বরিশাল প্রতিনিধি: বরিশালের আগৈলঝাড়া থেকে তিল প্রক্রিয়াজাত করে বিভিন্ন দেশে রপ্তানী করা হচ্ছে।

তিল দিয়ে তৈরী করা হয় ফাষ্ট ফুড আইটেমে সামগ্রীসহ বিভিন্ন প্রকারের খাবার। এছাড়াও তিলের সুস্বাদু নাড়ু ও তিলের খাজা সবার কাছেই মজাদার খাবার হিসেবে পরিচিত। বাংলাদেশের তিল এখন দেশের বাজার ছাড়িয়ে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা হচ্ছে। ফলে দেশ আয় করছে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা।

জানা গেছে, বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার দাসেরহাট নামক স্থানে বরিশালের একমাত্র তিল প্রক্রিয়াজাতকরণ মিল উদ্ধোধনের পর থেকে চীন, কোরিয়া, ভিয়েতনাম সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রক্রিয়াজাত তিল রপ্তানি করা হচ্ছে।

মিল মালিক সুশান্ত মন্ডল ও বজলুর রহমান জানান, দেশের উত্তরাঞ্চলের জেলা মাগুরা থেকে মিলের শ্রমিকদের আনা হয়েছে। তাদের মিলে বর্তমানে সার্বক্ষণিক কাজ করছেন অন্তত ১৫ জন শ্রমিক। তারা ভোলা, পটুয়াখালী, গলাচিপা, ঝালকাঠি, আমতলী, ক্ষেপুপাড়া, গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারীপুরসহ দেশের দক্ষিন পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকা থেকে পাইকারিভাবে তিল সংগ্রহ করেন। সংগৃহিত তিল তাদের মিলে যান্ত্রিকভাবে পরিশোধন করে বিশেষ প্রক্রিয়ায় বাজারজাত করণের উপযোগী করা হয়। এজন্য শ্রমিকদের মজুরি হিসেবে দেয়া হয় বস্তাপ্রতি ৪০ টাকা। মিলের ১৫ জন শ্রমিক গড়ে প্রতিদিন ৩শ ৫০ বস্তা তিল বাজারজাতকরণের উপযোগী করে প্রস্তুত করতে পারে। প্রতিদিন একজন শ্রমিক ৯শ ৩৩ টাকা আয় করছে।

মিলে আমদানিকৃত বিভিন্ন প্রজাতির তিলের মধ্যে কালো তিল, লাল তিল ও সাদা তিল রয়েছে। এর মধ্যে কালো তিলের চাহিদা সবচেয়ে বেশি, ফলে এর দামও পাওয়া যায় বেশী।

মিলের ব্যবসায়ি পটুয়াখালী জেলার দশমিনা থানার বেতাগী গ্রামের সুমন জানান, এক বছর হল তিনি মিলের সাথে ব্যবসা করছেন। বছরের জুন মাস তাদের তিল আহরণের সর্বোত্তম সময়। এর আগে বছরের মার্চ থেকে মে এই তিন মাস তাদের কাজ বন্ধ থাকে। কারণ এ সময়ে বাজারে তিলের তেমন আমদানি না থাকায় জুন মাস থেকে বাজারে তিলের আমদানি শুরু হয়। তারা বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে ও হাট বাজার থেকে তিল ক্রয় করে আনেন। গ্রাম বা হাট বাজার থেকে প্রতি মন তিল ১৭শ থেকে ১৮শ টাকায় তারা ক্রয় করেন। বাজারে তেলের দাম বেশি হলে তিলের দামও বেড়ে যায়। তারা মনপ্রতি ৫০ থেকে ১শ টাকা লাভে ওই তিল মিলে বিক্রি করেন। তিল প্রক্রিয়াকরণের কাজ শেষ হলে ট্রাক যোগে ঢাকা চলে যায়। সেখান থেকে রপ্তানীর জন্য নিয়ে যাওয়া হয় চট্রগ্রামে। জাহাজে করে পাঠিয়ে দেয়া হয় চীনসহ বিভিন্ন দেশে।

বিদেশে ফুডআইটেম হিসেবেই তিলের সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয়ে আসছে। ফাষ্ট ফুড আইটেম ছাড়াও তেল হিসেবেও বিদেশে রয়েছে তিলের ব্যাপক চাহিদা।

বিদেশে তিল রপ্তানীকারক প্রতিষ্ঠান স্যামস্ কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ জানান, বরিশাল ডাল ও অয়েল মিল থেকে তারা অর্ডারকৃত তিল প্রতিবস্তা ২ হাজার টাকা দরে কিনে নেন। তারা এই তিল বিভিন্ন দেশের চাহিদা অনুয়ায়ী রপ্তানি করেন।

এ সময় তারা আরও জানান, দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলসহ উত্তরাঞ্চলের খুলনা, কুষ্টিয়া, পঞ্চগর থেকেও তিল সংগ্রহ করে বিদেশে রপ্তানী করেন তারা। বরিশাল ডাল ও অয়েল মিল ২ বছর যাবৎ তিল রপ্তানী করে শ্রমিকদের কর্মসংস্থান করে শ্রমিকদের আর্থিক স্বচ্ছলতা বাড়িয়ে দেয়ার পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে বিশেষ ভূমিকা পালন করে আসছে।

(টিবি/এলপিবি/সেপ্টেম্বর ৯, ২০১৫)