গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি :গোপালগঞ্জকে অশিক্ষা আর কু-সংস্কারের হাত থেকে যিনি মুক্ত করেছেন, দিয়েছেন শিক্ষার আলো, সেই ব্যক্তিটিকে এখানকার মানুষ ভুলতে বসেছে। সেই সেন্ট মথুরানাথ বসুর ১১৪ তম মৃত্যু বাষির্কী ২রা সেপ্টেম্বর। তার সমাধী সৌধটিও আজ অবহেলিত। যদিও খ্রীষ্টান ফেলোশিপ নামে একটি সংগঠন এ দিনটি পালনের উদ্যোগ নিয়েছে এবার। আলোচনা সভা ও নানা অনুণ্ঠান পালন করবে তারা।
গোপালগঞ্জের পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠীকে অন্ধকার থেকে আলোয় নিয়ে আসতে সেন্ট মথুরানাথ বসুর ভুমিকা ছিল অপরিসীম। মথুরানাথ ছিলেন এ অঞ্চলের শিক্ষার অগ্রদূত, সমাজ সংস্কারক ও ভাটির মানুষের আশার আলো।

প্রায় দেড়’শ বছর আগে এ অঞ্চলটি ছিল জলাভূমি ও প্লাবণ এলাকা। আদিবাসীদের প্রায় সবাই ছিল নিম্ন বর্ণের হিন্দু সম্প্রদায়ের লোক। এরা সবাই ছিল গরীব ও অশিক্ষিত। দশ গ্রামের মধ্যে নাম স্বাক্ষরকারী কাউকে পাওয়া যেত না। অতিদরিদ্র, অনুন্নত ও অশিক্ষিত মানুষের মুক্তির বার্তা পৌঁছে দিতে কলকাতার ভবানীপুরের লন্ডন মিশনারী উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষকতার চাকরী ছেড়ে ১৮৭৪ সালের ফেব্র“য়ারীতে প্রথমে নৌকা যোগে গোপালগঞ্জ পৌঁছান। শুরু করেন নিরক্ষর মানুষকে জাগিয়ে তোলার কাজ। গড়ে তোলেন শিক্ষাঙ্গণ, ভজনালয়, কোর্ট, পোষ্ট অফিস, ব্যাংক, হাসপাতাল ও কৃষি খামার। অসহায় ও দরিদ্র মানুষের পাশে থেকে হয়ে ওঠেন তাদের বন্ধু।

মথুরানাথ বসু এ অঞ্চলের শিক্ষার আলো বঞ্চিত ও কুসংস্কারাচ্ছন্ন জনগোষ্ঠীর মধ্যে জ্ঞানের অর্ণিবাণ শিখা প্রজ্বলিত করেন। রেভারেন্ড জে এল সরকারের বাসভবনের কাছে ছেলেদের জন্য তিনি প্রথম একটি পাঠশালা স্থাপন করেন। পাঠশালাটি পরে প্রাইমারী মিশন থেকে হাইস্কুলে উন্নিত করা হয়। তারঁ প্রতিষ্ঠিত এই মিশন স্কুল থেকেই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এন্ট্রান্স পাশ করেছিলেন।
এই মহান পুরুষ ১৯০১ সালের ২রা সেপ্টম্বর ৫৮ বছর বয়সে পরলোক গমন করেন। কিন্তু, যে মানুষটির আপ্রাণ চেষ্ঠায গোপালগঞ্জ শহরের বিকাশ; সেই মহাপ্রান সেন্ট মথুরানাথের নাম আজ গোপালগঞ্জ বাসীর কাছে বিস্মৃত প্রায়। নতুন প্রজন্ম তাঁর কথা জানে না।

গোপালগঞ্জ জেলা উদীচীর সভাপতি মোঃ নাজমুল ইসলাম বলেছেন, এ মহান পুরুষ গোপালগঞ্জের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সংস্কৃতির ও অবকাঠামোর উন্নয়ণ কাজ করে গেছেন। তাই সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি সংগঠন গুলোরও তাঁর জন্ম ও মৃত্যুদিবস পালনে এগিয়ে আসা উচিত।
সমাজ সেবক যিহিস্কেল বালা বলেছেন, এই মহান পুরুষের স্মৃতি টিকিয়ে রাখতে আমাদের সকলকে এগিয়ে আসা উচিৎ। এতে নতুন প্রজন্ম তাঁর যে অবদান ছিল তা জানতে পারবে।

গোপালগঞ্জ খ্রীষ্টান ফেলোশিপের সহ-সভাপতি পালক অনুকুল বিশ্বাস বলেন, এই মহান পুরুষের সমাধী সৌধটি আজও অবহেলায পড়ে রয়েছে। তবে এ বছর খ্রীষ্টান ফেলোশিপের উদ্যোগে মৃত্যুদিবস পালন উপলক্ষে সমাধী সৌধে মাল্যদান, শোক র‌্যালী, প্রার্থনা ও আলোচনাসভার আয়োজন করা হয়েছে।

এ কৃত্তিমান পুরুষের জন্ম ও মৃত্যুদিন যাতে সরকারীভাবে পালন করা হয় এ দাবী এ অঞ্চলের মানুষের।

(এমএইচএম/এসসি/সেপ্টেম্বর০১,২০১৫)