স্পোর্টস ডেস্ক : দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপে একটি গোলের দেখাও পাননি লিওনেল মেসি। ২০০৬ অভিষেক বিশ্বকাপে একটি গোলই মেসির একমাত্র অবলম্বন। ব্রাজিল বিশ্বকাপটা কেমন যাবে বার্সেলোনার এই গোলমেশিনের? সেটা দেখা যাবে বিশ্বকাপেই। তবে পরিসংখ্যানের আলোকে এবার এক বা একাধিক গোলের দেখা পেতে পারেন মেসি। দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপে মাঠে নামার আগে আর্জেন্টিনার জার্সিতে টানা ছয় ম্যাচ গোলহীন ছিলেন মেসি। এবারও খানিকটা সেরকমই হতে যাচ্ছিল।

চলতি বছর আর্জেন্টিনার হয়ে একটি গোলও না করতে পারা মেসি পরশু রাতে তুষ্ট করেছেন সমর্থকদের তনুমন। স্লোভেনিয়ার বিরুদ্ধে প্রস্তুতি ম্যাচে বদলি হিসেবে নেমে একটি গোল করেছেন আর্জেন্টিনার হয়ে। দলও জিতেছে ২-০ গোলে। কদিন আগে ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোবাগোর বিরুদ্ধে আর্জেন্টিনা জিতেছিল ৩-০ গোলে। ওই ম্যাচে মেসি একাধিক গোলের সুযোগ নষ্ট করে হয়েছিলেন সমালোচনার শিকার। তবে স্লোভেনিয়ার বিরুদ্ধে এক গোল করে নিজে হয়েছেন উজ্জীবিত, তেমনি দলকেও এনে দিয়েছেন বাড়তি আত্মবিশ্বাস। সব মিলিয়ে নতুন উদ্যমে বিশ্বকাপ শুরু করতে প্রস্তুত আলেসান্দ্রে সাবেলা শিবির।

বিশ্বকাপ আসন্ন। সে কারণে শেষের প্রস্তুতি ম্যাচগুলোতে একটু বেশিই সতর্ক কোচরা। পরশু শেষ প্রস্তুতি ম্যাচে আর্জেন্টিনার কোচ আলেসান্দ্রে সাবেলা যেমন একাদশে রাখেননি চার তারকা ফুটবলারকে। সাইড বেঞ্চে বসেছিলেন লিওনেল মেসি, সার্জিও অ্যাগুয়েরো, অ্যাঙ্গেল ডি মারিয়া ও গঞ্জালো হিগুয়েন। হতে পারে রিজার্ভ বেঞ্চকে শেষবারের মতো ঝালাই করে নিতে চেয়েছিলেন সাবেলা। সেই পরীক্ষায় সফল তার শিষ্যরা। ম্যাচের প্রথম গোলটি আসে ১২ মিনিটেই। ডি-বক্সের বাইরে থেকে জোরালো শটে গোলটি করেন আলভারেজ। শুরুর দিকে বাকি দুই ফরোয়ার্ড ম্যাক্সি রদ্রিগেজ ও লাভেজ্জিও খেলেছেন দুর্দান্ত। ৩৫ মিনিটে দ্বিতীয় গোল পেতে পারত আর্জেন্টিনা। তবে রদ্রিগেজের জোরালো শট দক্ষতার সঙ্গে রুখে দেন স্লোভেনিয়ার গোলরক্ষক। প্রথমার্ধের শেষ মুহূর্তে আরও একটি গোলের সুযোগ নষ্ট করেছেন রদ্রিগেজ। তবে দ্বিতীয়ার্ধের সাবেলা দেখান চমক। নামিয়ে দেন আক্রমণভাগের প্রধান তিন সেনানী মেসি, অ্যাগুয়েরো ও ডি মারিয়াকে। ফলে ম্যাচের বাকি সময়টা এদের ঠেকাতেই ব্যস্ত ছিল স্লোভেনিয়ার রক্ষণভাগের খেলোয়াড়রা। দ্বিতীয় গোলটি এসেছে এই ‘ত্রয়ী’র সফলতায়। ডি মারিয়ার ক্রস থেকে অ্যাগুয়েরোর হেড। সেখান থেকে বল পেয়ে জালে জড়াতে ভুল করেননি মেসি। শেষ পর্যন্ত ২-০ গোলের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে ম্যারাডোনার উত্তরসূরিরা। বিশ্বকাপের আগে এটিই শেষ প্রস্তুতি ম্যাচ ছিল আর্জেন্টিনার। জয় দিয়ে প্রস্তুতির মিশন শেষ করতে পেরে উজ্জীবিত মেসি শিবির।

আগামী ১২ জুন ব্রাজিল-ক্রোয়েশিয়ার ম্যাচ দিয়ে পর্দা উঠবে বিশ্বকাপ ফুটবলের। তবে আর্জেন্টিনার মিশন শুরু হবে ১৫ জুন। নিজেদের প্রথম ম্যাচে আর্জেন্টিনা মোকাবিলা করবে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপে নাম লেখানো বসনিয়া অ্যান্ড হার্জেগোভিনা। ‘এফ’ গ্রুপে আর্জেন্টিনার অপর দুই প্রতিপক্ষ আফ্রিকান সুপার ঈগলস নাইজেরিয়া ও এশিয়ার দেশ ইরান। বিশ্বকাপের আগে নিজেরা পুরোদমে প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন লিওনেল মেসি। ম্যাচ শেষে তিনি বলেছেন, ‘সত্য জানার মুহূর্ত চলে এসেছে। প্রীতিম্যাচগুলো শেষ হয়ে গেছে। আর আমরা ব্রাজিল যাচ্ছি অনেক আশা-আকাঙ্ক্ষা নিয়ে। আলেসান্দ্রো যেমনটা চেয়েছেন, আমরা ঠিক সেভাবেই কাজ করেছি। অনেক একতাবদ্ধ আর শক্তিশালী দল হয়ে উঠতে পেরেছি। আমরা আগের যেকোনো মুহূর্তের চেয়ে অনেক একতাবদ্ধ। কারণ আমাদের সবারই একটা স্বপ্ন আছে।’

অন্যদিকে দল নিয়ে বেশ টেনশনেই রয়েছেন আর্জেন্টাইন কোচ সাবেলা। তিনি বলেছেন, ‘আমি কখনই শান্ত হতে পারছি না। যতই দিন ঘনাচ্ছে আমি যেন বিচলতি হয়ে পড়ছি। আবার দুশ্চিন্তাও বাড়ছে। সবকিছু ছকে বাঁধা হবে তো?’

(ওএস/এইচআর/জুন ০৯, ২০১৪)