কলাপাড়া (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি : দুই হাত নেই জন্ম থেকে। তারপরও সেই বেলাল আকন পা দিয়ে লিখে জেডিসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছে। পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণার পর বেলালের সাফল্যে এখন উচ্ছসিত তার পরিবারসহ মাদ্রাসার শিক্ষক ও তার সহপাঠীরা। পটুয়াখালীর কলাপাড়ার নীলগঞ্জ ইউনিয়নের উমেদপুর দাখিল মাদ্রাসা থেকে বেলাল জেডিসি পরীক্ষায় অংশ নেয়।

বেলালের পিতা খলিলুর রহমান আকন জানান, এই ছেলে তাদের গর্বিত করেছে। প্রতিবন্ধকতার কারনে যারা তাকে ঘরে রেখে যত্ন করতে বলেছে, তারাই এখন বেলালের সাফল্যে আনন্দিত হয়ে মিষ্টি খাওয়াচ্ছে। দূরের গ্রাম থেকে মানুষ বেলালকে দেখতে আসছে। সন্তানের সাফল্যে এর চেয়ে একজন বাবার কাছে আর কি খুশির খবর হতে পারে। কিন্তু ছেলের সাফল্যে মুখে হাসি ফুটে উঠলেও তার উচ্চ শিক্ষা নিয়ে চিন্তিত তিনি।

তিনি বলেন, এ্যাহনতো বাজানে বড় ক্লাসে ওডছে। অর এই ল্যাহাপড়ার খরচ মুই জোগামু ক্যামনে। আর মুইওতো বুড়া হইছি। কয়দিন আর কান্দে কইর‌্যা অরে মাদ্রাসায় লইয়া যামু। একটা ঠ্যালা চেয়ার (হুইলচেয়ার) কেনতে পারলে ভালো হইতো। কিন্তু হেইয়ার তো অনেক দাম হুনছি,কিনমু ক্যামনে।

জন্ম থেকেই দুই হাত নেই। বেলালের বয়স যখন চার তখন পায়ের আঙ্গুলের ফাঁকে চক গুঁজে কাঠের পিড়িতে অ আ ক খ লেখা শেখানের চেষ্টা করেন তার মা হোসেনেয়ারা বেগম। প্রতিবন্ধকতা থাকলেও পা দিয়েই দ্রুত আদর্শলিপি শিখে ফেলায় তাকে স্কুলে ভর্তি করানোর উদ্যেগ নেয়া হয়। মায়ের ইচ্ছা ও কষ্টের ফল হিসেবে বেলাল জেডিসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছে এ অভিমত মাদ্রাসার শিক্ষক ও এলাকাবাসীর।

বেলালের মা হোসেনেয়ারা বেগম জানান, বেলাল মোর কুদরতি পোলা। খোদার রহমত আছে দেইখ্যা মোর বাজান এ্যাতো ভালো পাস করছে। সবাই অরে ভালো পায়। অরে সব ল্যাহাপড়া শেখানোর ইচ্ছা। কিন্তু ভয় হয়,অরে কিছু না কইর‌্যা যাইতে পারলে ও ক্যামনে চলবে।

উমেদপুর ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসার সুপার মাওলানা হাবিবুর রহমান জানান, বেলাল এই মাদ্রাসার সুনাম বৃদ্ধি করেছে। আমাদের গর্বিত করেছে। বেলালের কারনে দেশ-বিদেশের মানুষ এই মাদ্রাসার নাম জানে। টিভি-পত্রিকায় অনেক নিউজ হইছে বেলালকে নিয়ে। তারাও খুব যত্ন নিয়ে বেলালকে উচ্চ শিক্ষার সিড়ি বেয়ে উঠতে সহায়তা করছেন। তবে আর্থিক সংকটে বেলালের পরিবার আর কত দূর তাকে পড়াতে পারবে তার উপর নির্ভর করছে বেলালের ভবিষত।

(এমকেআর/এএস/জানুয়ারি ০২, ২০১৬)