আন্তর্জাতিক ডেস্ক :প্রথমবারের মতো মানুষের শরীরে জিকা ভাইরাসের টিকা প্রয়োগ শুরু হচ্ছে শিগগির। মার্কিন ওষুধ নির্মাতা কম্পানি ইনোভিও ফার্মাসিউটিক্যালস এই টিকা প্রয়োগের অনুমোদন পেয়েছে। ইনোভিও ও দক্ষিণ কোরিয়ার জিনওয়ান লাইফ সায়েন্স যৌথভাবে এ টিকা উদ্ভাবনে কাজ করেছেন। এর আগে এ দুই কম্পানি যৌথভাবে ইবোলা ও মার্সের টিকাও উদ্ভাবন করেছে যা বিশ্বব্যাপী প্রয়োগ করা হচ্ছে।

জিকা ভাইরাসের জন্য উদ্ভাবিত এই টিকার বৈজ্ঞানিক নাম জিএলএস-৫৭০০। ইনোভিও জানান, তাঁরা ৪০ জন সুস্থ সবল স্বেচ্ছাসেবীর শরীরে প্রথম এ টিকা প্রয়োগ করার পরিকল্পনা নিয়েছেন। আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই পরীক্ষামূলকভাবে এ টিকা প্রয়োগ করা হবে। এর আগে প্রাণীর শরীরে এই টিকা প্রয়োগ করা হয়েছিল এবং ওই সময় টিকা দেওয়া প্রাণীর শরীরে জিকা ভাইরাসের শক্তিশালী অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছিল।

ওই সাফল্যের পরই এটা মানুষের শরীরে প্রয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এটা টিকা তৈরির প্রথম দিকের একটি ধাপ। এই ধাপের মূল লক্ষ্য হলো মানুষের শরীরে এ টিকা সহনীয় কিনা- তা নির্ধারণ করা। ধাপটি সফল হলে পরবর্তী পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য বাড়তি অনুমোদনের প্রয়োজন হবে। ওই পর্যায়ে যাদের শরীরে জিকা ভাইরাসের উপস্থিতি রয়েছে তাদের প্রয়োগ করা হবে এই টিকা। তারও পরের ধাপে বেশি সংখ্যক মানুষের শরীরে জিকা ভাইরাসের টিকা কীভাবে কাজ করে তা দেখা হবে।

জিকা ভাইরাসের টিকা উদ্ভাবন নিয়ে বিভিন্ন গবেষণা দলের সঙ্গে কাজ করছেন আমেরিকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব অ্যালার্জি অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজের পরিচালক ড. অ্যান্থনি ফাউচি। তিনি জানান, আগামী কয়েক মাসে আরো বেশ কয়েকটি কম্পানিই মানব শরীরে প্রথম দফা জিকা ভাইরাসের টিকা প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরু করবে। এতদিন পর্যন্ত জিকা ভাইরাসের কোনো টিকা পাওয়া যায়নি।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, ২০টির মতো কম্পানি এ প্রাণঘাতী ভাইরাসের টিকা উদ্ভাবনের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। এবারে শুরু হতে যাচ্ছে এই ভাইরাসের টিকার মানব শরীরে প্রয়োগ। কিন্তু পূর্ণাঙ্গ টিকা পাওয়ার জন্য আরো অনেক দিন অপেক্ষা করতে হবে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। কারণ পূর্ণাঙ্গ টিকা পাওয়ার আগে বেশি সংখ্যক মানুষের শরীরে এ টিকা প্রয়োগের জন্য আরো দেড় বছর অপেক্ষা করতে হবে।

সংস্থাটির একজন মিডিয়া কর্মকর্তা নাইকা আলেক্সান্ডার জানান, পূর্ণাঙ্গ ও লাইসেন্সকৃত জিকা ভাইরাসের টিকার জন্য কয়েক বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতে পারে। এর আগে মূলত দক্ষিণ আমেরিকা অঞ্চলে জিকা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব প্রথম লক্ষ করা যায়।

এ বছরের শুরু থেকে প্রায় ৫০টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে এ ভাইরাস। এর মধ্যে ব্রাজিলে জিকা সংক্রমণের ফলে শিশুদের মাথা অস্বাভাবিকভাবে ছোট হওয়া বা মাইক্রোসেফালি রোগও দেখা যায়। এ ভাইরাসের উপস্থিতি নিশ্চিত করাও সহজ নয়। কেননা জিকা ভাইরাসের আক্রমণের বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই আক্রান্তের শরীরে কোনো লক্ষণ নাও দেখা দিতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকে জিকা ভাইরাসের কারণে জরুরি সতর্ক অবস্থাও জারি করা হয়েছিল।




(ওএস/এস/জুন২৩,২০১৬)