দিনাজপুর প্রতিনিধি :আজ ২৬ আগস্ট। দিনাজপুরের ফুলবাড়ী কয়লাখনি বিরোধী ট্রাজেডি দিবস। উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লাখনি না করার দাবিতে ২০০৬ সালের এইদিনে তেল গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির উদ্যোগে এশিয়া এনার্জির ফুলবাড়ী অফিস ঘেরাও কর্মসূচি পালন করা হয়।

কর্মসূচির এক পর্যায়ে ঘেরাওকারিদের ওপর বিডিআর-পুলিশ গুলি চালায়। এতে কলেজ ছাত্র তরিকুল, কিশোর আমিন ও সালেকিনের মৃত্যুসহ দু’শতাধিক নারী-পুরুষ, ছাত্র-যুবক আহত হয়। এদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ হয় অর্ধশত। গুলিবিদ্ধ সুজাপুরের বাবলু রায়, সাহাবাজপুরের প্রদীপ সরকারের মতো অনেকেই এখনও পঙ্গুত্বের অসহণীয় যন্ত্রণা বয়ে বেড়াচ্ছেন।

জনতার আন্দোলন সংগ্রামে ২০০৬ সালের ২৬আগস্ট থেকে ৩০আগস্ট উত্তাল ছিল ফুলবাড়ীসহ ফুলবাড়ী খনি এলাকা। এ সময় আন্দোলনকারিদের দাবির মুখে বিডিআর প্রত্যাহার করা হয়। এরই মধ্যে ২৮আগস্ট এশিয়া এনার্জির সুবিধাভোগী হিসেবে চিহ্নিত কয়েক জনের বাড়িঘর ভাংচুর চালিয়ে পুড়িয়ে দেয় বিক্ষুদ্ধ জনতা।

অবশেষে সরকারের পক্ষ থেকে ৩০আগস্ট সন্ধ্যায় পার্বতীপুর উপজেলা অডিটরিয়ামে সমঝোতা বৈঠকে অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে সরকারের পক্ষে তৎকালীন রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মিজানুর রহমান মিনু ও খাদ্য ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী আসাদুল হাবীব দুলু এবং আন্দোলনকারিদের পক্ষ অংশ নেন তেল গ্যাস জাতীয় কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহম্মদ, কেন্দ্রীয় নেতা জোনায়েদ সাকি, নজরুল ইসলাম, জেলা শাখা সৈয়দ মোসাদ্দেক হোসেন লাবু, মোশাররফ হোসেন নান্নু, উপজেলা শাখা সৈয়দ সাইফুল ইসলাম জুয়েল, আব্দুল মজিদ চৌধুরী, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম বাবলু, জয়প্রকাশ গুপ্ত, হামিদুল হক, এসএম নূরুজ্জামান জামান, এম এ কাইয়ুম, শফিকুল ইসলাম শিকদার, মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী, উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ খুরশিদ আলম মতি, ফুলবাড়ী পৌরসভার মেয়র ও থানা ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মানিক সরকার প্রমুখ।

সমঝোতা বৈঠকে ছয়দফা চুক্তি স্বাক্ষর হয়। এতে সরকারের পক্ষ স্বাক্ষর করেন তৎকালীন রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মিজানুর রহমান মিনু এবং জাতীয় কমিটির পক্ষে স্বাক্ষর করেন জাতীয় কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহম্মদ।

এই ছয়দফা চুক্তির মধ্যে ছিল, ১। এশিয়া এনার্জিকে ফুলবাড়ি ও দেশ থেকে বহিস্কার, উন্মুক্ত পদ্ধতির কয়লাখনি ফুলবাড়িসহ দেশের কোথাও না করা, ২। পুলিশ-বিডিআরের গুলিতে নিহতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ প্রদান, ৩। আহতদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসার ব্যবস্থা, ৪। গুলি বর্ষণসহ হতাহতের প্রকৃত কারণ উদঘাটনে তদন্ত কমিটি গঠন, ৫। শহীদের স্মৃতিসৌধ নির্মাণসহ এশিয়া এনার্জির দালালদের গ্রেফতারসহ শাস্তি প্রদান ও ৬। আন্দোলনকারিদের বিরুদ্ধে দায়ের করা সকল মামলা প্রত্যাহার এবং নতুন করে মামলা না করা।

দিকে তৎকালীন চারদলীয় ঐক্য জোট সরকার ছয়দফা চুক্তির আংশিক বাস্তবায়ন করে। ছয়দফা চুক্তি পূর্ণ বাস্তায়নের দাবিতে এখনও ফুলবাড়ি খনি অঞ্চলের মানুষ আন্দোলন সংগ্রাম অব্যাহত রেখেছে।

২৬আগস্ট দিনটিকে তেল গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি ‘‘জাতীয় সম্পদ রক্ষা দিবস’’ এবং পৌর মেয়র মানিক সরকারের নেতৃত্বে স্থানীয়ভাবে গড়ে ওঠা সম্মিলিত পেশাজীবী সংগঠন ‘‘ফুলবাড়ি শোক দিবস’’ হিসেবে ঘোষণা করে পৃথক পৃথকভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে পালন করে আসছে।

(এমএইচএম/এসসি/আগস্ট২৬,২০১৫)