ঈশ্বরদী (পাবনা) প্রতিনিধি : বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে চলাচলকারী মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনে ঈশ্বরদী জংশন স্টেশন থেকে যাত্রী উঠা-নামার ব্যবস্থা গ্রহনের দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ হচ্ছে না।

আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে উত্তরাঞ্চল ও দক্ষিণাঞ্চলের একাংশের মানুষ মৈত্রী ট্রেনে ভারত ভ্রমণের সুবিধা হতে বঞ্চিত হচ্ছে। অথচ কম সংখ্যক যাত্রী নিয়ে মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেন চলাচল করায় রেলওয়ে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয় হতে বঞ্চিত হচ্ছে।

এই ট্রেনে যাত্রী সংখ্যা আশানুরুপ হওয়ার সম্ভাবনাকে সামনে রেখে ২০০৮ সালের এপ্রিলের পরে ঈশ্বরদী স্টেশন থেকে যাত্রী উঠা-নামার প্রাথমিক পর্যায়ের প্রক্রিয়া শুরু করা হয়। পরে দু’দেশের রেলওয়ের বিভাগীয় রেলওয়ে ম্যনেজার (ডিআরএম) পর্যায়ের একাধিক বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয়। এসব বৈঠকে ইমিগ্রেশনসহ নানা সুযোগ-সুবিধার বিষয় আলোচনায় স্থান পায়। কিন্তু এরপরও এই স্টেশন থেকে যাত্রী উঠা নামার ব্যবস্থা গ্রহনের চুড়ান্ত কোনো পরিবেশ আজো সৃষ্টি হয়নি।

বর্তমান সরকারের আমলে রেলপথ নির্মাণ, রেললাইন সংস্কার, নতুন ইঞ্জিন ও নতুন নতুন কোচের সংযোজনসহ রেলওয়ের বিভিন্ন সরঞ্জাম ভারত সরকারের কাছে থেকে ক্রয় করেছে। সার্কভুক্ত দেশের ট্রানজিটের আলোকে ২০০৮ সালের ৩রা এপ্রিল দু’দেশের মধ্যে চালু করা হয় মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেন চলাচল। ট্রেনটিতে ৩৬টি এসি, ৮০ টি সিন্ধা (এসি চেয়ার), ২’শ ৮০ টি শোভন চেয়ারসহ সর্বমোট ৩’শ ২৬ আসনের ট্রেন নিয়ে ঢাকা-ঈশ্বরদী-বেনাপোল ও কলকাতার মধ্যে চলাচল শুরু করে।

বর্তমান ব্যবস্থায় শুধু রাজধানী ঢাকা হতে এই ট্রেনে উঠা ও নামার ব্যবস্থা রয়েছে। এতে উত্তরাঞ্চলের ঈশ্বরদী, পাবনা, নাটোর, সিরাজগঞ্জ, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ উত্তরাঞ্চলের মানুষের কোনো লাভ হয়নি। পাশাপাশি দক্ষিণাঞ্চলের ভেড়ামারা, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর এলাকার মানুষেরও এই ট্রেনে ভারত ভ্রমণের সুবিধা রয়েছে।

রেলের দায়িত্বশীল একাধিক সূত্রে জানা যায়, ঈশ্বরদী স্টেশন থেকে মৈত্রী ট্রেনে যাত্রী উঠা নামার ব্যবস্থা করা হলে প্রতিদিন ৩’শ ২৬টিরও অনেক বেশি যাত্রী ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে চলাচল করার সম্ভাবনা রয়েছে। ট্রেনটিতে শুধু মাত্র ঢাকা থেকে যাত্রী উঠা নামার ব্যবস্থা থাকায় একদিকে যেমন উত্তরাঞ্চলের মানুষ বঞ্চিত হচ্ছে, অপরদিকে রেল কর্তৃপক্ষও লাখ লাখ টাকার রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

উত্তরাঞ্চলের শত শত যাত্রীদের এই ট্রেনে যাতায়াতের সুযোগ সৃষ্টির দাবিতে গত ২০১৪ সালের ১৭ জুলাই ঈশ্বরদীর নাগরিক মঞ্চের পক্ষ হতে রেলমন্ত্রনালয় বরাবর স্বারকলিপিও প্রদান করা হয়। ঢাকা হতে ঈশ্বরদী হয়ে কলকাতা চলাচলরত মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনটি ঈশ্বরদীতে পানি ও তেল নেওয়ার জন্য যাত্র বিরতি থাকলেও যাত্রী উঠা-নামার কোন সুযোগ নেই। ফলে এ অঞ্চলের যাত্রীরা বাড়তি টাকা খরচ করে বিভিন্ন রুটে বাস বা অন্য কোন মাধ্যমে কোলকাতায় যাতায়াত করছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের মাধ্যমে ঈশ্বরদী থেকে যাত্রী উঠা-নামার সুযোগ সৃষ্টি করলে রেলের আয় বৃদ্ধির পাশাপাশি ভারত গমনা গমন কারী যাত্রীরা ভোগান্তি হতে রেহাই পাবে।

ঈশ্বরদী স্টেশন থেকে মৈত্রী ট্রেনে যাত্রী উঠা নামার ব্যবস্থা চালুকরণের বিষয়ে পশ্চিমাঞ্চল রেলের পাকশী বিভাগীয় ব্যবস্থাপক আফজাল হোসেন জানান, রেল কর্তৃপক্ষের আন্তরিকতার অভাব নেই। শুধু মাত্র কাস্টমস্ ও ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ এখন পর্যন্ত কোন পদক্ষেপ গ্রহন না করায় রেল কর্তৃপক্ষ যাত্রী উঠা নামার ব্যবস্থা করতে পারছে না।

(এসকেকে/এএস/নভেম্বর ২৩, ২০১৫)