শরীয়তপুর প্রতিনিধি :উত্তরাধিকার৭১ নিউজ, দৈনিক যায়যায়দিন ও চ্যানেল টোয়েন্টিফোর  টেলিভিশনের  শরীয়তপুর জেলা প্রতিনিধি  কাজী নজরুল ইসলাম এর বিরুদ্ধে মিথ্যা চাঁদাবাজি মামলা দায়ের করেছে দুদকের একাধিক মামলার এক আসামী । বিচারক মামলাটি আমলে নিয়ে পুলিশকে তদন্তের আদেশ দিয়েছে। মিথ্যা মামলা দায়ের  করার প্রতিবাদে শরীয়তপুরের কর্মরত সাংবাদিকসহ সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ তীব্র  নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে।

মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, শরীয়তপুর সদর উপজেলার দক্ষিণ ভাষানচর গ্রামের মোঃ জাহাঙ্গীর আলম ঢাকায় ব্যবসা করে আসছে। তিনি শরীয়তপুরের আঙ্গারিয়া উত্তর মধ্য পাড়া ৮১ নং মৌজায় ৩একর ৭১ শতাংশ জমি ক্রয় করে। জমি ক্রয় করার পর থেকে সাংবাদিক কাজী নজরুল ইসলাম তার কাছে ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে আসছে। সম্প্রতি তার ক্রয়কৃত সম্পত্তিতে সিমানা প্রাচীর নির্মাণ করার কাজ শুরু করে। ইতোমধ্যে আসামী কাজী নজরুল ইসলামকে ৮ লাখ টাকা চাঁদা দেয়া হয়। গত ২৩ মার্চ সকালে কাজী নজরুলসহ আরো অজ্ঞাতনামা ৫/৬ জন বাকী ১২ লাখ টাকাচাঁদা দাবি করে এবং টাকা না দেয়া পর্যন্ত জমিতে কাজ না করার হুমকি প্রদান করে বলে মামলায় উল্ল্যেখ করা হয়।

সাংবাদিক কাজী নজরুল ইসলাম ও দুদকের মামলার বিবরণে জানা যায়, শরীয়তপুর পৌরসভাধীন উত্তর মধ্যপাড়া মৌজার আঙ্গারিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের নিজস্ব নামীয় ৩ একর ৭১ শতাংশ জমি রয়েছে। আঙ্গারিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি আবদুর রব মুন্সি, তার আপন ভাতিজা একই বিদ্যালয়ের বর্তমান প্রধান শিক্ষক ও পদাধিকার বলে ব্যবস্থাপনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার কামাল সরকারের বা শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের কোন রকম অনুমতি ছাড়াই পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে ব্যবস্থাপনা কমিটি তাদের নিকট আত্মীয় জাহাঙ্গীর আলমের নিকট ৩ একর ৭১ শতাংশ জমি বর্তমান বাজার মূল্যে অনুযায়ী অন্তত ৮ কোটি টাকার জমি মাত্র দেড় কোটি টাকায় বিক্রি সেই টাকাও আত্মসাতের চেষ্টা করে তারা। এ বিষয়ে সর্ব প্রথম কাজী নজরুল ইসলাম উত্তরাধিকার৭১ অনলাইন পত্রিকা, চ্যানেল২৪ টেলিভিশনে ও দৈনিক সমকাল পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ করেন। এরপর অন্যান্য গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর দূর্নীতি দমন কমিশন ফরিদপুর অঞ্চলের উপ-পরিচালক মলয় কুমার সাহা বাদী হয়ে ২০১৪ সালের ৬ জুন ১২ জনকে আসামী করে শরীয়তপুর সদর পালং মডেল থানায় দুইটি মামালা দায়ের করনে। ওই মামলার জাহাঙ্গীর আলম অন্যতম আসামী।

