নিউজ ডেস্ক : আজ ১৭ সেপ্টেম্বর মহান শিক্ষা দিবস। ১৯৬২ সালের এই দিনে পাকিস্তানি শাসন, শোষণ ও শিক্ষা সংকোচন নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে শহীদ হন ওয়াজিউল্লাহ, গোলাম মোস্তফা, বাবুলসহ নাম না-জানা অনেকেই। তাদের স্মরণে প্রতিবছর এই দিনকে শিক্ষা দিবস হিসেবে পালন করা হয়।

বাষট্টিতে এ আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল অবৈতনিক প্রাথমিক শিক্ষা, গণমুখী শিক্ষা প্রসার, শিক্ষাক্ষেত্রে বৈষম্য-বঞ্চনা নিরসন, সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের স্বার্থ সংরক্ষণের লক্ষ্যে। ১৯৪৭-৪৮ সালে পূর্ব পাকিস্তানে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ছিল ২৯ হাজার। সাত বছর পর তা ২৬ হাজারে নেমে আসে।

পশ্চিম পাকিস্তানের চিত্র ছিল বিপরীত। সেখানে শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বাড়ছিল। ১৯৬২ সালে প্রকাশ হয় শরীফ শিক্ষা কমিশন রিপোর্ট। ছাত্র সমাজ এর বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলে। ছাত্রলীগ ও ছাত্র ইউনিয়নের নেতাকর্মীরা আন্দোলন সংগঠিত করেন। এক পর্যায়ে আন্দোলনের কর্মসূচিতে আইয়ুব খানের সামরিক শাসনবিরোধী সক্রিয় উপাদান যুক্ত হয় ও তা সরাসরি পৌঁছে যায় বিশ্ববিদ্যালয় অঙ্গনে।

ছাত্র ইউনিয়নসহ বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন আইয়ুবের এই শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। তারা দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলার লক্ষ্যে ১৯৫৯ সালে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনকে নিয়ে একুশ উদযাপনের প্রস্তুতি গ্রহণ করে। ১৯৬০ ও ১৯৬১ সালে এ ধরনের উদ্যোগ অব্যাহত থাকে। ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্ব-স্ব দাবির ভিত্তিতে জুলাই-আগস্ট মাস জুড়ে আন্দোলন চলতে থাকে।

এ আন্দোলন কর্মসূচির ধারাবাহিকতায় ১০ সেপ্টেম্বর সচিবালয় ঘেরাও কর্মসূচি ঘোষণা ছিল। পরবর্তী সময়ে আন্দোলনকে বেগবান করার জন্য ১০ সেপ্টেম্বর সচিবালয় ঘেরাও কর্মসূচি বাতিল করে ১৭ সেপ্টেম্বর দেশব্যাপী হরতাল কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেয়া হয়। ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতৃত্বে ১৭ সেপ্টেম্বর দেশব্যাপী হরতাল পালিত হয়। ছাত্রদের সঙ্গে সাধারণ মানুষও পিকেটিংয়ে অংশ নেয়। ওই দিন সকাল ১০টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে হাজার হাজার মানুষ সমাবেশে উপস্থিত হন। সমাবেশ শেষে মিছিল বের হয়।

জগন্নাথ কলেজে গুলি হয়েছে- এ গুজব শুনে মিছিল দ্রুত নবাবপুরের দিকে যাত্রা শুরু করে। কিন্তু হাইকোর্টের সামনে পুলিশ এতে বাধা দেয়। তবে মিছিলকারীরা সংঘাতে না গিয়ে আবদুল গনি রোডে অগ্রসর হয়। তখন পুলিশ মিছিলের পেছন থেকে লাঠিচার্জ, কাঁদানে গ্যাস ও গুলিবর্ষণ করে। কেবল সরকারি হিসাবেই বলা হয়েছে, সেখানে ৫৯ জন গ্রেফতার, ৭৩ জন আহত ও ১ জন শহীদ হয়েছিলেন। তবে ৩ জন শহীদ হয় বলে জানা যায়। ওই দিন শুধু ঢাকা নয়, সারা দেশে মিছিলের ওপর পুলিশ হামলা চালায়। এদিন টঙ্গীতে ছাত্র-শ্রমিক মিছিলে পুলিশের গুলিতে সুন্দর আলী নামে এক শ্রমিকেরও হত্যার খবর রয়েছে।

(ওএস/এএস/সেপ্টেম্বর ১৭, ২০১৫)