ফরিদপুর প্রতিনিধি :আমরা যখন এই নিউজটি লিখছি তখন ডিজিটাল যুগের জয়জয়কার । আর এমন একটি মহূর্তে ডিজিটাল যুগের মানুষগুলোকে নাকানি চুবানি দিয়ে ডিজিটাল প্রতারাণার আশ্রয় নিয়েছেন আজকের নিউজের এই ব্যক্তিটি।

একটিই প্রশ্ন সরকারি প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষকের কতটুকু যোগ্যতা লাগে ? এই প্রশ্নটি এখন জেলার সচেতন নাগরিকদের মাঝে খুব বড় করে দেখা দিয়েছে। আর এই অভিযোগগুলো খুঁজে দেখার দায়িত্ব যে সব কর্মকর্তাদের তারা কি করেন সেটিই ভেবে দেখা দরকার বলে মনে করেন জেলার অনেকে।

একজন অর্ধশিক্ষিত মানুষ নিজ ছোট ভাইয়ের উচ্চ ম্যাধ্যমিক শিক্ষার সার্টিফিকেট দিয়ে দীর্ঘ ২৫বছরের অধিক সময় একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করে চলছেন যা অবাক করে দেবার মতো ঘটনা।

হ্যাঁ আমরা বলছি, প্রধান শিক্ষক নামধারী একজন প্রতারণার আশ্রয় নেওয়া প্রধান শিক্ষকের জাল জালিয়াতির কথা; যিনি ১৯৮৮ সাল থেকে আজ পর্যন্ত ছোট ভাইয়ের শিক্ষাগত যোগ্যতার সার্টিফিকেট দিয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে কাজ করে চলছেন । আর যে স্কুলটিতে তিনি প্রধান শিক্ষক সেজে রয়েছেন সেটি সদরপুর উপজেলার কৃষ্ণ মঙ্গলের ডাঙ্গী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ঘটনা।

তার প্রকৃত নাম মোঃ আব্দুল জলিল, পিতা মৃত মোঃ কছিমদ্দিন সেক। যে সার্টিফিকেট দিয়ে তিনি প্রধান শিক্ষকতা করছেন সেটি তার আপন ছোট ভাইয়ের তার নাম আব্দুল কাশেম মিঞা যিনি বিদেশে অবস্থান করছেন। এই আবুল কাশেম মিঞার এস এস সি পরীক্ষার সার্টিফিকেটের রেজিঃ নম্বর ৮৭২২৯/১৯৮১, রোল নং- সদরপুর-আরপি ২৯০২৯ স্কুল পুরাতন নাম আকটের চর এস সি উচ্চ বিদ্যালয় এবং এইচ এস সি পরীক্ষার সার্টিফিকেটের রেজিঃ নম্বর-২৯২৫৯/১৯৮৪, রোল নং- চরভদ্রাসন- ৩৫৩৫৪, চরভদ্রাসন কলেজ।

এখানে তার ছোট ভাইয়ের সার্টিফিকেট দিয়ে দায়িত্ব পালনকারী স্কুল প্রধান শিক্ষকের বিয়ের নিকাহনামাতে মোঃ আব্দুল জলিল, পিতা মৃত মোঃ কছিমদ্দিন সেক আর তার স্ত্রীর নাম মোসাঃ খালেদা বেগম, তার বিয়ে রেজিষ্ট্রি হয় ৭ই এপ্রিল ১৯৯২ সালে। আর তার আপন ছোট ভাই প্রকৃত সার্টিফিকেটের মালিক আব্দুল কাশেম মিঞা পিতা মৃত মোঃ কছিমদ্দিন সেক আর তার স্ত্রীর নাম মোসাঃ মেরী আক্তার তার বিয়ে রেজিষ্টি হয় ১৭ই অক্টোবর ১৯৯৮ সালে। এই মোসাঃ মেরী আক্তারের স্বামী আব্দুল কাশেম মিঞা যার নামে উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলের সার্টিফিকেট তিনি এখন বিদেশে অবস্থান করছেন। আর প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত মোঃ আব্দুল জলিল স্কুলের প্রধান শিক্ষক তিনি তার আপন ছোট ভাই আব্দুল কাশেম মিঞার সার্টিফিকেট দিয়ে দিব্যি চালিয়ে যাচ্ছেন স্কুলের প্রধান শিক্ষকতা।

