সাতক্ষীরা প্রতিনিধি:বাংলাদেশে আইএস আছে এই প্রচার দিয়ে অন্য কাউকে আড়াল করা হচ্ছে  উল্লেখ করে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেন, দেশি ষড়যন্ত্রকারীদের চিহ্ণিত করা হলেও বিদেশিদের চিহ্নিত করা হয়নি। বাংলাদেশে ব্লগার ও বিদেশি হত্যায় জামায়াত জড়িত রয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, বিএনপি পিছনে থেকে  তাদেরকে রাজনৈতিক সমর্থন যোগাচ্ছে ।

বিএনপি ও জামায়াতকে উদ্দেশ্য করে মন্ত্রী বলেন ‘ আজ আমাদের দেশের উপর শকুনের নজর পড়েছে। অন্ধকারের শক্তি বিএনপি-জামায়াত চক্র একের পর এক চক্রান্ত ষড়যন্ত্র করে চলেছে। বিদেশে বসে খালেদা জিয়ার জাতীয় ঐক্য ও সংলাপের ডাক প্রত্যাখ্যান করে মেনন বলেন, জঙ্গিবাদী কর্মকা-ের পথ থেকে আগে সরে আসুন। যা চলছে, সেই পুতুল নাচের সুতো সব একখানে। আমাদের কাঁধে লাশের বোঝা চাপিয়ে দিয়ে ঐক্য ও সংলাপ হতে পারে কিনা। যারা সংলাপ চান, আগে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, সাকা-মুজাহিদের ফাঁসি, জামায়াতের সাথে ঐক্যের প্রশ্নগুলো আগে পরিষ্কার করতে হবে। লাশের দায় স্বীকার করা ছাড়া কোনো সংলাপ হবে না। আগে নিজেকে পরিষ্কার করে আসুন, তাহলে সংলাপ হবে। একের পর এক ব্লগার-লেখকদের হত্যা করবেন, নাস্তিক বলে সহিংতার পথ তৈরি করবেন, হত্যার হুমকি দেবেন আর সংলাপ চাইবেনÑ তা হবে না।

ওয়ার্কার্স পার্টি প্রধান কমঃ রাশেদ খান মেনন বৃহস্পতিবার বিকেল তিনটায় সাতক্ষীরা শহীদ আব্দুর রাজ্জাক পার্কের শহীদ মিনার পাদদেশে বাংলাদেশ খেত মজুর ইউনিয়নের দু’ দিন ব্যাপি কেন্দ্রীয় সম্মেলন উপলক্ষে আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন।

অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ খেতমজুর ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কার্যকরী কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ইসহাক শরীফ, সহ সভাপতি সাংসদ অ্যাড. মুস্তফা লুৎফুল্লাহ, খেত মজুর ইরউনিয়নের কার্যকরী কমিটির সদস্য অধ্যাপক নজরুল হক নিলু, জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি হাফিজুর রহমান ভূঁইয়া, ওর্য়ার্কাস র্পাটরি পলটিব্যুরোর সদস্য ইকবাল কবরি জাহদি,জাতীয় কৃষক সমতিরি সাধারন সম্পাদক আমনিুল ইসলাম গোলাপ, ভ’মিহীন নেতা সাংসদ অধ্যাপক ইয়াসিন আলী, খেতমজুর ইউনিয়নের সহ-সভাপতি আনোয়ার হোসেন, নারী মুক্তি সংসদের সাধারন সম্পাদক সালেহা সুলতানা, টেক্সটাইল গামেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি আবুল হোসাইন,খেতমজুর ইউনিয়নের সহ-সাধারন সম্পাদক অ্যাড. নজরুল ইসলাম, বাংলাদেশ কৃষি ফার্ম শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারন সম্পাদক আব্দুল মজিদ, তৈল গ্যাস জাতীয় সম্পদ রক্ষা কমিটির কেন্দ্রীয় নেতা জাহাঙ্গীর আলম ফজলু, , যুবমৈত্রীর সভাপতি মোস্তফা আলমগীর রতন,গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় নেতা মুরশিদ আক্তার নাহারপ্রমুখ।

রাশেদ খান মেনন আরও বলেন, দেশে এক লাখ ১১ হাজার একর বিঘা সরকারি খাস জমি আছে। খাস জমি ভ’মিহীনদের অগ্রাধিকার। খাস জমি পাওয়ার দাবিতে আন্দোলন করে জাহেদার মৃত্যু হয়েছে। জাহেদার মৃত্যুই আন্দোলনের পথ দেখিয়ে গেছে। খাস জমি পেলে ভূমিহীনরা প্রান্তিক কৃষকে পরিণত হতো।

