বিপাকে নিজাম
স্টাফ রিপোর্টার : নিজাম উদ্দিন হাজারী, অল্প সময়ে বহু ঘটনার নায়ক। ছদ্মবেশী অস্ত্র মামলায় দশ বছর সাজাপ্রাপ্ত এ আসামি একের পর এক ফেনী পৌরসভার মেয়র, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সর্বশেষ ফেনী-২ আসন থেকে জাতীয় সংসদ সদস্যসহ বহু সম্মানিত আসনে রয়েছেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, অস্ত্র মামলায় দুই বছর ১০ মাস কম সাজা খেটেই কারাগার থেকে বেরিয়ে আসা, তিন বছরের ব্যবধানে ৩২ গুণ টাকা বাড়া, একরাম হত্যাকাণ্ডে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগ, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি নির্বাচিত হয়ে ৫ কোটি টাকার বিনিময়ে জাপার কাছে মেয়র পদ বিক্রির অভিযোগ, জয়নাল হাজারীর সঙ্গে নতুন বিবাদে জড়িয়ে এখন চোখে অন্ধকার দেখছেন। এত অল্প সময়ে নেতা বনে যাওয়ার পাশাপাশি এতসব অপকর্ম ঘাড়ে নিয়ে নিজাম হাজারী বিপাকে পড়েছেন। এমন বক্তব্য খোদ দলের সিনিয়র নেতাদের।
একাধিক সূত্রে জানা যায়, দুই বছর ১০ মাস কম সাজা খেটেই কারাগার থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলেন ফেনী-২ আসনের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারী। অস্ত্র আইনের একটি মামলায় তার ১০ বছর সাজা হয়েছিল। জালিয়াতির আশ্রয় নেয়ায় তার বিরুদ্ধে নতুন করে মামলাও হতে পারে।
আইনজীবীরা মনে করেন, এ জালিয়াতির ঘটনা সত্য হলে নিজাম হাজারীকে আবার কারাগারে ফিরে যেতে হবে।
সূত্র জানায়, ২০০০ সালের ১৬ আগস্ট অস্ত্র আইনের ১৯(ক) ধারায় ১০ বছর এবং ১৯(চ) ধারায় সাত বছরের কারাদণ্ড হয় নিজাম হাজারীর। চট্টগ্রাম নগরের ডবলমুরিং থানায় করা মামলায় চট্টগ্রামের চতুর্থ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালত ও বিশেষ ট্রাইব্যুনাল তাকে এ সাজা দিয়েছিলেন। উভয় দণ্ড একসঙ্গে চলবে বলে রায়ে বলা হয়। অর্থাৎ ১০ বছর সাজা ভোগ করবেন নিজাম হাজারী।
নির্বাচন কমিশনে নিজাম হাজারীর জমা দেয়া হলফনামায় জানা যায়, তিন বছরের ব্যবধানে ফেনী-২ আসনের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারীর শুধু টাকা বেড়েছে ৩২ গুণ। একই সঙ্গে বেড়েছে তার স্ত্রীর সম্পত্তিও। এ সময়কালে তার স্ত্রী পাঁচটি ফ্ল্যাট ও রামগড়ে ১৫ একর জমির মালিক হয়েছেন।
পৌর নির্বাচনের আগে নির্বাচন কমিশনে জমা দেয়া হলফনামায় নিজাম হাজারী নিজের এবং স্ত্রীর নামে থাকা সম্পদের বিবরণ দেন। তাতে দেখা যায়, ওই সময়ে নিজাম হাজারীর নামে ব্যাংকে জমা টাকার পরিমাণ ১০ লাখ আর স্ত্রীর নামে সঞ্চয়পত্র/স্থায়ী আমানত ছিল এক কোটি টাকা। তখন তার কাছে নগদ টাকা ছিল ৫০ হাজার, স্ত্রীর কাছে ছিল ৫০ হাজার টাকা। ২০১১ সালের ১৮ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ফেনী পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হন নিজাম হাজারী। এর তিন বছরের মাথায় তিনি আওয়ামী লীগ থেকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, নিজাম হাজারী ফেনী পৌরসভায় মেয়র থাকাকালীন অবস্থায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ফেনী-২ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ায় তাকে মেয়র পদটি ছেড়ে দিতে হয়েছে। গত ৫ এপিল ফেনী পৌরসভার উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে কোনো প্রার্থী দেয়া হয়নি। তবে জেলা আওয়ামী লীগ মহাজোট থেকে প্রার্থী দিয়েছেন জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ও স্টার লাইন গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হাজী আলা উদ্দিনকে।
পৌর আওয়ামী লীগের এক নেতা জানান, মোটা অংকের বিনিময়ে হাজী আলা উদ্দিনের কাছে পদটি ছেড়ে দেয়া হয়েছে। এমনকি কেন্দ্র দখল করে হাজী আলা উদ্দিনকে নির্বাচিত করা হয়েছে। এ নিয়ে পুরো জেলায় আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে এক ধরনের ক্ষোভ দেখা গেছে। তবে কেউ মুখ খুলেনি নিজাম হাজারীর ভয়ে।
অপরদিকে ২১ মে নিহত একরামের লাশ দাফন শেষে ফুলগাজী যুবলীগ, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক নিজাম হাজারী এমপির ফাঁসি দাবি করায় আলোচনায় নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। নিজাম হাজারীর ২ বছর কম জেল খাটা নিয়ে পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হলে এর জন্য একরামকের দিকে সন্দেহের তীর ছিল নিজাম হাজারীর। যদিও নিজাম হাজারী বলছেন একরাম আমার ছোট ভাইয়ের মতো। তার সঙ্গে কোনো মনমালিন্য হয়নি তার।
সর্বশেষ ২২ মে একরাম হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তাকে জড়িয়ে বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ায় সংবাদ প্রকাশিত হওয়ায় সংবাদ সম্মেলন করেছেন তিনি। বৃহস্পতিবার দুপুরে ফেনীর একটি রেস্টুরেন্টে ফেনী প্রতিনিধির এক প্রশ্নের উত্তরে নিজাম হাজারী বলেন, জয়নাল হাজারীকে রিমান্ডে নিলে প্রকৃত ঘটনা বেরিয়ে আসবে। এরপর থেকে নিজাম হাজারীরের বিরুদ্ধে আধাজল খেয়ে নেমেছেন জয়নাল হাজারী। ঘটনার কয়েক ঘণ্টা পর বিভিন্ন ইলেকট্রনিক্স মিড়িয়ায় সাক্ষাৎকার দেন জয়নাল হাজারী। সাক্ষাৎকারে জয়নাল হাজারী সংসদ সদস্য নিজাম হাজারীর যতসব কুকীর্তি আছে সবই তুলে ধরেন।
(ওএস/এটিআর/মে ২৫, ২০১৪)