বড়লেখা প্রতিনিধি :বড়লেখা পৌরশহরের সুরমা ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে এক্স-রে করাতে গেলে গৌছ উদ্দিন নামক টেকনিশিয়ান কৌশলে মধ্য বয়সী এক নারী রোগীকে ধর্ষণ করেছে। ভুক্তভোগী এ মহিলা রোগী বিষয়টি পুলিশকে অবহিত করলেও প্রভাবশালীদের চাপে পুলিশ আর আগ বাড়েনি।

এক ইউপি মেম্বার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক ও ঘটনাকারী টেকনিশিয়ানের নিকট হতে মোটা অংকের টাকা আদায় করলেও সম্ভ্রম হারানো নারীকে মাত্র ২৭ হাজার টাকা দিয়ে ঘটনাটি ধামাচাপা দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নারী রোগীর সম্ভ্রমহানীর ঘটনা আর পরবর্তীতে ধামাচাপার বিষয়টি ছড়িয়ে পড়লে উপজেলা জুড়ে তোলপাড় শুরু হয়। এক ফেসবুক গ্রাহক তার স্ট্যাটাসে ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে পুলিশ প্রশাসন, সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মীদের দায়িত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। ক্ষুব্দ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে তিনি লেখেন এ ডায়াগনষ্টিক সেণ্টারের বিরুদ্ধে বারবার এমন অনৈতিক কর্মকান্ডের অভিযোগ উঠলেও কোন্ ক্ষমতার বলে এর বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয় না। তাহলে সমাজপতি আর টাকার কাছে কি সবাই জিম্মি। এ ঘটনায় উপজেলার প্রতিটি ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে রোগ নির্ণয়ের পরীক্ষা নিরীক্ষায় যাতায়াতকারী নারী রোগীদের নিরাপত্তা নিয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। কৌশলে নারী রোগীকে ধর্ষনের ঘটনা প্রকাশ হওয়ার পর থেকে লম্পট এক্সরে টেকনিশিয়ান পলাতক রয়েছে।

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার সদর ইউনিয়নের পাহাড়ী ডিমাই এলাকার স্বামী পরিত্যাক্তা এক মহিলা (৪০) গত ১৮ আগস্ট ডাক্তারের উপদেশ মতো খ/ঝ ংঢ়রহব(খধসনড় ঝবপৎধষ ঝঢ়রহব) এক্স-রে করাতে শহরের সুরমা ডায়াগনস্টিক সেণ্টারে যান। এক্স-রে ল্যাবরেটরিতে গেলে টেকনিশয়ান গৌছ উদ্দিন (১৯) জানায় স্বামী সাথে রয়েছেন কি-না, এ ধরনের পরীক্ষার পূর্বে যৌন মিলন করতে হয়। স্বামী সাথে নেই জানালে লম্পট টেকনিশিয়ান গৌছ ফুসলিয়ে মহিলাকে ধর্ষন করে। গত ২১ আগস্ট (শুক্রবার) সুরমা ডায়াগনস্টিক সেণ্টারে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসককে এক্স-রে রিপোর্ট দেখাতে গিয়ে রোগীনি সংশ্লিস্ট চিকিৎসককে ধর্ষনের ঘটনাটি অবহিত করেন। চিকিৎসক রোগীনীর অভিযোগ শুনে ডায়াগনষ্টিক সেণ্টারের পরিচালক ওলিউর রহমানকে বিষয়টি জানান এবং তাকে পুলিশের কাছে অভিযোগ করার পরামর্শ দেন। ডাক্তারের পরামর্শ মতো ঐ মহিলা বিষয়টি থানায় জানালে পুলিশ ডায়াগনস্টিক সেন্টারে গিয়ে ঘটনার প্রাথমিক তদন্ত করেন। এরপর অদৃশ্য কারনে পুলিশ আর অগ্রসর হয়নি। মামলা না করতে চাপ প্রয়োগ করে সম্ভ্রমহানির বিষয়টি অত্যন্ত গোপন রেখে এলাকার ইউপি সদস্য সৈয়দ লুৎফুর রহমান মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে সালিশে ঘটনাটি মীমাংসা করেন। সম্ভ্রম হারানো নারীকে ওই ইউপি সদস্য তার সম্ভ্রমের দাম বাবত দুই দফায় ২৭ হাজার টাকা দেন বলে সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে।

সুরমা ডায়াগনষ্টিক সেন্টারের পরিচালক ওলিউর রহমান জানান, এক্স-রে থিয়েটারে কোন মহিলা কর্মী নেই। তাই টেকনিশিয়ান গৌছ উদ্দিন নিজ হাতে মহিলার কাপড় খুলে দিয়েছিল। তবে ডাক্তার ও মহিলার কাছ থেকে এক্স-রের নামে কৌশলে ধর্ষনের অভিযোগ জানার পর গৌছকে তিনি চাকুরিচ্যুত করেছেন।

বিষয়টি সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট ইউপি সদস্য সৈয়দ লুৎফুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, শুনেছেন ঘটনাটি মীমাংসা হয়ে গেছে। টাকা প্রদানের বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন।
থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান জানান, ঘটনাটি সম্পর্কে তিনি লিখিত কোন কিছু পাননি। তবে বিভিন্ন মাধ্যমে অনৈতিক এ ঘটনাটি শুনে তিনি এসআই কামালকে সুরমা ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে পাঠিয়ে প্রাথমিক খোঁজখবর নেন।


(এলএস/এসসি/অঅগস্ট৩১,২০১৫)