স্টাফ রিপোর্টার : একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জের দুই সহোদরসহ চারজনকে মৃত্যুদণ্ড ও একজনকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর দেওয়া রায়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপক্ষ। একইসঙ্গে মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার ২৩তম এ রায়টিকে তারা উৎসর্গ করেছেন শহীদ জননী জাহানারা ইমামকে।  

মঙ্গলবার সকালে এ মামলার রায় ঘোষণা করেন চেয়ারম্যান বিচারপতি মোহাম্মদ আনোয়ার উল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল। বিচারিক প্যানেলের অন্য দুই সদস্য হচ্ছেন বিচারপতি শাহিনুর ইসলাম ও বিচারপতি মো. সোহরাওয়ার্দী।

রায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হচ্ছেন- দুই সহোদর অ্যাডভোকেট শামসুদ্দিন আহমেদ ও সেনাবাহিনীর বাধ্যতামূলক অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন মো. নাসিরউদ্দিন আহমেদ এবং রাজাকার কমান্ডার গাজী আব্দুল মান্নান ও হাফিজ উদ্দিন। আমৃত্যু কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছে আজহারুল ইসলামকে।

প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ রায়ের পরে জানান, একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ কোনো ‘গৃহযুদ্ধ’ নয়, এটা ছিলো আন্তঃরাষ্ট্রীয় যুদ্ধ- রায়ে ট্রাইব্যুনাল এ পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন।

তিনি জানান, অনেকেই একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধকে ‘গৃহযুদ্ধ’ বলে প্রচার করেন। তবে আজকের পর এ ধরনের বক্তব্য রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল হবে।

শহীদ জননী জাহানারা ইমামের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে এ রায়কে তার প্রতি উৎসর্গ করেন তুরিন আফরোজ।

প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ সীমনও বলেন, ‘আমরা মনে করি, এই পাঁচ রাজাকারের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালের আজকের রায় শহীদ জননীর আত্মাকে শান্তি দেবে। এ রায় আমাদের বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে আসার এক অনন্য উদাহরণ হয়ে থাকবে’।

একই মামলার ওই পাঁচ আসামির মধ্যে গ্রেফতার হয়েছেন শামসুদ্দিন আহমেদ। বাকি চারজন পলাতক। শামসুদ্দিনকে কারাগার থেকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। রায় ঘোষণা সেজে সাজা পরোয়ানা দিয়ে তাকে ফের কারাগারে পাঠানো হয়েছে। রায়ের পর্যবেক্ষণে পলাতক চারজনকে গ্রেফতারের পদক্ষেপ নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।

আসামি পাঁচজনের বিরুদ্ধে হত্যা, গণহত্যা, আটক, নির্যাতনের লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগের সাতটি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়। এতে ছিল ১৪ জনকে হত্যা ও গণহত্যা, একজনকে আটক ও নির্যাতন এবং ২০-২৫টি বাড়িতে লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগ।

অভিযোগগুলোর মধ্যে হত্যা-গণহত্যার তিনটি (১, ৩ ও ৪ নম্বর) ছিল পাঁচজনেরই বিরুদ্ধে। বাকি চারটির মধ্যে হত্যা, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগের দু’টিতে (৬ ও ৭ নম্বর) গাজী আব্দুল মান্নান এবং হত্যার একটিতে (২ নম্বর) নাসিরউদ্দিন আহমেদ ও হত্যার একটিতে (৫ নম্বর) শামসুদ্দিন আহমেদ এককভাবে অভিযুক্ত হন। এসব অভিযোগে ভিন্ন ভিন্নভাবে আসামিদের সাজা দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। শুধু ৩ নম্বর অভিযোগ থেকে খালাস পেয়েছেন মান্নান।

(ওএস/এএস/মে ০৩, ২০১৬)