বাগেরহাট প্রতিনিধি : সুন্দরবনের শ্যালা নদীতে ফার্নেস তেলবাহী ট্যাঙ্কার ডুবির এক বছর পেরিয়ে গেলেও বন্ধ হয়নি বনের ভেতর দিয়ে নৌ যান চলাচল। একের পর এক নৌ দুর্ঘটনায় সুন্দরবনের জীববৈচিত্র হুমকিতে পড়ার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

মংলা-ঘষিয়াখালী চ্যানেলে খনন কাজ এখন শেষ করতে না পারায় বনের ভেতর দিয়ে এখনো চলাচল করছে পন্যবাহী ভারী নৌযান। তেলে ট্যাঙ্কারসহ একাধিক নৌ দুর্ঘটনার এক বছর পর সোমবার রাত থেকে বনের ভেতর দিয়ে নৌ চলাচল বন্ধের উদ্যোগ নিয়েছে বন বিভাগ। গত বছর ৯ ডিসেম্বর শ্যালা নদীতে ওটি সাইদার্ন স্টার-৭ নামে ট্যাঙ্কার ডুবির ঘটনায় দেশ-বিদেশে পরিবেশবিদরা সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে নৌ যান চলাচল বন্ধের দাবি জানিয়েছিলেন।


কিন্তু এর পরও বনের ভেতর দিয়ে জাহাজ চলাচল বন্ধ না হওয়ায় একের পর এক ঘটছে দুর্ঘটনা। চলতি বছরের ৫ মে সুন্দরবন পূর্ব বনবিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের মরা ভোলা নদীর চরে তলা ফেটে ডুবে যায় সারবাহী জাহাজ এমভি জাবালে নূর। এর পর ২৭ অক্টোবর চাঁদপাই রেঞ্চের পশুর নদীর জয়মনি সংলগ্ন বিউটি মার্কেট এলাকায় ডুবে যায় কয়লাবাহী একটি কার্গো জাহাজ। ঘটনার পর প্রায় দেড় মাস পার হলে চললেও এখনো উদ্ধার হয়নি এমভি জিয়ার রাজ নামের কার্গো জাহাজটি। সর্বশেষ গত পহেলা ডিসেম্বর সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের মরা ভোলা নদীর চরে আটকা পড়ে সিমেন্ট তৈরির কাঁচামাল ৭৪০ মেট্রিকটন ফ্লাইঅ্যাশবাহী এমভি শোভন-১ নামের একটি কার্গো।

সেভ দ্য সুন্দরবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম বলেন, সুন্দরবন সুরক্ষার পাশাপাশি মংলা সমুদ্র বন্দর সচল রাখতে মংলা-ঘষিয়াখালী চ্যানেল খননের বিকল্প নেই। এক বছরেও চ্যানেলের খনন কাজ শেষ না হওয়ায় ঝুকি নিয়ে বনের ভেতর দিয়ে নৌযান চলাচল করছে। ফলে আবারো বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে। তাই যে কোন মূল্যে বনের ভেতর নৌযান চলাচল বন্ধ ও বিকল্প নৌপথটি চালুর দাবি জানান তিনি।

মঙ্গলবার বিকালে বিআইডাব্লিউটিএর উপ-পরিচলক (ড্রেজিং) এ এইচ এম ফরহাদ-উজ্জামান বলেন, মংলা-ঘষিয়াখালী চ্যানেল খননের প্রায় ৯৫ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। কিন্তু খননকৃত স্থান গুলোতে পূণরায় পলি জমে ভরাট হচ্ছে। তাই তারা অব্যাহত ভাবে ড্রেজিং চালু রেখেছেন। বর্তমানে ১০-১২ ফিট ড্রাফটের নৌযান চলাচল করছে।

সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. সাইদুল ইসলাম বলেন, এখন থেকে রাতে বনের ভেতর দিয়ে সকল প্রকার নৌযান চলাচল বন্ধের নির্দেশ রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এই বিষয়ে নির্দশনা সুন্দরবন পর্ব বিভাগের চাঁদপাই ও শরণখোলা রেঞ্জ কর্মকর্তাদের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলা হয়েছে।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ হারুন চৌধুরী বলেন, সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে নৌযান চলাচলে বনজ সম্পদ ও জীববৈচিত্র সংরক্ষণে বাঁধা সৃষ্টি করে। নৌ দূর্ঘটনার পর শুধু আমরাই নয় দেশি বিদেশি পর্যবেক্ষকরা বনের ভেতর দিয়ে জাহাজ চলাচল বন্ধের দাবি জানিয়ে ছিলো। জাতীয় সার্থে সুন্দরবন রক্ষার সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।

(এসএকে/এইচআর/ডিসেম্বর ০৮, ২০১৫)