ঈশ্বরদী (পাবনা) প্রতিনিধি : বড় সাইজের মাছ চাষ করে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন ঈশ্বরদীর সফল মৎস্য চাষি ইয়াকুব আলী। ইতিমধ্যেই তিনি ঈশ্বরদীর মৎস্য চাষিদের আইডল হিসেবে পরিচিত লাভ করেছেন।

শুধুমাত্র মাছ চাষ করেই বছরে চার থেকে পাঁচ লাখ টাকা উপার্জন করেন বলে জানা গেছে। এলাকায় ভাল ও ভদ্র মানুষ হিসেবেও তার সুখ্যাতি রয়েছে। মৎস্য খামারের উপার্জিত আয় থেকে তিনি গরিব ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার খরচ ,কন্যা দায়গ্রস্থ পিতাকে সহযোগিতা এবং দরিদ্রদেও চিকিৎসায় আর্থিক সহযোগিতা করেন বলে জানা যায়।

ঈশ্বরদীর দাশুড়িয়া ইউনিয়নের খয়েরবাড়িয়া গ্রামের মৃত হযরত আলীর ছেলে ইয়াকুব আলী লেখাপড়া শেষ করে প্রথমে ধান-চালের ব্যবসায় নেমে পড়েন। এলাকায় অটোমিলের সাথে প্রতিযোগিতায় হাসকিং মিলের ব্যবসা ভাল না হওয়ায় তিনি দুইটি ভেক্যু কিনে মাটি কাটার ব্যবসা শুরু করেন। ভেকু দিয়ে অন্যের পুকুর খনন করতে গিয়ে এক সময় নিজের জমিতে একটি পুকুর খনন করে মাছ চাষ শুরু করেন। প্রায় ৫ বছর আগে নিজের এক বিঘা জমিতে পুকুর কেটে মাছ চাষ শুরু করেন। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। এগিয়ে চলেছেন শুধু সামনের দিকে।

বর্তমানে ইয়াকুবের মৎস্য খামারের ১৭ বিঘা জমিতে ৫টি পুকুর রয়েছে। ইয়াকুব এখন ঈশ্বরদীর একজন আদর্শ ও প্রতিষ্ঠিত মৎস্য চাষি। ইয়াকুবের দেখা দেখি এলাকার ও আশপাশের বেকার যুবকেরা পরামর্শ নিয়ে মাছ চাষ শুরু করেছে। মৎস্য খামারের পাশাপাশি তার ছাগলের খামার, ধান চাষ ও সবজি চাষও করেন। তার খামারের নাম ‘ইয়াকুব মৎস্য খামার’।

বড় মাছ চাষের বিষয়ে ইয়াকুব বলেন, নাটোরের মকুড়ায় পুকুর খনন করতে গিয়ে সেখানে কয়েকটি বড় মাছ চাষের পুকুর দেখতে পাই। মকুড়ার বড় সাইজের মাছ চাষিদের সাথে আলোচনা করে এসে ঈশ্বরদী উপজেলা মৎস্য সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মাহবুবুল আলমের পরামর্শ নিয়ে নিজ খামারে সুষম খাবার দিয়ে বড় সাইজের মাছের চাষ শুরু করি। টাকা থাকলেও বাজারে বড় সাইজের মাছের খুব অভাব। অথচ বড় মাছের চাহিদা রয়েছে। বড় রুই মাছ দেশ থেকে ক্রমান্বয়ে হারিয়ে যাচ্ছে। এক সময় আমাদের ছেলে-মেয়েরা রুই মাছ চিনবে না। তিনি আরও বলেন, আমার খামারের সমস্ত খরচ বাদ দিয়ে বছরে প্রায় চার থেকে পাঁচ লাখ টাকা আয় হয়। আমার এলাকার অন্য মাছ চাষিরা সুষম খাদ্যের পরিবর্তে মুরগীর বিষ্ঠা ব্যবহার করে থাকেন। এই মাছ খেলে মানব দেহের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। মুরগীর বিষ্ঠা দিয়ে চাষ করলে মাছ বড় হবে না বরং মাছের দেহে পচন ধরবে এবং মাছ মারা যাবে। মুরগীর বিষ্ঠা দিয়ে মাছ চাষ বন্ধে এবং এবিষয়ে সচেতন করার জন্য তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

সাফল্যের বিষয়ে ইয়াকুব বলেন, দেশে বেকারত্ব দুরীকরণ এবং আমিষের চাহিদা কিছুটা হলেও পুরণ করার জন্য এ পেশায় এসেছি। দেশের এবং জনসাধারনের কথা চিন্তা করে এদেশের মানুষের পুষ্টির যোগান দিতেই বেকার যুবকদের মৎস্য চাষে উৎসাহিত করে তুলেছি। সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার সহযোগিতা কামনা করে তিনি বলেন, তারা যদি আমাকে আর্থিক ভাবে সাহায্য সহযোগিতা করেন তাহলে আমার খামারকে আরও প্রসারিত করা সম্ভব। এতে এলাকার বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে।

ঈশ্বরদী উপজেলা মৎস্য সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মাহবুবুল আলম বলেন, খয়েরবাড়িয়ার ইয়াকুব মৎস্য খামারটি পরিপাটি ভাবে সাজানো। ঈশ্বরদীতে একমাত্র ইয়াকুবের খামারেই বড় মাপের মাছ চাষ করা হয়। তিনি সুষম খাবার দিয়ে তিন কেজিরও উপরের সাইজের মাছ চাষ করেন। বিভিন্ন হ্যাচারীর মালিক ইয়াকুবের মৎস্য খামার থেকে ডিমওয়ালা মা মাছ কিনে এনে রেনু উৎপাদন করে মাছ চাষিদের কাছে বিক্রি করে থাকেন। ইয়াকুব মৎস্য খামারে মাছ চাষের কারণে কিছুটা হলেও দেশের মাছের ঘাটতি পূরণে সচেষ্ট হবে।

(এসকেকে/এএস/আগস্ট ১৬, ২০১৫)