দীপক চক্রবর্তী ও খান আবু হাসান, শ্রীপুর (মাগুরা) থেকে : স্ত্রী’র পরকীয়া প্রেমে বাঁধা দেওয়ার কারণেই অকালে প্রাণ দিতে হলো স্বামীকে। মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার রায়নগর গ্রামের মীর আরোজ আলী (৩৫) নামে এক ব্যক্তিকে গত বৃহস্পতিবার রাতে স্ত্রী রোজিনা বেগম ও তার প্রেমিক পরিকল্পিতভাবে মাথায় আঘাত ও শ্বাসরোধ করে হত্যা করে লাশ নদীতে ফেলে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

শুক্রবার দুপুরে শ্রীপুর থানা পুলিশ নিহত আরোজ আলীর মৃত দেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য মাগুরা মর্গে পাঠিয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশ আরজ আলীর স্ত্রী রোজীনা বেগমকে আটক করেছে। তার স্বীকারোক্তিতে পুলিশ চাঞ্চল্যকর সব তথ্য পেয়েছে। থানায় মামলা দায়ের হয়েছে। প্রেমিক সাইফুলসহ কিলিং মিশনে অংশ নেওয়া তার ৩ সহযোগীরা পলাতক।

নিহত আরোজ আলীর বোন আনোয়ারা বেগম ও পরিবারের লোকজন অভিযোগ করেছেন, গত ১০ বছর পূর্বে উপজেলার রায়নগর গ্রামের মৃত আতর আলী মীরের পুত্র মীর আরোজ আলী রোজিনাকে ভালবেসে বিয়ে করে । গত ৩-৪ বছর পূর্ব থেকে স্ত্রী রোজিনা স্বামী আরোজ আলীর অবাধ্য হয়ে ইচ্ছামত চলাফেরা করত । সব সময় বিভিন্ন লোকের সাথে মোবাইল ফোনে কথাবার্তা বলত । অধিকাংশ সময় স্ত্রী’র আহবানে আরোজ আলীর বাড়িতে লোকজন আসতো। যা তার স্বামী মেনে নিতে পারতনা । এক পর্যায়ে গত পাঁচ মাস পূর্বে পরকীয়া প্রেমে জড়িয়ে স্বামী আরোজ আলীকে ছেড়ে রোজিনা মাগুরা সদরের বেরইল গ্রামের বিল্লাল নামে এক ব্যক্তির সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয় । এখানে ২-৩ মাস সংসার করার পর আবার সে তার সাবেক স্বামী আরোজ আলীর পরিবারে শালিস মিমাংসার মাধ্যমে ফিরে আসে। আরোজ আলীর পরিবারে এসে সংসার শুরু করলেও ওই ব্যক্তির সাথে রোজিনার গোপন সম্পর্ক থেকেই যায় এবং এর পাশাপাশি সে আবার নতুন করে জনৈক প্রতিবেশী আত্বীয় সাইফুলের সাথে পরকীয়া প্রেমে জড়িয়ে পড়ে । বিষয়টি তার স্বামী জেনে ফেলায় সে স্ত্রী’র পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়ায় এবং তাকে হত্যার পরিকল্পিনা করে। গত বৃহস্পতিবার গভীর রাতে তাদের দু’সন্তান ও স্বামী আরোজ আলী ঘুমিয়ে পড়লে স্ত্রী রোজিনা বেগম নিজে তার সহযোগীদের নিয়ে ঘরের মধ্যে তার স্বামীর মাথায় আঘাত করে ও শ্বাসরোধ করে হত্যা করে মৃত দেহ পাশ্ববর্তী গড়াই নদীতে ফেলে দেয়। শুক্রবার দুপুরে এলাকাবাসী মৃত দেহ অর্ধ ভাসমান অবস্থায় দেখতে পেয়ে পরিবারের লোকজন ও পুলিশকে খরব দেয় । সংবাদ পেয়ে শ্রীপুর থানা পুলিশ আরোজ আলীর মৃত দেহ উদ্ধার করে। পুলিশ পরিবারের লোকজনের অভিযোগের ভিত্তিতে এ হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত সন্দেহে স্ত্রী রোজিনা বেগমকে আটক করে।

এ বিষয়ে শ্রীপুর থানার ওসি মো: মনিরুজ্জামান বলেন, রোজিনার স্বীকারোক্তিতে জানাযায় প্রতিবেশী সাইফুলের সাথে তার দীর্ঘদিন যাবৎ অবৈধ মেলামেশা চলছিলো। এর এক পর্যায়ে সাইফুল -রোজিনাকে বিয়ে করবে বলে ওই রাতে ঘুমন্ত অবস্থায় মাথায় আঘাতসহ শ্বাসরোধ করে হত্যা করে।এ হত্যাকান্ডের সাথে আরোজ আলীর স্ত্রী রোজিনার প্রেমিক সাইফুলসহ আরও ৩ জন ভাড়াটিয়া খুনি অংশ গ্রহন করে বলে রোজিনার স্বীকারোক্তীতে জানাগেছে। জানাগেছে খুনের আসল মোটিভ। কি কারনে খুন হয়। কিভাবে খুন করা হয়। কে-কে এ কিলিং মিশনে অংশ গ্রহন করে।

যে কারনে খুন হয় : রোজিনা প্রেমিক সাইফুলের অবাধ মেলামেশার এক পর্যায়ে বাদসাধে স্বামী আরোজ আলী। প্রেমিক জুটি বাধ্য হয়েই তাকে চিরোতরে বিদায় দিয়ে নতুন করে ঘর বাধার স্বপ্ন দেখে। সেই আশায় বুক বেধেই চালানো হয় এ কিলিং মিশন।

যে ভাবে খুন করা হয় : ২৩ জুলাই বৃহস্পতিবার রাতের খাবার খেয়ে আমি –আমার স্বামীকে নিয়ে ঘুমাতে যায়। এদিন তার সাথে খুব ভাল ব্যবহার করি। সে আমার ব্যবহারে সব কিছুই ভুলে যায়। এক সময় সে ঘুমিয়ে পড়ে। কিন্তু আমার ঘুম আসেনা। রাত ২টা বাজে। এক সময় সাইফুল এসে আমার দরজায় নক করলে আমি দরজা খুলে দেই। তখন সাইফুল তার আরও ৩ সহযোগী নিয়ে ঘরে প্রবেশ করে। আমি তাদের সাহায্য করি। রাত ২টা ১০ মিনিটের সময় সাইফুল নিজেই ঘুমন্ত আরোজের বুকের ওপর চেপে বসে গলায় রশ্মি পেচিয়ে টানদেয়। অন্য ৩ জন হাত এবং পা ধরে রাখে। আমি দরজাতে দাড়িয়ে থাকি। রশ্মি ধরে টান দিতেই সে খুব ছটফট করে। ২/৩মিনিট পর যখন সে নিথর হয়ে যায় তখন মৃত্যু নিশ্চিত জেনে তাকে পার্ম্ববর্তী নদীতে ফেলে আসা হয়।

এব্যাপারে স্বামীর খুনের দায়ে রোজিনার কাছ থেকে স্বীকারোক্তি নিয়ে তাকে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে বলে পুলিশ জানায়।

(ডিসি/এসসি/জুলাই ২৫, ২০১৫)