বেসরকারি স্কুল ও কলেজের শিক্ষকরা এমপিও ভুক্তির জন্য আন্দোলন করছে। তাদের বুকের উপর প্লাকার্ডে রঙ দিয়ে লেখা আছে- কুকুর যেমন না খেতে পেয়ে মরে তাদেরকেও সেইভাবে ধুকে ধুকে মরতে হবে কিনা! নবম সংসদীয় নির্বাচনের পর তিনি শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি থেকেও শিক্ষকদের সমস্যা সমাধান করতে পারেননি।

গত এক বছরে আটজন লেখক, প্রকাশক ও ব্লগারকে হত্যা করা হয়েছে উল্লেখ করে মেনন বলেন, অভিজিৎসহ অন্যদের লেখায় কোন ধর্মের উপর আঘাতের কথা ছিল না। অথচ তাদেরকে জীবন দিতে হলো। অথচ এক নেতা বলছেন ধর্মের নামে লিখবেন না। ’৭১ এর পরাজিত শক্তি মুক্ত চিন্তার মানুষদের হত্যা করছে। আমরা তাদেরকে রক্ষা করতে পারছি না। এটা আমাদের স্বীকার করতে হবে। কেউ যদি অবিশ^াসী হয়, তার সে অধিকার রয়েছে। খিজির হায়াত খান তো পীর ছিলেন, তাকে কেন হত্যা করা হলো? দীপনের বাবা ছেলে হত্যার বিচার না চেয়ে তাদের শুভবুদ্ধি উদয়ের কথে বলেছিলেন। এটা একজন আহত পিতার পক্ষে কোন অন্যায় দাবি নয়। বাউলদের লম্বা চুল কেটে দেওয়া হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটা উগ্র ধর্মান্ধদের রাজনীতির ফসল।

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির পর থেকে বিএনপি জামায়াত জোট যে তান্ডব করেছে তারপরও বেগম খালেদা জিয়া বিদেশে বসে জাতীয় ঐক্য এবং সংলাপের ডাক দিচ্ছেন । এতে নাকি সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে । মেনন বলেন বেগম খালেদা জিয়া এ কথা বলে প্রমান করেছেন তারাই সব হত্যার নেপথ্যে রয়েছেন । এখন তারা দেশকে অস্থিতিশীল করে তুলবার চেষ্টা করেছেন।

এখন আর কেউ বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়ির দেশ বলতে পারবে না। আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করে বিদেশে চাল রফতানি করছি। অথচ কৃষক ধান , সবজি ও ফসলের প্রকুত দাম পায় না। ব্যাংক ঋণের জন্য ছাড় পায় না। সরকার কৃষকদের জন্য ১০ টাকা দিয়ে ব্যাংক একাউন্ট করার সূযোগ দিলেও এনজিও ঋণের কিস্তি শোধ করতে গিয়ে আত্মহত্যা করতে হয়। কালো টাকার মালিকরা ছাড় পেলেও কৃষকরা ছাড় পায় না।

দলীয় প্রতীক নিয়ে স্থানীয় সরকার নির্বাচন হতে যাচ্ছে মন্তব্য করে মেনন বলেন, পাকিস্তান ও ব্রিটেনে এ ব্যবস্থা চালু ছিল। ‘ আইয়ুব সরকার দলীয় প্রতীক নিয়ে নির্বাচনের ধারা বন্ধ করে দিয়ে মৌলিক গনতন্ত্র চালু করেছিল । মালিকরা লোকসান দেখিয়ে মিল কারখানা বন্ধ করে দিচ্ছে। অথচ তারা লীজ দিয়ে মুনাফা লুটছে। শ্রমিকদের বঞ্চিত করছে। শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানিয়ে তিনি বলেন পাটকল ও সুতাকল বন্ধ করা যাবে না । যারা কারখানা বন্ধ করতে যায় তাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।

গ্রামীণ শ্রমজীবী মানুষদের ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার প্রদান করা হয় নি। বিদেশি বন্ধুরা গার্মেন্টস শ্রমিকদের জন্য চোখের জল ফেলেন, কিন্তু তাদের যে উৎপত্তিস্থল সেই গ্রামের গরিব শ্রমজীবীদের জন্য তাদের কোনো মায়া লাগে না।

সরকারের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, সামাজিক সুরক্ষার ব্যবস্থা করেছেন, এটা ঠিক বতমান সরকারের আমলে সামাজিক সুরক্ষায় সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ হয়েছে। কিন্তু লুটপাট বন্ধ করতে হবে।

খেত মজুরদের মজুরি বৃদ্ধির দাবি জানিয়ে অন্যান্য বক্তারা বলেন, দেশের ৬৭ শতাংশ মানুষের প্রতি অবহেলা দেখিয়ে জাতীয় উন্নয়ন সম্ভব নয়। খেত মজুর ইউনিয়নের এই প্রথম কেন্দ্রিয় সম্মেলনে দেশের ২৩ টি জেলার প্রতিনিধিরা অংশ নেন ।



(আরকে/এসসি/নবেম্বর১২,২০১৫)