স্টাফ রিপোর্টার : বাংলাদেশে নিযুক্ত রাজকীয় নরওয়ে দূতাবাসের রাষ্ট্রদূতমিজ মেরেতো লুনডেমো বলেছেন, বিগত দুই দশকে বাংলাদেশের উন্নয়নের মূল রূপকার নারীরা। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের আভ্যন্তরীণ বাৎসরিক মূল্যায়ন ও পরিকল্পনা সভার উদ্বোধনী সভায় এ কথা বলেন তিনি । তিনি আরো বলেন, তৃণমূলের রাজনীতিতে নারীর ব্যাপক মাত্রার অংশগ্রহণ নারীর ক্ষমতায়ন ও বাংলাদেশের অগ্রগতিতে সহায়ক ভূমিকা রাখছে।

‘সংগঠনকে সংহত করি : একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করি’ স্লোগানে শুক্রবার সকালে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউট মিলনায়তনে দুদিনব্যাপী এই সভা শুরু হয়। এতে অতিথি ছিলেন রাজকীয় নরওয়ে দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত মিজ মেরেতো লুনডেমো, ইউএন উইমেন এর বাংলাদেশ প্রতিনিধি ক্রিস্টিন সুশান হান্টার ও সাংবাদিক মাহফুজ আনাম।

অনুষ্ঠানে নরওয়ে রাষ্ট্রদূত লুনডেমো আরো বলেন, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জন্য নারী-পুরুষের সমতা খুব জরুরি। এসডিজি (সাসটেইনেবল ডেভলপমেন্ট গোলস) ২০৩০ এর লক্ষ্যমাত্রা পূরণে বাংলাদেশ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তারা সে লক্ষ্যে এগিয়ে যাবে যেখানে মাহিলা পরিষদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। এর উন্নয়ন সহযোগী হতে পেরে নরওয়ে গর্বিত।

ইউএন উইমেন এর বাংলাদেশ প্রতিনিধি ক্রিস্টিন সুশান হান্টার বলেন, ‘নারীর ক্ষমতায়নে মহিলা পরিষদকে অন্যান্য পেশা-শ্রেণীর নারীদের মধ্যে সমন্বয় করতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘নারী আন্দোলনের ইতিবাচক বিষয় হয়েছে যে এখন ঘরে বাইরে নারী যা অর্জন করছে সেটি যে তাদের অধিকার তা তারা উপলব্ধি করতে পারছে।’

ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম এক পরিসংখ্যান তুলে ধরে বলেন, কৃষিক্ষেত্রে ২২টি ধাপের মধ্যে ১৭টি ধাপেই নারী মূখ্য ভূমিকা রাখলেও অর্থনৈতিকভাবে তার মূল্যায়ন নেই।’ ঘরে বাইরে নারীর ভূমিকার মূল্যায়ন প্রয়োজন বলে তিনি মন্তব্য করেন।

অধিবেশনে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু। স্বাগত বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘আজকের সভায় জাতীয়, আঞ্চলিক এবং বৈশ্বিক পর্যায়ে নারীর অবস্থান পরিবর্তনে জাতীয় নারী আন্দোলন এবং বৈশ্বিক নারী আন্দোলনের অবদান ও ভূমিকা আমরা পর্যালোচনা করা হবে। পাশাপাশি জাতীয়, বৈশ্বিক পরিবেশ ও পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে নারীর মানবাধিকার, নারী-পুরুষ সমতা প্রতিষ্ঠা ও নারীর ক্ষমতায়নের আন্দোলনকে অগ্রসর করতে সংগঠনের করণীয় নির্ধারণ করা হবে। রাষ্ট্র এবং নাগরিক সমাজের ভূমিকা চিহ্নিত করা এবং একই সঙ্গে এক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ এবং সীমাবদ্ধতা চিহ্নিত করে তা মোকাবেলার উপায় নির্ধারণ করার বিষয়ে আলোচনা হবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘পাশাপাশি এই সময় আমরা সমাজের মধ্যে একধরনের ক্রমবর্ধমান অস্থিরতার নিষ্ঠুর বহিঃপ্রকাশ আমরা দেখেছি। ধর্ষণ, গণধর্ষণসহ গণপরিবহন এবং গণপরিসরে নারী ও কন্যা শিশুর উপর যৌন হামলা, শিশুদের উপরে নৃশংসতা, ভয়ঙ্কর নিষ্ঠুর শিশু নির্যাতনের ঘটনা এবং তার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় নারী আন্দোলন উদ্বিগ্ন। তাই আমাদের অর্জনসমূহকে স্থায়িত্ব দিতে হলে, উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে হলে বৃহত্তর পরিসরে, জাতীয় পর্যায়ে শুধু পরিবর্তন নয় রূপান্তর ঘটাতে হবে।’

সভাপতির বক্তব্য দিয়ে উদ্বোধনী অধিবেশনের সমাপ্তি ঘটান কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আয়শা খানম। সভাপতির বক্তব্যে তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাসম্পন্ন অসাম্প্রদায়িক নারী-পুরুষ বৈষম্যহীন সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনের লক্ষ্যে আমাদের সংগ্রাম সময়ের সাথে সাথে বিভিন্ন নতুন কর্মসূচি নিয়ে এগিয়ে চলছে। আগামী পাঁচ বছরের কর্ম-পরিকল্পনা ইতোমধ্যে প্রণয়ন করা হয়েছে যা একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বাংলাদেশের নারীদের সাহস ও সমর্থন যোগাবে। তিনি বলে বর্তমানে প্রায় সকল ক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ ব্যাপক ও শক্তিশালী এমনকি বিজ্ঞান শিক্ষায় গবেষণায় নারীদের অংশগ্রহণ প্রায় অর্ধেক। এর পিছনে রয়েছে দীর্ঘ ও ধারাবাহিক নারীআন্দোলনের ভূমিকা।’

এর আগে অধিবেশনের শুরুতে রোকেয়া সদনের ছাত্রীরা জাতীয় সংগীত পরিবেশন করে। জাতীয় সঙ্গীতের সঙ্গে জাতীয় পতাকা ও সংগঠনের পতাকা উত্তোলিত হয়।

দুইদিনের এই বাৎসরিক মূল্যায়ন ও পরিকল্পনা সভায় ৫টি কমিশনে নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধের বাধা ন্যায়বিচারের অভাব, উন্নয়নের স্থায়িত্বশীলতার পূর্বশর্ত : গণতন্ত্র ও সুশাসন, সিদ্ধান্তগ্রহণ প্রক্রিয়ায় নারীর অংশগ্রহণ : রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন,একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় প্রয়োজন সংগঠনের শক্তি সংহত করণ ও নারী বিষয়ে ৫টি সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে। সভায় প্রদর্শিত হবে কবি সুফিয়া কামালের ওপর প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনী।

দুদিনের সভায় কমিশনভিত্তিক আলোচনার সারসংক্ষেপ তুলে ধরে আগামী এক বছরের কর্মপরিকল্পনা নির্ধারিত হবে। জাতীয় পরিষদ সভায় ৫৯ সাংগঠনিক জেলার ৫০০ নারী প্রতিনিধি অংশ নিয়েছেন।

(ওএস/এএস/জানুয়ারি ২২, ২০১৬)