নিউজ ডেস্ক : সাংবাদিক প্রবীর সিকদারের বিরুদ্ধে আনীত ‘বানোয়াট’ (ট্রাম্পড আপ) অভিযোগ অবিলম্বে, শর্তহীনভাবে প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। ২৭শে জুন সংগঠনটির ওয়েবসাইটে বলা হয়, ফেসবুকে একটি পোস্ট দেয়ার জন্য ওই সাংবাদিকের এক দশকেরও বেশি জেল হতে পারে।

‘বাংলাদেশ: ড্রপ চার্জেজ এগেইনস্ট জার্নালিস্ট’ শীর্ষক ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে স্বাধীন মিডিয়া এখন চাপের মুখে। সাংবাদিকদের গুরুত্বপূর্ণ কাজকে দমন করার পরিবর্তে কর্তৃপক্ষের উচিত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া, যারা মিডিয়াকর্মীদের ভয়ভীতি প্রদর্শন করে ও হয়রান করে।

সাম্প্রতিক সময়ে কর্তৃপক্ষ স্বাধীন মিডিয়ার বিরুদ্ধে দমনপীড়ন বৃদ্ধি করেছে। বেশ কিছু হাই প্রোফাইল সাংবাদিক ও সম্পাদককে শান্তিপূর্ণভাবে তাদের স্বাধীন মত প্রকাশের কারণে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এতে আরও বলা হয়, সাংবাদিক প্রবীর সিকদার দৈনিক বাংলা ৭১ নামের একটি পত্রিকার সম্পাদক। তাকে ২০১৫ সালের আগস্টে গ্রেফতার করা হয়েছিল। তারপর থেকে তিনি জামিনে রয়েছেন।

আগামীকাল ২৯শে জুন তার আবার আদালতে হাজিরা দেয়ার কথা রয়েছে। এ সময় তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হতে পারে।

এ বিষয়ে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক পরিচালক চাম্পা প্যাটেল বলেছেন, প্রবীর সিকদারের বিরুদ্ধে যেকোন অভিযোগ অবশ্যই অবিলম্বে ও শর্তহীনভাবে প্রত্যাহার করতে হবে। সামাজিক মিডিয়ায় একটি সাধারণ পোস্ট দেয়অর জন্য যখন একজন সুপরিচিত সাংবাদিক এক দশকেরও বেশি জেলের ঝুঁকিতে থাকেন তখন সেটাকে রাষ্ট্রীয় সম্পর্কের একটি দুঃখজনক পরিস্থিতি বলতে হয়।

ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, স্থানীয় একটি সম্পত্তির বিরোধ নিয়ে তিনি লেখালেখি করেছিলেন। তারপর তাকে হত্যার হুমকি দেয়া হয়েছে। এর ফলে ২০১৫ সাল থেকে তিনি ফরিদপুরে নিজ বাড়িছাড়া। ২০১৫ সালের ১০ই আগস্ট তিনি ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন। তাতে বলেন যে, তাকে যদি হত্যা করা হয়, তার কোন ক্ষতি করা হয় তাহলে সরকারের একজন মন্ত্রী ও অন্যরা এর জন্য দায়ী থাকবেন।

প্রবীর সিকদার বলেছেন, তাকে হত্যার হুমকি দেয়ায় পুলিশ এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে অস্বীকৃতি জানায়। এ জন্যই তিনি ওই পোস্ট দিয়েছেন।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের স্থানীয় সরকার বিষয়ক মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেনের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার অভিযোগ আনা হয়েছে প্রবীর সিকদারের বিরুদ্ধে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) আইনের ৫৭ অনুচ্ছেদের অধীনে তার বিরুদ্ধে এ অভিযোগ আনা হয়েছে। এতে দোষী সাব্যস্ত হলে তাকে ৭ থেকে ১৪ বছরের জেল দেয়া হতে পারে।

ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, এই মামলাটি সুশীল সমাজের অনেক মানুষ ও বাংলাদেশের সাংবাদিকদের সংগঠনের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। তারা কর্তৃপক্ষের এ উদ্যোগকে দেখছেন, নিরপেক্ষ সাংবাদিকদের টার্গেট করে স্বাধীন মিডিয়া ও সামলোচকদের মুখ বন্ধ করে দেয়া হিসেবে।

২০০১ সালে প্রবীর সিকদার বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদন লেখার ফলে তার ওপর হামলা হয়। এতে তিনি একটি পা হারান। প্রবীর সিকদার দাবি করছেন, পুলিশ তাকে চোখ বেঁধে রেখে তাকে হুমকি দিয়েছে অন্য পাও কেটে দেয়ার। এভাবে ২০১৫ সালের আগস্টে পুলিশ হেফাজতে থাকা অবস্থায় তার কাছ থেকে স্বীকারোক্তি আদায় করার চেষ্টা করেছিল পুলিশ।

অ্যামনেস্টি লিখেছে, তারা অবহিত যে, পুলিশি হেফাজতে থাকা অবস্থায় প্রবীর সিকদারের ওপর যে নির্যাতন ও অশোভন আচরণ করা হয়েছে তার জন্য কোন পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্ত হয় নি।

চম্পা প্যাটেল বলেন, পুলিশের যেসব কর্মকর্তা প্রবীর সিকদারকে হুমকি দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ আছে তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত, পক্ষপাতহীন ও স্বচ্ছ তদন্ত করে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। এতে বলা হয়, যে সাংবাদিক হত্যা হুমকির মধ্যে কয়েক বছর ধরে বাস করছেন তাকে সুরক্ষা দেয়ার পরিবর্তে কর্তৃপক্ষের হয়ে কাজ করার আগ্রহ বেশি দেখায় বাংলাদেশ পুলিশ। এটা হতাশার বিষয়।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ স্বাধীন মিডিয়ার ওপর দমনপীড়ন বৃদ্ধি করেছে। অভিযুক্ত করা হয়েছে হাই প্রোফাইল কয়েকজন সাংবাদিক ও সম্পাদককে। তাদের অপরাধ তারা মুক্ত মত প্রকাশের চর্চা করেছিলেন শান্তিপূর্ণভাবে।

অ্যামেনিস্ট

(ওএস/এএস/জুন ২৮, ২০১৬)