অনিলা-০১
অনিলা, তুমি ভাবতেই পারবে না;
যে শহরে তুমি ফেলে যাওয়া দিনগুলোতে নিয়ন আলো দেখতে পাওনি।
সে শহর আজ কেমন সেজে আছে!
সে শহরে আজ শুধু আলোর ঝলকানি ই দেখতে পাচ্ছি।
এত্তো আলো এই শহরে এখন, অথচ রোজ মোমবাতি জ্বেলে প্রার্থনা ঘরে যেতাম আমরা।
আমাদের যখন সেই তুলসী তলায় কেত্তন হতো;
দেখতাম তুমি তখন সুর করে কোরআনের বাণী আওরাচ্ছ।

পাশাপাশি আমরা তবুও কি যেন একটা দেয়াল!

বৃষ্টির দিনে মোমের আলো পাশে রেখে ছায়াবাজি খেলতাম।
ঘরে তখন মাঝে মাঝে গ্যাসের বাতি জ্বলত।
তখনও বিদ্যুৎ আসেনি এই শহরে, আমাদের দিনগুলো তখনও যান্ত্রিক হয়ে উঠেনি।
আমরা তখনও বিষাদের ছায়া গায়ে মাখতে শিখিনি।
তখন অব্দি আমরা ভাবতাম এক সাথেই আমাদের দিন গুজরান হবে সকলের।
কিন্তু, হয়ে উঠেনি আর আমরা এলোমেলো হয়ে গেছি খুচরা পয়সার মতো।


অনিলা-০৪
পঁচিশ বছর পর পা রাখলাম এই শহরে।
পঁচিশটি বছর তোমার সাথে দেখা নেই।
অথচ এই শহরের কান্তনগর, ছিমছাং নদী, নবীন চত্বর, দোয়েল মাঠ কত কিছুতেই জড়িয়ে ছিলাম আমরা। হয়তো আমাদের সেই জড়িয়ে থাকা স্থান গুলোতে আজকাল অন্য কেউ কেউ জড়িয়ে থাকে, হয়তো এর পরও থাকবে
ভাবনায় উঠে আসে ওদের মনেও কি কথার ঘাটে অজানা কোন অভিমান জমে?
যেমনটা জমেছিল আমার কিংবা আমাদের মাঝে।
হয়তো অজানা অভিমান আমাদের সবাইকে কষ্ট দিয়েছিলো আর তাই বিমুখ হয়েছিলাম এ শহরের।
হয়তো কান্তনগরে পা পড়তো না আমার;
কিন্তু হায় মন বড়ই বিচিত্র! অভিমান কতদিন ধরে রাখা যায়?
শেষ পর্যন্ত ফিরতেই হলো।

অনিলা তোমার মনে পড়ে; তুমি কখনো চিঠিতে লিখতে না তোমার কখনো মন খারাপ হয় কি-না?
আজকাল আমারও আর মন-টন খারাপ হয় না।
এই পঁচিশ বছরে কত ঘাটের জল দেখলুম তাতে কত রং যে বয়ে গেল।
এখনও মনে হয় তুমি ঠিক আগের মতো রয়ে গেছ। মাঝখান থেকে হলাম আমি ঋণী
তুমি চিঠি লিখেছো ছয়টি আর আমি পাঁচটি। এখনো একটি চিঠি তোমার পাওনা রয়ে গেছে’।
আমি চিরকালই তোমার কাছে ঋণী রয়ে গেলাম অনিলা?
তোমার মনে পড়ে অনিলা পঁচিশ বছর আগে এই ছিমছাং নদীর তীরে তুমি দাঁড়িয়েই বলছিলে এই নদী যে দিন সাঁতরে ও পাড়ে যেতে পারবো সেদিন নাকি আমি রাজা হবো!
কথাটা মনে হলে এখনো হাসি পায় রাজা কি আর কেউ এমনি এমনি হয়!
তখন ছোট ছিলে কত কি-যে বলতে!
তুমি হয়তো জানো না আমাকে নদী পাড়ি দিতে হয়নি, আমি এমনিতেই রাজা হয়ে গেছি-তবে সেটা মনে মনে আমার রাজত্ব শুধু কাগজে কলমে।

তোমার শেষ চিঠিতে তুমি লিখেছিলে কখনো যেন মন খারাপ না করি তাহলে লেখায় সেটা ফুটে উঠবে;
নিজে কাঁদবো অন্যকেও কাঁদাবো-এটা ঠিক না? চোখের জলটা বৃষ্টির পানি নয় যে মাটিতে মিশে গেলে সেটা জলরাশি হবে; ওটা কপোল বেয়ে বেয়ে ভেজা পথ এঁকে দেবে।
ক্ষুদ্রকণা কয়েক ফোটাতে শুধু কষ্টই বাড়ে।
তারপর থেকে আমি আর মন খারাপ করিনি; কিন্তু আজ কেন যেন মনটা বড্ড খারাপ হয়ে যাচ্ছে!

আমি যত দূরেই ছিলাম তোমাকে আমার চোখের মধ্যেই রেখেছিলাম।
আজ তোমার খুব কাছে চলে এসেছি অনি।
মনে হচ্ছে এই বুঝি তুমি সামনে এসে দাঁড়ালে!
যদি সেটা সত্যি হয় তারপর কি যে হবে বলতে পারিনে!