
রুহুল জানায়, বাবা দিন মজুরি করে সংসার চালাতেন। বাবার পায়ে বিষ ফোড়া হলে হাতুড়ে ডাক্তার তা অপারেশন করে অপসারন করেন। কিন্তু ওই অপারেশনেই তার বাবার একটি পা হারাতে হয়। এখন তিনি পঙ্গু জীবন যাপন করছেন। সংসারের হাল ধরতেই দুই ভাইকে মজুরি করতে হয়। অন্যের বাড়ি ও জমিতে কাজ করে লেখাপড়ার খরচ যোগাতে হয়েছে। প্রায় তিন কিলোমিটা পথ হেটে গিয়ে স্কুলে যেতে হয়েছে। মজুরি করতে গিয়ে অনেক সময় স্কুলে যাওয়া হয়নি। কাজ ও স্কুল শেষে পাওয়া দিনের আলোয় পড়া লেখা করতে হয়েছে। শিক্ষক ও সহপাঠি বন্ধুদের সহায়তায় এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। প্রায় দিনই নাখেয়ে পরীক্ষায় অংশ নিতে হয়েছে। ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন তার। কিন্তু অর্থের জোগাড় করতে না পারলে তার লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যাবে।
বাবা শামছুল মোল্লা ও মা তহুরা বেগম ছেলে রুহুলের লেখাপড়া করার জন্য বিত্তবানদের কাছে সহায়তা চেয়েছেন।
স্কুলের সহকারী শিক্ষক আজিজুল ইসলাম জানান, রুহুল তাদের এলাকার অহংকার। স্বল্প সময় লেখাপড়া করে সে জিপিএ-৫ পেয়ে পাশ করেছে। এছাড়া ৫ম ম্রেণী ও ৮ম শ্রেণীতেও বৃত্তি পেয়েছে। তিনি সহ স্কুরের সকল শিক্ষক ও তার সহপাঠিরা স্কুলের লেখাপড়ার সময় সহায়তা করেছে। সহায়তা পেলে সে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হবে। বৃত্তবানরা এগিয়ে এলে সে তার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে পারবে। নচেৎ তার লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যাবে।
(এমআর/এএস/মে ২০, ২০১৪)