মোঃ আব্দুল জলিলের পুরাতন ভোটার লিষ্ট যেটা ২০০০ সালে প্রকাশ পায় সেই ভোটার তালিকায় গ্রাম- দলিলদ্দিন পাওনাদারের ডাঙ্গী, ওর্য়াড নং-৯, ইউনিয়ন-চর বিষ্ণুপুর, পুরুষ ভোটার তালিকায় ০০০১৪ নম্বরের ঘরে আবুল কাশেম মিঞার নাম আর একই লিষ্টে ০০০৫৫ ঘরে আঃ জলিল মিয়ার নাম।

পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায় তাতে তারা দুই ভাই আবুল কাশেম মিঞা ও তার বড় ভাই আঃ জলিল মিয়া আলাদা আলাদা ভাবে ভোটার হয়েছেন। সরকারের বর্তমান ডিজিটাল প্রকাশিত নতুন ভোটার লিষ্টে পুরুষ ভোটার তালিকায় ঐ এলাকার ৫২ নম্বর ঘরে দেখা যায় তিনি সুকৌশলে আবুল কাশেম মিয়া (জলিল) দিয়ে ভোটার হয়েছেন। তার নিজের প্রকৃত নাম আব্দুল জলিলকে তার ভাইয়ের আবুল কাশেমের নামের পাশে বসিয়ে ব্রাকেটে জলিল বসিয়ে দিয়েছেন।

অপরাধী তার অপরাধ করার সময় নিজের অজান্তেই ভুল করে থাকেন যা এই জাল জালিয়াতীতে প্রমান হয়েছে বলে মনে করেন শিক্ষাবিদরা।

এখানে আরো উল্লেখ্য, দুটি নিকাহনামায় উল্লেখিত স্ত্রীদের স্বামীর নামের সাথে মিল করলেই বোঝা যাবে কে প্রকৃত সার্টিফিকেটধারী ব্যক্তি যা নিকাহনামা নং ৫৫/৯২ আব্দুল জলিলের যার বর্তমান স্ত্রী মোসাঃ খালেদা বেগম এবং নিকাহনামা নং ৯৮-ঢ়/১৯৯৮ আব্দুল কাশেম মিঞার যার বর্তমান স্ত্রী মোসাঃ মেরী আক্তার। আর এই মোসাঃ মেরী আক্তারের স্বামী প্রকৃত সার্টিফিকেটধারী আবুল কাশেম মিঞা বর্তমানে তিনি বিদেশে অবস্থান করছেন। আর মোসাঃ খালেদা বেগমের স্বামী মোঃ আব্দুল জলিল ভাইয়ের নামের সার্টিফিকেট দিয়ে স্কুলের প্রধান শিক্ষক সাজা নিকাহনামায় যিনি মোঃ আব্দুল জলিল তার কোন শিক্ষাগত যোগ্যতার সার্টিফিকেট নেই।

এ ব্যাপারে ৯০নং কৃষ্ণ মঙ্গলের ডাঙ্গী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল কাশেম মিয়া(জলিল) তার স্কুলে বসে জানান, আমি আমার নিজের সার্টিফিকেট দিয়েই চাকুরী করছি ভাইয়ের সার্টিফিকেটের ব্যাপারটি সঠিক নয়। আর আমার ছোট ভাই মামুন মিয়া ইটালীতে থাকেন তিনি অন্য ভাই প্রকৃত সার্টিফিকেটধারী আবুল কাশেম মিয়ার কথা এড়িয়ে যান(যদিও তার দুই ভাই ইটালীতে থাকেন)।

এ ব্যাপারে সদরপুর উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ হাফিজুর রহমান সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, আমার নিকট কোন অভিযোগ আসেনি অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

ফরিদপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার শিবু পদ দে জানান, আমার নিকট কোন অভিযোগ আসে নাই তবে কেউ যদি লিখিত অভিযোগ করে তাহলে আমরা তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহন করব।


(ডিএস/এসসি/জুলাই ২৫, ২০১৫)