বাগেরহাট প্রতিনিধি : বাগেরহাট মহকুমা রাজাকারের ডেপুটি কমান্ডার কুখ্যাত কসাই সিরাজ মাস্টার ওরফে শেখ সিরাজুর হককে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধ মামলায় ফাঁসি ও রাজাকার কমান্ডার খান আকরাম হোসেনকে আমৃত্যু কারাদন্ডের রায় ঘোষনার সাথে-সাথেই মঙ্গলবার দুপুরে বাগেরহাটের বিভিন্ন স্থানে আনন্দ মিছিল সমাবেশ ও মিষ্টি বিতরন করা হয়েছে।

বাগেরহাট শহরে জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সামনে থেকে বের হওয়া মুক্তিযোদ্ধা-জনতার মিচিলে নের্তৃত্ব দেন সদর আসনের এমপি, মৎস্য ও প্রানি সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এ্যাডভোকেট মীর শওকাত আলী বাদশা এবং সমাজকল্যান মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ডা. মোজাম্মেল হোসেন এমপি। মিছিলটি শহরের প্রধান-প্রধান সড়ক প্রদক্ষিন করে জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ইউনিট কমান্ড চত্তরে এসে শেষ হয়। সেখানে এক সমাবেশে বক্তারা কুখ্যাত কসাই সিরাজ মাস্টারের ফাঁসির দন্ড হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করে একই মামলায় রাজাকার কমান্ডার খান আকরাম হোসেনকে আমৃত্যু কারাদন্ডের রায় প্রদান করায় চরম ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়। তারা বলেন, আকরামেরও ফাঁসির দণ্ড হওয়া উচিত ছিলো।

বাগেরহাটে মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে এই দুই কুখ্যাত রাজাকার কমান্ডানসহ তাদের সহযোগিরা প্রধান যে৭টি স্থানে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিলো রায় ঘোষণার পর সদর উপজেলার সেই বেশরগাতি, মুক্ষাইট, কান্দাপাড়া, গোটাপাড়া, রনজিতপুর, চুলকাঠি, ঘনশ্যামপুর, রামপাল উপজেলার ডাকরা, কচুয়া উপজেলা সদরসহ শাঁখারিকাঠি, টেংরাখালী, চর টেংরাখালী, বারুইখালী ও মোড়েলগজ্ঞের তেলিগাতিতে আনন্দ মিছিল,সমাবেশ ও মিষ্টি বিতরণের খবর পাওয়া গেছে। মহান মুক্তিযুদ্ধ এসব স্থানে বাগেরহাট মহকুমা রাজাকারের ডেপুটি কমান্ডার কুখ্যাত কসাই সিরাজ মাস্টার ও রাজাকার কমান্ডার খান আকরাম হোসেনসহ তাদের সহযোগিরা প্রায় ৮শত নারী-পুরুষও শিশুকে হত্যা, ধর্ষণ,অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট চালায়।

মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে সিরাজ মাস্টার বাগেরহাট শহরের ডাকবাংলা ঘাটে মুক্তিকামী লোকজনকে ধরে এনে নিজে ধারালো অস্ত্র দিয়ে জবাই করে হত্যা করতো। তাদের বুক চিরে কলিজা বের করে দেখতো। সেকারনে ওই সময়ে রাতারাতি সিরাজ মাস্টার কসাই সিরজ মাস্টার হিসেবে কুখ্যাতি পায়। স্বধীনতার পর-পরই মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম খোকনের ‘রফিক বাহিনী’র যোদ্ধারা এই কুখ্যাত কসাই সিরাজ মাস্টারকে আটক করে। তখন বাগেরহাট শহরে টিকিটের বিনিময়ে সাধারণ জনগণকে এই কুখ্যাত কসাইকে দেখে তার গায়ে ধুধু মেরে ঘৃণা প্রকাশের সুযোগ করে দেয়।

এদিকে বাগেরহাটের কুখ্যাত রাজাকার কসাই সিরাজের বাড়ি সদর উপজেলার গোটাপাড়া গ্রামে। সেখানে যুদ্ধের পর থেকে সে আর ফিরে যায়নি। তবে তার চাচি নুরজাহান বেগম বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সে আমাকেও হত্যা করতে চেয়ে ছিল । বাড়িঘর পুড়িয়ে দিয়েছিলো। প্রতিবেশীরা আমাকে ওর হাত রক্ষা করতে লুকিয়ে রেখেছিল। সে কারণে আমার প্রাণ রক্ষা পায়।

(একে/এএস/আগস্ট ১১, ২০১৫)