দীর্ঘ দিন মামলার তদন্ত শেষে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দূদকের আঞ্চলিক উপ-সহকারি পরিচালক শামসুল আরেফিন ২০১৫ সালের ২৭ মে আদলতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। পরে আসামীরা দীর্ঘ ৫০ দিন পলাতক থাকার পর আদালতে আত্মসমর্পণ করলে জাহাঙ্গীর আলমসহ সকল আসামীকে কারাগারে প্রেরণ করেন বিচারক। মামলাটি বর্তমানে আদালতে বিচারাধীন অবস্থায় জাহাঙ্গীর আলম ওই জমি দখল করেন। গত ২৪ মার্চ দৈনিক সংবাদ প্রতিদিনের শরীয়তপুর প্রতিনিধি মোঃ বেলাল হোসেন ও আমাদের কন্ঠের প্রতিনিধি সুজন খান সংবাদ সংগ্রহের জন্য গেলে তাদেরকে জাহাঙ্গীর আলম ও তার সন্ত্রাসীরা মারপিট করে। এ বিষয়ে সুজন বাদী হয়ে ওই দিনই পালং মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়রী করে। এরপর জাহাঙ্গীর সরদার একই দিন কাজী নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে পালং মডেল থানায় একটি চাঁদাবাজির মামলা দায়ের করলে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা প্রয়োজনীয় প্রমানাদি দাখিল করতে বললে জাহাঙ্গীর আলম ব্যর্থ হয়। ফলে পারং থানা মামলাটি গ্রহন না করে তদন্তের অপেক্ষায় রাখে। এরপর পুনরায় জাহাঙ্গীর আলম ২৮ মার্চ সোমবার শরীয়তপুর চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে কাজী নজরুলের বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা দাখিল করে। মঙ্গলবার শরীয়তপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট মোর্শেদ আল-মামুন মামলাটি আমলে নিয়ে শরীয়তপুর কোর্ট পুলিশ পরিদর্শককে তদন্ত করে আগামী ১৩ এপ্রিলের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আদেশ প্রদান করেন।

একজন সিনিয়র সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলার দায়ের করায় জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ছাবেদুর রহমান খোকা সিকদার, সাধারণ সম্পাদক অনল কুমার দে, শরীয়তপুর জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের সভাপতি মোঃ আবদুস সাত্তার খান, আরটিভি ও দ্যা রিপোর্ট টুয়েন্টিফোর প্রতিনিধি মোঃ আবুল হোসেন সরদার, দৈনিক যুগান্তর ও এসএ টিভি প্রতিনিধি কেএম রায়হান কবীর, ভেদরগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি দৈনিক জনকণ্ঠ ও একুশে টেলিভিশন প্রতিনিধি আেবুল বাশার, এনটিভি ও দৈনিক কালের কন্ঠ প্রতিনিধি আব্দুল আজিজ শিশির, নড়িয়া প্রেসক্লাবের সভাপতি মফিজুর রহমান রিপন সাধারণ সম্পাদক কবিরুজ্জামান দৈনিক সংগ্রাম প্রতিনিধি কেএম মকবুল হোসেন, চ্যানেল আই ও বাসস প্রতিনিধি এসএম মজিবর রহমান, নয়াদিগন্ত প্রতিনিধি বোরহান উদ্দিন রব্বানী, দৈনিক নিউ এইজ ও এশিয়ান টেলিভিশন প্রতিনিধি কাজি নাছির দৈনিক দেশ টেলিভিশন প্রতিনিধি বিএম ইসরাফিল, দৈনিক ভোরের পাতার ব্যুরো প্রধান জামাল মল্লিক, বৈশাখী টিভি প্রতিনিধি আব্দুল খালেক ঈমন, দৈনিক সংবাদ প্রতিদিন প্রতিনিধি বেলাল হোসাইন আমাদের কন্ঠ পত্রিকার প্রতিনিধি সোহাগ খান সুজন পদ্মা টেলিভিশনের প্রতিনিধি মিজানুর রহমান ভোরের কাগজের নড়িয়া উপজেলা প্রতিনিধি মোঃ ইব্রহিমসহ শরীয়তপুরের বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানায়।

এ ব্যাপারে সাংবাদিক কাজী নজরুল ইসলাম বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সর্বৈব মিথ্যা, বানোয়াট, ভিত্তিহীন এবং উদ্দেশ্য প্রণোদিত। আমাকে সমাজে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য এ মিথ্যা মামলা দিয়েছে। কারণ আমি আঙ্গারিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের একজন প্রাক্তন ছাত্র হিসাবে ওই বিদ্যালয়ের ১২ বিঘা জমি বিদ্যালয়ের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক অবৈধভাবে বিক্রি করার বিষয়ে একাধিকবার গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচার এবং প্রকাশ করি। সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পরে দুর্নীতি দমন কমিশন জমি ক্রেতা ও বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে দুটি মামলা দায়ের করে। এতে আসামীরা কারাগারে নিক্ষিপ্ত হয়। আমি বিদ্যালয়ের জমি বিদ্যালয়ের নামে ফেরত নেয়ার জন্য শিক্ষা মন্ত্রনালয় ও প্রশাসনের বিভিন্ন সেক্টরের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করতে থাকি। দুদকের মামলা নিষ্পত্তি না হতে জমি দখলে যাওয়াটা অনৈতিক বলে আমি পুনরায় প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ শুরু করি। তাই জমিক্রেতা দূদকের আসামীগণ আমার উপর ক্ষিপ্ত হয়ে আমার বিরুদ্ধে এ মিথ্যা মামলা দায়ের করেছে। আমি বিশ্বাস করি যথাযথ তদন্তে আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ মিথ্যা প্রতীয়মান হবে।

(কেএনআই/এস/মার্চ৩০,২০১৬)