কলাপাড়া (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি : এই মাছ লাগবো মাছ, কেজি ১২০ টাহা। অল্প কয়ডা মাছ আছে, সন্ধার আগেই চইল্লা যামু। তাজা মাছ। লাগলে তাড়াতাড়ি আহেন।

পটুয়াখালীর কলাপাড়ার কুয়াকাটা সৈকতের চৌরাস্তার এক কোনে বসে এভাবেই ক্রেতাদের ডাকছে এই কিশোর। বয়স ১০ কি ১২ হবে। কিন্তু পাকা হিসেবী। কারণ বয়সে ছোট হলেও ৪/৫ বছর আগেই এই কিশোর মাছ ধরা পেশায়। অ আ ক খ কিংবা ইংরেজী এবিসিডি বলতে না পারলেও এক কেজি মাছের দাম ১২০ টাক হলে দুইশ গ্রাম মাছের দাম কতো তাই কয়েক সেকেন্ডেই বলে দিলো ২৪ টাহা। অনেক চেষ্টা করেও ওর নাম জানতে পারিনি। একবার বলেছিলো শামিম। কিন্তু একটু পরই বললো এইডা মোর আসল নাম না। এই নাম লুকানোর কারন কি ? তাও রহস্যময়।

তবে পাশে দাড়ানো ষাটোর্ধে আনোয়ার হোসেন জানালেন, হোনেন না শিশু শ্রম মানা। হ্যাগো কাজে ন্যাওয়া মানা। হ্যাগো দিয়া যে কাজ করাইবে হ্যার শাস্তি হইবে। হেইয়ার লাইগ্যা এই পোলাডায় যেহানে কাজ করে হ্যার মালিক হামনেগো (সাংবাদিক),পুলিশ ও এনজিওভাইগো ধারে অরা এ্যাহন নাম কইতে হয়তো মানা করছে।

এই শামিম এর মতো পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটায় শতশত শিশু শ্রম পেশায় রয়েছে। পারিবারিক অস্বচ্ছলতা ও অভিভাবকদের অসচেতনতার কারনে এই শিশুরা স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে প্রতিদিন ১০০-১৫০ টাকা উপার্জনের আসায় গভীর সমুদ্রে মাছ ধরা ট্রলারে, মাছের আড়তে, আবাসিক হোটেল ও রেষ্টুরেন্টে কাজে যোগ দিচ্ছে।

কুয়াকাটা, আলীপুর, মহীপুর, গঙ্গামতি,ঢোশ ও কলাপাড়ায় অন্তত পাঁচ শতাধিক শিশু-কিশোর এই শ্রম পেশায় নিয়োজিত রয়েছে। সরকারের শিশু শ্রম বন্ধে কঠোর নির্দেশনা থাকলেও উপকূলীয় এলাকায় এই নির্দেশ পালন করছেন সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর ও আইন শৃঙ্খলাবাহিনী।

কলাপাড়া উপজেলা ভারপ্রাপ্ত প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আরিফুজ্জামান জানান, প্রাথমিক পর্যায়ে ঝড়ে পড়ে রোধ এবং শিশুদের স্কুলমুখী করতে তারা বিভিন্ন কর্মসূচীর মাধ্যমে চেষ্টা করছেন।

(এমকেআর/এএস/জানুয়ারি ০৮, ২০১৬)