নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি :নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ডাক্তার সেলিনা হায়াত আইভিকে উদ্দেশ্য করে নারায়ণগঞ্জ-৫(শহর-বন্দর) আসনের সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান বলেছেন, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন যদি মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানে কিছু করতে চায় তাহলে আমি বলবো সিটি করপোরেশনের আয়ের ২ শতাংশ বা ৩ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কল্যান ট্রাস্টে দিবেন। যাতে করে অসহায় মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগীতা করা যায়। যদি উনারা এমন কিছু করেন তাহলে আমি তাদেরকে একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্যালুট জানাবো।

কিন্তু সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের বাড়ির ট্রাক্স মওকুফের সনদ দেওয়া হচ্ছে। আমাদের মাঝে অনেক মুক্তিযোদ্ধা আছেন যারা শহরে ১০ তলা বাড়ি বানিয়ে বসবাস করছেন। আমার মনে হয় না তাদের ট্যাক্স মওকুফ করার কোন প্রয়োজন আছে।

মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আমি ট্যাক্স মওকুফের সনদ নিবো না। তাহলে দেখা যাবে আমার মেয়ের জামাই আগামীকাল ট্যাক্স মওকুফের জন্য আমার সনদ দিয়ে বাড়ি কিনছে। তবে যদি অস্বচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের বাড়ির ট্যাক্স মওকুফ করা হলে তাতে আমার কোন আপত্তি নাই। তবে আপনাদের উচিত মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে আলোচনায় বসার।

শনিবার ২৬ মার্চ বিকালে নারায়ণগঞ্জ ক্লাব কমিউনিটি সেন্টার মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস ২০১৬ উদযাপন উপলক্ষে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে নারায়ণগঞ্জ জেলার শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবার, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও সদর উপজেলার মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। যার সার্বিক সহযোগিতায় ছিলো নারায়ণগঞ্জ জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ইউনিট কমান্ড।

সেলিম ওসমান আরো বলেন, আমার অনেক বড় আফসোস মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হতে পারি নাই। আর আনন্দ সেখান থেকে গাজী হয়ে ফিরে এসেছি। ‘দিন দিন মুক্তিযোদ্ধার সম্মান বাড়ছে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর মুক্তিযোদ্ধারা সম্মান পায়নি। এমনকি ভয়ে পরিচয় দিতো না। বঙ্গবন্ধুর হত্যার পর কোথায় ছিলাম আমি সেলিম ওসমান মুক্তিযোদ্ধা। কেন তখন ঝাঁপিয়ে পরি নাই। আমরা কেন প্রতিশোধ নেই নাই। তবে বর্তমান সরকার আইনের মাধ্যমে সেই অপরাধীদের বিচার করছে। একটার পর একটাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়েছে। এর চেয়ে বড় পাওয়া কি আছে। আমাদের মুক্তিযোদ্ধ শেষ হয়নি। যেদিন অস্ত্র জমা দিয়েছিলাম সেই দিন থেকে যুদ্ধ শুরু হয়। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের যুদ্ধ। মুক্তিযোদ্ধের সময় যারা মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগীতা করেছেন, যারা ইজ্জত হারিয়েছেন তারা সবাই মুক্তিযোদ্ধা।

তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, নারায়ণগঞ্জ দিন দিন শান্তির দিকে যাচ্ছে। এখন আগের ভুল গুলো স্মরণ করছি। আদমজী, রেল স্টেশন, টেক্সটাইল মিলস, ৫নং ঘাট হারিয়েছি। এখন আবার নতুন করে কাজ শরু হয়েছে। বন্দরে শান্তিচর এলাকায় নীট পল্লী হবে। মুক্তিযোদ্ধাদের মুখে হাসি ফুটাতে আমি আমার জীবন চলা পর্যন্ত কাজ করে যাবো। জেলা কমান্ডার মোহাম্মদ আলীর সহযোগীতা নিয়ে আপনারা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের কাজ শুরু করুন টাকার জন্য কোন চিন্তা করবেন না।

সেলিম ওসমান আরো বলেন, দেশের কোথায় কি হবে জানি না তবে ‘আগামীতে নারায়ণগঞ্জে মুক্তিযোদ্ধাদের সমাবেশে হবে। মুক্তিযোদ্ধারা সবাই সেখানে বক্তব্য রাখবেন। স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীদের মুক্তিযুদ্ধে ইতিহাস বলবেন সবাই। কে কোথায় কোন অবস্থায় যুদ্ধ করেছেন তা বর্ণনা দিবেন। যাতে আমরা মুক্তিযোদ্ধা বলতে সন্দেহ না করি। বাংলাদেশের আর কোন জেলায় মুক্তিযোদ্ধাদের এমন পরিবার নেই। তাই একে অপরের সহযোগিতা করবে। মুক্তিযোদ্ধাদের অসহায়ের কথা কাউকে জানতে দেওয়া হবে না। কোন অসহায় মুক্তিযোদ্ধা যেন বিনা চিকিৎসায় না মারা যায় সে জন্য চেষ্টা করবো। এমনকি কোন অসহায় মুক্তিযোদ্ধার মেয়ের বিয়া ঠেকে না থাকে সেজন্যও চেষ্টা করবো। এছাড়াও তিনি বন্দরেও জমি পেলে মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স করার ঘোষনা দেন।

নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক আনিছুর রহমান মিঞার সভাপতিত্বে ডেপুটি কমান্ডার মো. নূরুল হুদার সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন জেলা পুলিশ সুপার ড. খন্দকার মহিদ উদ্দিন, নারায়ণগঞ্জ জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ইউনিটের কমান্ডার মোহাম্মদ আলী, যুদ্ধকালীন কমান্ডার আব্দুল সাত্তার, নারায়ণগঞ্জ ক্লাব লিমিটেডের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ হোসেন, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও মুক্তিযোদ্ধা সংবর্ধনা উপ কমিটির আহবায়ক মো. ছরোয়ার হোসেন, সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সামিউল্যা মিলন, সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার মো. শাহজাহান ভূইয়া জুলহাস, যুদ্ধকালীন কমান্ডার আসিনুর রহমান প্রমুখ।

(বিডি/এস/মার্চ২৮,২০১৬)