আঞ্চলিক প্রতিনিধি, বরিশাল : বরিশালসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলের জনপদের বাজার এখন পুরোপুরি দখল করে নিয়েছে অবৈধ বাংলা তেল আমদানিকারক চক্রটি। ফলে একদিকে যেমন সরকারি ও বৈধ কোম্পানীর তেল নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ পড়েছেন বিপাকে, তেমনি ভেজাল পেট্রোলের কারণে ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়েছে এ জনপদের কয়েক লাখ যানবাহনের ইঞ্জিন।

এ নিয়ে বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর বাংলাদেশ সরকারের তথ্য অধিদফতর থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হলেও তা আর আলোর মুখ দেখেনি।

অভিযোগ রয়েছে, প্রসাশনের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তার সহযোগীতায় ট্যাঙ্কলরি মালিক এবং শ্রমিক ইউনিয়নের এক প্রভাবশালী নেতার যোগসাজসে ঢাকা থেকে চোরাই পথে বাংলা পেট্রোল (ভেজাল) প্রতিদিনই আসছে বরিশালসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলের জনপদে। সূত্র মতে, কম দামের ভেজাল তেল এখন বাজারে হরহামেশাই বিক্রি হচ্ছে সরকারি বাজার দরে। আর এ প্রতারনার স্বীকার হচ্ছেন, এ অঞ্চলের লাখ লাখ যানবাহনের মালিক ও ক্রেতারা। না বুঝে পেট্রোল পাম্প ও খুচরা বিক্রেতাদের কাছ থেকে ভেজাল তেল ক্রয় করে যানবাহনে ব্যবহারের ফলে অল্পদিনেই ইঞ্জিন ধংস হয়ে যাচ্ছে। বরিশালের বেশ কয়েকজন রাঘব বোয়াল এ ব্যবসার কমিশন নিয়ে দক্ষিণাঞ্চলের পেট্রোল পাম্পে ভেজাল তেল বিক্রি করছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, অবৈধ এ বাংলা তেল সিন্ডিকের হোতা বরিশাল ট্যাঙ্কলরি মালিক সমিতির সভাপতি সেন্টু খান, সাধারণ সম্পাদক গোলাম মস্তফা লিটন, শ্রমিক ইউনিয়নের প্রভাবশালী সহসভাপতি মোঃ জালাল হাওলাদার দীর্ঘদিন থেকে বাংলা পেট্রোল ঢাকা থেকে বরিশালে আমদানি করে দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন পেট্রোল পাম্প ও খুচড়া বিক্রেতাদের কাছে বিক্রি করে আসছেন। বিভিন্ন সময় এই তেল বরিশালের জনতা ও প্রশাসনের হাতে আটক হলেও প্রভাবশালী এ চক্রের যোগসাজসে অর্থবাণিজ্যের মাধ্যমে ছাড়া পেয়ে যাচ্ছে অনায়াসে। অনেক সময় ভূয়া চালান তৈরী করে অবৈধ বাংলা তেলকে বৈধ বানিয়ে প্রশাসনকে অর্থ ধরিয়ে দিয়ে ছাড়িয়ে নেয়া হচ্ছে কোন প্রকার কাগজপত্রবিহীন এসব ভেজাল তেল। অতিসম্প্রতি ভেজাল তেলসহ ভোলায় আটক হওয়া শ্রমিক ইউনিয়নের সহসভাপতি মোঃ জালাল হাওলাদারের এক শ্রমিককে কারাদন্ড দেয়া হয়।

সূত্রে আরও জানা গেছে, গত কয়েক মাস পূর্বে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের মাদারীপুরের মস্তফাপুর নামক এলাকায় প্রশাসনের অভিযানে ট্যাঙ্কলরি ভর্তি ভেজাল তেল আটক করা হয়। লরির চালক জানায়, তেলটি আশোকাঠী ফিলিং ষ্টেশনের। তাৎক্ষনিক প্রশাসনের পক্ষ থেকে খোঁজখবর নেয়ার পর জানা যায়, আশোকাঠী ফিলিং ষ্টেশন কর্তৃপক্ষ ওই তেলের সম্পর্কে কিছুই জানেন না। পরবর্তীতে জিজ্ঞাসাবাদে আটককৃত লরির চালক জানায়, তেলের মালিক বরিশাল জেলা ট্যাঙ্কলরি শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক শেখ কামালের। প্রশাসনের কর্মকর্তারা কামালের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি (শেখ কামাল) প্রশাসনের কর্মকর্তাদের অনুরোধ করে বলেন, তেলের মালিক যেই হোক না কেন তার বিরুদ্ধে যথাযথ আইনী প্রক্রিয়া গ্রহণ করা হোক।

একপর্যায়ে আটককৃত লরির চালককে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে ভেজাল বাংলা তেল আমদানিকারক জালাল হাওলাদারের নাম। ভেজাল তেল ধরা পরলে মালিক হন শেখ কামাল, আর ধরা না পরলে অন্যকেউ হচ্ছেন তেলের প্রকৃত মালিক এনিয়ে অনুসন্ধানে জানা গেছে, ট্যাঙ্কলরি শ্রমিক ইউনিয়নের জেলা শাখার দু’বারের নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক শেখ কামাল অতিসম্প্রতি ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন। দ্রুত এ পদন্নতীতে ঈশ্বার্নীত হয়ে অবৈধ বাংলা তেল চক্রের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা বিভিন্নস্থানে কামালের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছেন। ওই চক্রটি একই পন্থায় গত ৮মার্চ রাতে নগরীর চৌমাথা এলাকায় জনতার হাতে আটক হওয়া অবৈধ বাংলা তেল বহনকারী ১ হাজার ৬’শ লিটার বোঝাই (যার আনুমানিক মূল্য প্রায় ১১ লাখ টাকা) ট্যাঙ্কলড়িটির মালিক শেখ কামালের বলে প্রচার করেন।

পরবর্তীতে আটককৃত লরিটি কোতোয়ালী মডেল থানায় নেয়ার পর বেরিয়ে আসে লরির আসল মালিক শেখ কামাল নয়; অন্য কেউ। যদিও নানা নাটকীয়তার পর সিন্ডিকেটের হোতারা থানা পুলিশকে ৩ লাখ টাকা দিয়ে রফাদফা করে লরিটি ছাড়িয়ে নিয়ে যায়। দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন যানবাহনের মালিক, শ্রমিক, সরকারি ও বৈধ কোম্পানীর কর্মকর্তারা বাংলা তেল আমদানিকারক চক্রের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

(টিবি/এএস/জুন ০৮, ২০১৬)