নওগাঁ প্রতিনিধি : নওগাঁর পত্নীতলা উপজেলার দিবর ইউনিয়নের প্রত্যন্ত ঘোলাদীঘি গ্রামের মন্দির কমিটির সাধারণ সম্পাদক নীলকান্ত বর্মন (৪৫) ও তার পুত্র সনাতন বর্মন (২৭) কে হত্যার প্রচেষ্টা চালানো হয়। সোমবার সকাল সাড়ে ৭টায় তাদের গ্রামের সরকারিপ্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনের রাস্তায় একই গ্রামের রিফিউজি পরিবারের আবু বক্কর, সাত্তার, আফছার গং তাদের ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা চালায়।

এলাকাবাসী ও স্বজনরা টের পেয়ে তাদের উদ্ধার করে নিকটস্থ সাপাহার হাসপাতালে গুরুতর আহত পিতা-পুত্রকে ভর্তি করে দেয়।

ওই দিন বিকেল সাড়ে ৩টায় আহত নীলকান্ত বর্মনের ছোট ভাই কার্তিক চন্দ্র বর্মন আবু বক্করসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে পত্নীতলা থানায় (মামলা নং-১৪, তারিখ-১৮-০৭-১৬। ধারা- ১৪৩/৩৪১/৩২৩/৩২৫/ ৩২৬/৩০৭/৩৭৯/৫০৬/১০৯/১১৪ দঃবিঃ) মোতাবেক একটি মামলা দায়ের করেন। মামলার একদিন পর বুধবার আসামীরা আদালতে হাজির হয়ে জামিনের আবেদন করলে আদালত তাদের জামিন মঞ্জুর করে আগামী ২৪-১০-১৬ তারিখে মামলার পরবর্তী তারিখ ধার্য্য করেন।

এদিকে অজামিনযোগ্য অপরাধে মামলার মাত্র একদিনের মধ্যে জামিন পেয়ে আসামীরা এলাকার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মাঝে যেন মূর্তিমান আতংকে অবতীর্ণ হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করায় মামলার বাদী ওই সংখ্যালঘুর কাছে এক লাখ টাকা চাঁদা দাবি করা হয়েছে। তা না দিলে তাদের পিটিয়ে ভারতে পাঠানোর হুমকি দেয়া হয়েছে বলে মামলার বাদীসহ স্থানীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নেতৃস্থানীয়রা জানিয়েছেন।

ওই রিফিউজী পরিবারের সদস্য বক্কর, সাত্তার, আফছার গং জামিনে এসে এবার মামলার বাদীসহ পার্শ্ববর্তী নির্মইল গ্রামের বাসিন্দা পত্নীতলা উপজেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক রমেন চন্দ্র বর্মন (অভিলাষ) কেও হত্যার হুমকি দিয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে।

এদিকে ঘোলাদীঘি ও নির্মইল গ্রামের সংখ্যালঘু হিন্দুরা জানান, দেশ স্বাধীনের পর থেকে উক্ত আবু বক্কর গং জাল দলিলের মাধ্যমে শ্মশান, মন্দির, পুকুর, দেবোত্তর সম্পদসহ হিন্দুদের প্রায় ১২০ একর জমি জবরদখলের চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়।

স্থানীয়রা জানায়, ওই রিফিউজি বক্কর পরিবারের লোকজন এদেশে আসার পর তারা ৭১’এ মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের বিপক্ষে কাজ করে। স্বাধীনতার পর তারা জামায়াত-বিএনপির রাজনীতি শুরু করে। লক্ষ্য তাদের হিন্দুদের জমি জবরদখল করার। কিন্তু হিন্দুদের জমি জবরদখল করার সুযোগ পায়না তারা। এবার প্রথম দফার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের মাসখানেক আগে তারা ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগে যোগ দেয়। এর পর তারা আওয়ামীলীগের কতিপয় স্থানীয় নেতার আশীর্ব্বাদপুষ্ট হয়ে হিন্দুদের দীর্ঘদিনের রেকর্ডভুক্ত শ্মশান, মন্দির, পুকুরসহ ওইসব দেবোত্তর সম্পদ জবরদখলে মরিয়া হয়ে উঠেছে বলে অভিযোগে বলা হয়।

আর সে সব ঘটনার জের ধরেই মন্দিরের সম্পাদক নীলকান্ত বর্মন ও তার ছেলে সনাতন বর্মনকে হত্যার চেষ্টা চালানো হয়েছে।


(বিএম/এস/জুলাই ২০,২০১৬)