চট্টগ্রাম প্রতিনিধি : চট্টগ্রামে উড়াল সেতু নির্মাণের ফলে যানজট নিরসন হয়নি বরং যানজট ও জনগণের দুর্ভোগ আরও বাড়াচ্ছে বলে দাবি করেন নগর পরিকল্পনাবিদরা। সম্ভাব্যতা যাচাই ছাড়া নির্মাণের ফলেই এমনটি হচ্ছে বলে মনে করেন তারা।

রবিবার দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরাম আয়োজিত ‘চট্টগ্রামের ট্রাফিক সমস্যা ও ফ্লাইওভার নির্মাণের যথার্থতা’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি করেন তারা।

অনুষ্ঠানে বক্তরা বলেন, উড়াল সেতু নির্মাণের নামে এসব প্রকল্পে যে হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করা হচ্ছে এর সিকি ভাগ টাকাও যদি ট্রাফিক ম্যানেজমেন্টে খরচ করা হয় তাহলে নগরীর যানজট নিরসন হয়ে যাবে।

প্রকৌশলী সুভাষ চন্দ্র বড়ুয়া বলেন, চট্টগ্রাম নগরজুড়ে যানজট নিরসনের নামে উড়াল সেতু নির্মাণের মাধ্যমে মানুষকে ধোকা দিয়ে চমক সৃষ্টি করা হচ্ছে। এসব উড়াল সেতু নির্মাণের পূর্বে কোনো ধরনের সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়নি। বিশ্বের কোথাও ফিজিবিলিটি স্টাডি ছাড়াই এবং সংশ্লিষ্ট পেশাজীবীদের সাথে মতবিনিময় ছাড়া কোনো প্রকল্প পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হয় না। কিন্তু চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (চউক) এর কোনটিই করেনি। তারা একটি উড়াল সেতু নির্মাণ করে যানজট নিরসনের নামে শুধু টাকা অবচয় করেছে। এলাকাবদ্দারহাট য় নির্মিত উড়াল সড়কটিতে খুব অল্প পরিমাণে যানবাহন চলাচল করে। এর মধ্যে আরও একটি উড়াল সেতু নির্মাণের জন্য টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে। যার একটিও চট্টগ্রামবাসীর সার্বিক কল্যাণে আসবে না।

তিনি আরও বলেন, একটা জংশনে আট হাজার থেকে ১০ হাজার যানবাহন চলাচল করলে চ্যানেলাইজড জংশন তৈরি করতে হবে। এর বেশি চলাচল করলে তখন ফ্লাইওভাররের কথা চিন্তা করা যেতে পারে। কিন্তু সিডিএ’র করা নিজস্ব সমীক্ষা অনুযায়ী বহদ্দারহাট মোড়ে প্রতি ঘণ্টায় যানবাহন চলাচল করে ২ হাজার ৭৯১টি, জিইসি মোড়ে প্রতি ঘণ্টায় যানবাহন চলে ৪ হাজার ৯০৪টি ও মুরাদপুর মোড়ে ২ হাজার ৭৭০টি।

চট্টগ্রাম নগরের কোনো জংশনে উড়াল সেতু নির্মাণের মতো সমপরিমাণ যানবাহন চলাচল করে না। এরপরও কার স্বার্থে এসব উড়াল সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে সেটাই খতিয়ে দেখা উচিত।

অধ্যাপক সিকান্দার খান বলেন, ভোট পাওয়ার আশায় জনগণকে ধোকা দিয়ে এসব চমক সৃষ্টি করা হচ্ছে। যা কোনো কাজে আসবে না। এসব বিকৃতি রাজনৈতিক চর্চার মাধ্যমে দেশিয় সম্পদের অপব্যবহার করা হচ্ছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

স্থপতি জেরিনা হোসেন বলেন, ২০১৫ সাল পর্যন্ত করা মাস্টার প্ল্যানে কোথাও উল্লেখ নেই যে, উড়াল সেতু নিরসন করা হলে যানজট নিরসন হবে। তারপরও একটি সুন্দর শহরকে ধীরে ধীরে নষ্ট করে দেওয়ার জন্য এ কাজ এগিয়ে চলছে।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরামের সহ-সভাপতি প্রকৌশলী এ বি এম এ বাসেত, স্থপতি বিধান বড়ুয়া, কাজী সামসুদ তৌহিদ, শিক্ষক সুরাইয়া ইসলাম, নির্বাহী সদস্য প্রকৌশলী দেলোয়ার মজুমদার ও শাহরিয়ার খালেদ।

উল্লেখ্য, গত ১৫ মে মুরাদপুর থেকে লালখান বাজার ৫.২ কিলোমিটার উড়াল সেতু নির্মাণ কাজের টেন্ডার উন্মুক্ত করে কাজ শুরুর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এছাড়া শাহ আমানত সেতুর উত্তর দিক থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত ১৮ কিলোমিটার দীর্ঘ উড়াল সড়ক নির্মাণের প্রক্রিয়াও দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে।

(ওএস/এস/মে ২৫, ২০১৪)