মাদারীপুর প্রতিনিধি : মাদারীপুর শহরের এক স্বাধীনতা বিরোধী ভূমিদস্যুর বিরুদ্ধে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে প্রায় সাড়ে ৪ কোটি টাকার সম্পত্তি হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে সংবাদ সম্মেলন করেছেন ওই সম্পত্তির শরীকদার ডিসি ব্রিজ শকুনি এলাকার মৃত দরবেশ খাঁ‘র মেয়ে জাহানারা বেগম নামের এক অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষিকা। সোমবার বেলা ১০টায় মাদারীপুর প্রেসক্লাবে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের উপস্থিতিতে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

সংবাদ সম্মেলনে জাহানারা বেগম লিখিত বক্তব্যে উল্লেখ করেন, আমার চাচাতো ভাই মাদারীপুর ডিসি ব্রিজ এলাকার মজিবর খাঁ একজন স্বাধীনতা বিরোধী কুখ্যাত রাজাকার। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় সে ছিল পীস কমিটির সক্রিয় সদস্য। এই প্রভাবে সে লুটপাট, নারী ধর্ষণ, অপরের সম্পত্তি জবর-দখল, ব্লাকমেইলিংসহ এলাকায় বহু জঘন্য অপরাধ সংঘটিত করেছে।

তার সকল অপকর্মের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড ছিল মালেক হাওলাদার নামে এক রাজাকার। এদের নির্যাতন হতে রেহাই পায়নি সাধারণ মানুষ। এমনকি মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যরাও। স্বাধীনতা অর্জনের পর মুক্তিযোদ্ধারা মজিবর খাঁ‘কে হত্যার উদ্দেশ্যে ধরে নিয়ে যায়। সে সময় মুক্তিযোদ্ধা ওয়াজেদ আলী খান ও আমার ভাই মুক্তিযোদ্ধা ইদ্রিস আলী খাঁনের কারণে সে প্রাণ ভিক্ষা পায়।

অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষিকা জাহানারা বেগম আক্ষেপ করে বলেন- ভুমিদস্য মজিবুর খার পিতা মৃত চাঁন খান, আর আমার পিতা মৃত দরবেশ খান। তারা দুইজন একই বাবার সন্তান। ওই চাঁন খানের চার সন্তান ওই বাড়ির আমার ভাইদের পৈত্রিক জমি সম্পূর্ণ দখল করে বাসবাস করছেন। এমনকি আমার বাবার পৈত্রিক ভিটা দখল করে মুজিবর খান তিনতলা ভবন নির্মাণ করেছে। কিন্তু আমার বাবা মৃত্যুর আগে তো কোন জমি তাদের কাছে বিক্রি করেনি।

তাহলে আমার ভাইয়ের এতিম সন্তানরা কেন ওই বাড়িতে মাঁথা গোজার স্থান পাবে না? আমার ভাইয়ের এতিম সন্তানরা এখন মাদারীপুর শহরের রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়ায়। নিজের টাকায় ভাড়া করা বাড়িতে বসবাস করে কোন রকম রাত কাটায়। অথচ এ ব্যাপারে প্রায় দুই মাস আগে মাদারীপুর পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। কিন্তু ওই অভিযোগের পর ভূমিদস্যরা উল্টো আমাদের নানাভাবে হয়রানি করছে।


সংবাদ সম্মেলনে জাহানারা বেগম আরও বলেন,এই কুখ্যাত রাজাকার মজিবর খাঁ আমার বাবা ও দুই ভাই ইদ্রস আলী খান ও সিদ্দিক খানের মৃত্যুর পর তাদের অসহায় স্ত্রী ও সন্তানদের অংশীদারের প্রাপ্য সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করার গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। সে জাল দলিল তৈরি করে শকুনী মৌজার ১১১ খতিয়ানের ৪৯ দাগের ১একর ২৩ শতাংশ জমির এক চতুর্থাংশ প্রায় সাড়ে ৩১ শতাংশ বাড়ির জমি দখল করে নেয় যার বর্তমান মূল্য প্রায় ৩ কোটি টাকা।

একইভাবে হরি কুমারিয়া মৌজার ১১০ খতিয়ানের ১৭২, ১৭৮, ১৭৯, ১০৬ মোট চার দাগের ১ একর ৫০ শতাংশ জমির মধ্যে ৬৯শতাংশ সম্পত্তি জাল দলিলের মাধ্যমে বিক্রি করে সম্পূর্ন টাকা আত্মসাৎ করেছে। এই সম্পত্তির বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ টাকা। এই কুখ্যাত রাজাকার মুজিবর খাঁ আমাদের বংশের একটি কলঙ্ক। সে নিজেদের শরীক ও ওয়ারিশদের ঠকিয়ে প্রায় সাড়ে ৪ কোটি টাকার সম্পত্তি হাতিয়ে নিয়েছে।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা ওয়াজেদ আলী খান, জাহাঙ্গীর কবির, মুজিবর রহমান হাওলাদার, আলহাজ জাহাঙ্গীর হোসাইন, আলমগীর হোসেন জমাদার, শাহাবুদ্দিন কাজী, আতিয়ার রহমান খান ও সম্পত্তির অংশীদার শিরিন আক্তার, নাসরিন আক্তর এবং এনামুল হক শামীম।

(এএসএ/এএস/নভেম্বর ০৯, ২০১৫)