পার্বতীপুর (দিনাজপুর) প্রতিনিধি: বিন্দু বিন্দু শিশির জমতে শুরু করেছে ঘাসের ডগায়, ধানের শীষে। কার্তিক-অগ্রহায়ন মাস মিলে যড়ঋতুর চতুর্থ ঋতু হেমন্ত। শরৎকালের পর এই ঋতুর আগমন।

তাই প্রকৃতিতে একটু একটু করে অনুভূত হচ্ছে শীতের আমেজ। গ্রাম বাংলায় এরই মধ্যে পড়তে শুরু করেছে হালকা শীত। ঠিক যেন শীতের পরশ নিয়ে এল হেমন্ত।

দেশের উত্তরাঞ্চলের জেলা দিনাজপুরে পার্বতীপুরে শুরু হয়েছে শীতের আমেজ। বিকাল থেকেই শীতল হাওয়া আর সন্ধ্যার পর পরই কুয়াশা ঝরতে শুরু করেছে। মধ্য রাতের পর টিনের চালা থেকে পড়ছে হালকা বৃষ্টির মত পানি। সকালে গাছ গাছালিতে জমে থাকছে শিশির । সূর্য উঠার অনেক পর পযন্ত জমে থাকা শিশির দেখা যাচ্ছে। এদিকে শীতের প্রস্তুতি হিসেবে অনেকেই পুরনো শীত বস্ত্র ঠিক ঠাক করে নিচ্ছেন। আবার অনেকে নতুন করে লেপ-তোষক তৈরী করে নিচ্ছেন। প্রত্যন্ত অঞ্চলে নিম্ন আয়ের মানুষের শীত নিবারণের একমাত্র অবলম্বন কাঁথা। এসব পরিবারের নারী সদস্যরা এখন কাজের ফাঁকে তাদের পুরনো কাঁথা মেরামত আর ছেঁড়া শাড়ি-লুঙ্গি দিয়ে নতুন কাঁথা তৈরীতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন।

হিমালয়ের খুব কাছের কয়েরটি জেলার মধ্যে দিনাজপুর, তাই কাছের জেলাগুলোর মধ্যে দিনাজপুরে জেলায়ও শীত নামে বেশ আগে ভাগেই। এবারও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। মধ্য আশ্বিনের পর থেকেই শুরু হয়েছে হালকা কুয়াশা। ক্রমেই তা ভারি হচ্ছে। ক’দিন থেকে সন্ধ্যার পরই শুরু হয়েছে মাঝারি কুয়াশা। ভোর পযর্ন্ত হালকা থেকে মাঝারি কুয়াশার পরিমান বেড়ে যাওয়ায় সকালে সূর্য উঠার পরও জমির আইল দিয়ে হাঁটলে শরীর ভিজে যাচ্ছে। শীষ বের হওয়া আমন ধানের গাছ সূর্য উঠার অনেক পর পর্যন্ত শিশির লেগে থাকছে। এখন দিনাজপুর জেলার পার্বতীপুরে সর্বত্র চলছে শীতকে বরণ করার প্রস্তুতি। শীতের রাতে বিছানায় পরিবারের সদস্যদের উষ্ণ রাখতে সবাই ব্যস্ত লেপ-তোষক মেরামত আর নতুন করে তৈরী করতে।

উপজেলার রাজাবাসর ল্যাম্ব হাসপাতাল বাজারের তুলা ব্যবসায়ী রিয়াজুল ইসলাম জানান, বিভিন্ন হাট-বাজারগুলোতে এসব তৈরীর কারিগরদের কাজের গতি বেড়ে গেছে। তাদের এখন দম ফেলাবার ফুরসত নেই। উপজেলার বিভিন্ন লেপ-তোষক তৈরীর কারিগর ব্যস্ত নতুন লেপ তৈরীতে। কথা বলার সময় নেই তাদের। কয়েক মাস তাদের হাতে কাজ না থাকায় মৌসুম শুরু হওয়ায় দ্রুত কাজ করে তারা বাড়তি টাকা আয় করছেন। আর যাদের এগুলো তৈরীর সার্মথ্য নেই, তারা ব্যস্ত কাঁথা নিয়ে। শীত নিবারণের জন্য এটাই তাদের বড় উপকরণ।

উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকার ঘুরে দেখা গেছে, অনেক নারী ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন তাদের পুরনো কাঁথা নতুন করে সেলাই করতে। বাড়ির পাশে গাছের নিচে বসে রং বেরঙের সুতো দিয়ে তারা তৈরী করছেন নতুন কাঁথা। সারা বছর ব্যবহারের পর ছিড়ে যাওয়া শাড়ি আর লুঙ্গি দিয়ে তৈরী হচ্ছে এসব কাঁথা। অপেক্ষাকৃত উঁচু জমিতে কৃষকরা আবাদ করেছে বিভিন্ন ধরনের শাক-সবজি। শাক-সবজি ইতিমধ্যে হাট-বাজার গুলোতে উঠতে শুরু করেছে। শীতের শাক-সবজির দামও বেশ ভাল। হাসি ফুটেছে কৃষকের মুখেও।

(এএএম/এলপিবি/নভেম্বর ৭, ২০১৫)