ফরিদপুর প্রতিনিধি : ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার সদর বাজারে এক দোকানে চুরির কথিত অভিযোগে এক গৃহবধূকে (৪৫) পিটিয়ে তার মাথার চুল কেটে নেবার ঘটনায় তোলপাড় শুরু হয়েছে জেলা জুড়ে।

ফরিদপুরের সকল শ্রেনী-পেশার মানুষ এ ঘটনাকে ন্যাক্কারজনক ও অমানবিক আখ্যা দিয়ে ঘটনার সাথে জড়িতদের কঠোর শাস্তি দাবী করেছেন।

এদিকে, এই ঘটনা নিয়ে ১৫ জুলাই রাতে নগরকান্দা থানায় একটি মামলা হয়েছে। পুলিশ এজাহারভুক্ত এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে বলে জানা গেছে।

নগরকান্দা উপজেলা সদর বাজারের ব্যবসায়ী ও কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, গত ৮ জুলাই বিকেলে নগরকান্দা বাজারের কাপড়ের দোকানে ওই গৃহবধূ ঈদ ও মেয়ের বিয়ে উপলক্ষে কাপড় কেনার জন্য যান। কাপড়ের দাম চাওয়া নিয়ে এক পর্যায়ে দোকানদারের সাথে তার কথা কাটাকাটি হয়। এ সময় ওই গৃহবধূকে কাপড় চুরির অপবাদ দিয়ে তাকে সম্পূর্ণ নেড়া করে দেওয়া হয়।

এ লজ্জাজনক ঘটনার পর ওই গৃহবধূ স্বামীর বাড়ি নগরকান্দার কাইচাইল ইউনিয়নের মধ্য কাইচাইল গ্রাম ছেড়ে পাশের গোপালগঞ্জ জেলার মুকসুদপুর উপজেলায় এক আত্মীয় বাড়িতে আশ্রয় নেন।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে কাইচাইল ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি চেয়ারম্যান জিন্নাহ সরদার জানান, ওই গৃহবধূ বর্তমানে বাড়ি ছেড়ে মুকসুদপুরে চলে গেছেন। তিনি বলেন, উপজেলার কোদালীয়া শহীদনগর ইউনিয়নের বড় পাইককান্দি গ্রামে ওই গৃহবধূর মেয়ের বিয়ের দিন তারিখ ঠিক ছিল ঈদের পর। তবে এ ঘটনা জানাজানির পর মেয়ের বিয়ে ভেঙে দিয়েছে বরপক্ষ।

নগরকান্দা থানা সূত্রে জানা গেছে, ওই নারীর স্বামী আলমগীর মিয়া বুধবার রাতে নগরকান্দা থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনসহ বিভিন্ন অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করেছেন। এ মামলায় মোট ৪ জনকে আসামী করা হয়েছে।

নগরকান্দার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আফসারউদ্দিন বলেন, পুলিশ মামলার এজাহারভুক্ত আসামী ওই বাজারের ব্যবসায়ী উপজেলা সদরের ছাগলদী গ্রামের রাজীব মোল্যাকে (৩২) আটক করেছে। ঘটনার দিন রাজীব মোল্যা চুল কাটার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। তিনি বলেন, অন্য আসামীদেরও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

ওসি আরও বলেন, ওই নারীর মেয়ের বিয়ে যাতে ভেঙ্গে না যায় সে জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) সাথে নিয়ে বরপক্ষের সাথে আলাপ করে সমঝোতার উদ্যোগ নেওয়া হবে।

এদিকে, এ ঘটনাকে ধামাচাপা দিতে তৎপরতা চালাচ্ছেন বাজার ব্যবসায়ী সমিতির শীর্ষ পর্যায়ের এক নেতা। তিনি বিভিন্নভাবে অভিযুক্ত ব্যবসায়ীকে বাঁচাতে আপ্রান চেষ্টা চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

এ ব্যাপারে ফরিদপুরের বিশিষ্ট নারী নেত্রী ও মানবাধিকার কর্মী এ্যাডভোকেট সুচিত্রা শিকদার জানান, এমন ঘটনা খুবই নিমর্ম ও পৈশাচিক। যারা এ ঘটনার সাথে জড়িত তাদের আইনের আওতায় এনে এখনই বিচার করা উচিত। আর একজন মানবাধিকার কর্মী হিসেবে আমি এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও ধিক্কার জানাই।

(এসডি/পিএস/জুলাই ১৭, ২০১৫)