সাতক্ষীরা প্রতিনিধি : সৈনিকলীগের লেবাসধারী  এক জামায়ত নেতার নেতৃত্বে নামযজ্ঞ চলাকালে সংখ্যালঘু দলিত সম্প্রদায়ের পাঁচ সদস্যকে পিটিয়ে জখম করেছে। শনিবার দুপুর একটার দিকে সাতক্ষীরা পৌরসভার ঝুটিতলা নামক স্থানে এ হামলার ঘটনা ঘটে। আহতদের সাতক্ষীরা সদর হাসপাতাল ও স্থানীয় ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে। হামলার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ দু’জনকে আটক করেছে।

আহতরা হলেন, ঝুঁটিতলা গ্রামের সুকুমার দাস, তার স্ত্রী শেফালী দাস, গোবিন্দ দাস, খোকন দাস ও রাজেন্দ্র নাথ দাস।

আটককৃতরা হলো, ঝুঁটিতলা গ্রামের নূর ইসলাম শেখের ছেলে সৈনিকলীগ নেতা শেখ জহুরুল ইসলাম খোকন ও একই গ্রামের মঞ্জুর মিস্ত্রীর জামাতা জামায়াত কর্মী মুকুল হোসেন।

ঝুঁটিতলা নামযজ্ঞ পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক নকুল কুমার দাস জানান, ঝুঁটিতলা সার্বজনীন দুর্গাপুজা মণ্ডপে শুক্রবার থেকে তিন দিনব্যাপি নামযজ্ঞ অনুষ্ঠান শুরু হয়। দ্বিতীয় দিন শনিবার দুপুর একটার দিকে ধুলিহরের আদি বালক- বালিকা সম্প্রদায় নামগান পরিবেশন করছিল।

এ সময় মাইকে আযান দেওয়ার এক মিনিটের মধ্যে সাউণ্ড বক্স বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরই মধ্যে স্থানীয় সৈনিকলীগ নেতা ও সাবেক জামায়াত কর্মী শেখ জহুরুল হক খোকা, তার ভাই জামায়াত কর্মী আনারুল ইসলাম, তার ছেলে শিবির কর্মী আব্দুর রহমান, বেল্লাল হোসেন, বাবু,খোকার স্ত্রী জামায়াতের মহিলা ক্যাডার সুমি আক্তার, মঞ্জু মিস্ত্রীর জামাতা জামায়াত কর্মী মুকুল হোসেন, তপু, কাইয়ুমসহ ১৪/১৫জন হাতে লোহার রড, বাঁশের লাঠি দিয়ে নামযজ্ঞ অনুষ্ঠানে হামলা চালায়। মাইকে আযান শুরু হওয়ার পর নামযজ্ঞের সাউণ্ড বক্স বন্ধ করতে এক মিনিট দেরী হলো কেন বলতে বলতে তারা ‘মালায়নের বাচ্চা, শুয়োরের বাচ্চা তোরা ভারতে যেয়ে কীর্তণ করবি’ বলে হুমকি দেয়।

একপর্যায়ে তারা যঞ্জ মঞ্চ ভাঙচুরের চেষ্টা চালালে বাধা দেন বিজয় দাসের ছেলে সুকুমার দাস। মৌলবাদি হামলাকারিরা সুকুমার দাসকে পিটিয়ে জখম করে। শেফালী দাস তার স্বামীকে রক্ষ্যায় এগিয়ে গেলে তাকে বিবস্ত্র করে পিটানো হয়। এরপরপরই পেটানো হয় নামযজ্ঞ পরিচালনা কমিটির সভাপতি শুকদেব দাসের ছেলে গোবিন্দ দাস, পূর্ণার্থী খোকন দাস ও রাজেন দাসকে। স্থানীয়রা তাদেরকে উদ্ধার করে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতাল ও স্থানীয় ক্লিণিকে ভর্তি করে। এ সময় নামযজ্ঞ অনুষ্ঠান সাময়িক বন্ধ হয়ে যায়। খবর পেয়ে পুলিশ, সাংবাদিক ও হিন্দু বৌদ্ধ থ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য গোষ্ট বিহারী মণ্ডল ও সাধারণ সম্পাদক স্বপন কুমার শীল ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। পুলিশ অভিযান চালিয়ে হামলাকারি শেখ জহুরুল ইসলাম খোকা ও মুকুল হোসেনকে আটক করে।

নকুল দাস আরো জানান, বুধবার রাত ৯টার দিকে পরপরই একই মণ্ডপে কালীপূজা শেষে পার্শবর্তী পুকুরে প্রতিমা বিসর্জন করেন তারা। এরপর তারা প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ি মন্দিরের চার পাশ প্রদক্ষিণ করছিলেন। এ সময় সাউণ্ড বক্সে পুজার গান বাজছিল। হঠাৎ খোকা, মুকুল, রহমান, তপু, বেল্লাল, বাবুসহ সাত/আট জন সমিজির মিটিং আছে বলে মণ্ডপে যেয়ে সাউণ্ড বক্স বন্ধ করতে বলে। এমনকি তারা শুক্রবার থেকে নামঙজ্ঞ না করার কথা বলে। এমনি ভাবেই তাদের এলাকার সংখ্যালঘু দলিত সম্প্রদায়ের মানুষদের জিম্মি করে ফেলেছে আওয়ামী লীগের লেবাসধারী ওই জামায়াত শিবিরের চক্রটি।

স্থানীয়রা জানান. শেখ জহুরুল হক খোকা স্থানীয়দের মাদক ব্যবসা করতে উৎসাহিত করে তাদের কাছ থেকে পুলিশের নাম করে চাঁদা আদায় করছেন। ক্যারাম বোর্ড খেলাচ্ছেন জুয়ার মাধ্যমে। এ নিয়ে প্রতিকার করতে গেলে হুমকির সম্মুখীন হন তারা।

সাতক্ষীরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এমদাদুল হক শেখ নামযজ্ঞ অনুষ্ঠানে হামলার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, দু’জনকে আটক করা হয়েছে। এক ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর নামযজ্ঞ অনুষ্ঠান আবারো শুরু হয়েছে।

(আরকে/এএস/এপ্রিল ০৯, ২০১৬)