উত্তরাধিকার ৭১ নিউজ ডেস্ক : রাতে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশ সরকারের যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভার নাম ঘোষণা করা হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রাষ্ট্রপ্রধানও মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক হিসেবে অভিষিক্ত হন। উপ-রাষ্ট্রপ্রধান সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ মুক্তিযুদ্ধের পরিচালনা ও সমম্বয়সাধন করবেন। খন্দকার মুশতাক আহমেদ পররাষ্ট্র মন্ত্রির দায়িত্ব পালন করবেন। মন্ত্রিসভার অপর সদস্যরা হলেন ক্যাপ্টেন মনসুর আলী এবং এ.এইচ.এম. কামরুজ্জামান।

পাকবাহিনী ট্যাংক এবং অন্যান্য ভারি অস্ত্রের সাহায্যে মুক্তিযোদ্ধাদের হাবরা ঘাঁটি আক্রমণ করে। পাকবাহিনীর ব্যাপক আক্রমণে মুক্তিযোদ্ধারা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়।

মুক্তিযোদ্ধাদের চারটি কোম্পানি ও একটি সাপোর্ট পাটুন সম্মিলিতভাবে লারমণিরহাট বিমানবন্দর এলাকাতে অবস্থানরত পাকবাহিনীর ওপর বড় রকমের আক্রমণ চালায়। মুক্তিযোদ্ধাদের ফিল্ড কমান্ডের দায়িত্বে ছিলেন সুবেদার আরব আলী। কয়েক ঘন্টার সংঘর্ষে বেশ কিছু পাকসেনা নিহত হলেও শেষ পর্যন্ত পাকসেনাদের ব্যাপক আক্রমণর মুখে মুক্তিযোদ্ধারা তাঁদের ঘাঁটিতে ফিরে আসে।

ইস্ট বেঙ্গল ব্যাটালিয়নের পুরো বাহিনী কালুরঘাট থেকে রাঙ্গামাটি চলে আসে এবং সেখানে প্রতিরক্ষা ব্যুহ গড়ে তোলে। মহালছড়িতে ব্যাটালিয়নের হেড কোয়ার্টার স্থাপিত হয়।

ভোরবেলা পাকবাহিনী আর্টিলারি সাপোর্টে যশোরের ঝিকরগাছায় মুক্তিযোদ্ধাদের প্র্র্রতিরক্ষা ব্যুহে ব্যাপক হামলা চালায়। প্রচন্ড যুদ্ধে ইপিআর বাহিনীর দুজন ও বিএসএফ বাহিনীর একজন নিহত হয়। ইপিআর বাহিনী পুনরায় বেনাপোলের কাগজপুকুর নামক স্থানে প্রতিরক্ষা ব্যুহ রচনা করে।

পাক সৈন্যদের একটি দল হাজীগঞ্জের ওপর দিয়ে চাঁদপুর-কুমিল্লা মহাসড়ক ধরে এগিয়ে আসে এবং সেখানে ক্যাম্প স্থাপন করে।

সংসদ সদস্য ডা.জিকরুল হক, রাজনীতিবিদ ও সমাজকর্মী তুলশীরাম আগরওয়ালা, ডা.শামসুল হক, ডা. বদিউজ্জমান, ডা. ইয়াকুব আলী, যমুনা প্রসাদ, কেডিয়া, রামেশ্বর লাল আগরওয়ালাসহ গ্রেফতারকৃত সৈয়দপুরের প্রায ১৫০ জন স্থানীয় নেতৃবৃন্দকে ১৯ দিন নির্মম অত্যাচার চালিয়ে অবশেষে রংপুর সেনানিবাসের পশ্চিম পার্শ্বের উপ-শহরে নিয়ে গুলি করে হত্যা করে।

পার্বতীপুরে মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থানের ওপর পাকসেনারা পুনরায় গোলাবর্ষণ করে। পাকসেনাদের মর্টার থেকে গোলাবর্ষণের মুখে মুক্তিযোদ্ধারা পিছু হটে। এ যুদ্ধে একজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন।

নাটোরে মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থানের উপর পাকসেনারা ব্যাপক শেলিং-এর মাধ্যমে আক্রমণ চালায়। এ আক্রমণে মুক্তিযোদ্ধারা পিছু হটে বানেশ্বর (রাজশাহী) গিয়ে ডিফেন্স নেয়।

পাকবাহিনী তিস্তা দখলের লক্ষ্যে তিস্তা পুলে অবস্তানরত মুক্তিবাহিনীর প্র্রতিরক্ষা ব্যুহে ভারি অস্ত্রের সাহায্যে তিনদিক থেকে আক্রমণ চালায়।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ২৯ জন বিশিষ্ট নাগরিক ‘আমেরিকান ফ্রেন্ডস অব পাকিস্তান’ সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার কাছে প্রেরিত এক আবেদনে অবিলম্বে পূর্ব বাংলার সমস্যা সমাধানের জন্য আইনগত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আহবান জানান। তারা বলেন, কোনো সরকারেরই অস্ত্র ও বল প্রয়োগের মাধ্যমে জনসাধারণের ইচ্ছের বিরুদ্ধে তাদের ওপর সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়ার অধিকার নেই।

ঢাকার সামরিক কর্তৃপক্ষ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ ছাড়া সরকারি বিভাগ, স্ব-শাসিত, আধা-স্বশাসিত সংস্থাতাসমূহের সকল কর্মচারীকে সর্বশেষে ২১ এপ্রিলের মধ্যে কাজে যোগদানের নির্দেশ দেয়। নির্দেশে আরো বলা হয়, এরপর অনুপস্থিত কর্মচারীদের চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হবে।

বেতার ভাষণে সবুর খান একটুও দয়া না দেখিয়ে মুক্তিযোদ্ধা ও সহযোগিতাকারদের খতম করার আহবান জানায়। এমনকি সন্দেহজনক যেকোনো লোকের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে বলে।

মুসলিম লীগ সভাপতি শামসুল হুদার নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল গণহত্যার নায়ক টিক্কা খানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এবং সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দেয়।

ঢাকায় নিযুক্ত একজন বিদেশী কূটনীতিকের বরাত দিয়ে ‘টাইম’ ম্যাগাজিনের প্রতিবেদনে বলা হয়, কোন সন্দেহ নেই যে পূর্ব পাকিস্তানে বিপুল ধ্বংসলীলা চালানো হয়েছে। এটি আক্ষরিক অর্থেই রক্তস্নান। চেঙ্গিস খানের সঙ্গে এর কোনো পার্থক্য ছিল না। সেনাদল এখন বিদ্রোহীদের দমন কাজে ব্যস্ত। ট্যাঙ্ক চড়ে বেড়াচ্ছে ঢাকার কুকে। ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে বহু বাড়িঘর।

তথ্যসূত্র: মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর
(ওএস/অ/এপ্রিল ১২, ২০১৬)